বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৭

বন্ধুত্বের খতিয়ানে বেসুরো সেই তিস্তা বৃত্তান্ত

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭,

বিদ্যুৎ, রাস্তা, রেল-বন্দর, এলপিজি টার্মিনাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চটের বস্তা— দানের তালিকা খর্ব নয়। কিন্তু তাতেও মন ভার গ্রহীতার। জল চাই তার জল— তিস্তার জল।

গত ২৩-২৪ জানুয়ারি দিল্লিতে ভারত-বাংলাদেশ বহুমাত্রিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার মূল নির্যাস এটাই। বিদেশ মন্ত্রক, পেট্রলিয়াম মন্ত্রক এবং কলকাতার ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ (আইএসসিএস)-এর উদ্যোগে এই আলোচনা সভায় ছিলেন দু’দেশের চার মন্ত্রী। আলোচনায় অংশ নেন দু’দেশের বেশ কয়েক জন কূটনীতিকও। কিন্তু গত সাত বছরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সর্বোচ্চ অবস্থানে থেকেও কোথাও যেন তাল কেটে যাচ্ছিল। এর কারণ অবশ্যই তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নে অপারগতা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক জানান, একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে ১,৬৮৬ জন ভারতীয় সেনা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা আর মানপত্র দিচ্ছে শেখ হাসিনা সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত না-থাকলে আজ আমরা দেশই পেতাম না।’’ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফর পর পর দু’বার বাতিল হওয়াটা মোটেই শুভ সংকেত নয়। কেন স্থগিত হচ্ছে সফর? মোজাম্মেল সাহেবের কথায়, ‘‘বড় কারণ অবশ্যই তিস্তার পানি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা। ভারতকে এ বার একটু  তৎপর হতে হবে।’’

ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক চাঙ্গা রাখতে ভারতের তৎপরতার কথা আলোচনার শুরুতেই জানিয়েছিলেন বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্মসচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন। তিনি বলেন, ‘‘২০১৫ সালে ৭.৫৩ লক্ষ বাংলাদেশিকে ভিসা দেওয়া হয়েছিল, ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৯.৬ লক্ষ। এতেই স্পষ্ট আদানপ্রদান আজ কতটা নিবিড়।’’ কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির কথায়,‘‘সংস্কৃতি তো এক। জামদানি দু’দেশেই তৈরি হয়। জামদানির সূত্রেও তো বাঁধা পড়তে পারে দু’দেশ।’’ সেই সূত্রেই এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে এলপিজি টার্মিনাল, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গ্যাস পাইপলাইন তৈরির বিষয়ও। পেট্রলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন ভারত-রাশিয়া গ্যাস পাইপলাইন তৈরি হলে তা মায়ানমার-বাংলাদেশের মধ্যে দিয়েও আনা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গ্যাস তো পাবেই, ট্রানজিট দিয়ে বহু রাজস্ব আদায় করতে পারবে বাংলাদেশ।

কিন্তু গ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে তিস্তার জলের দাবি থেকেও সরছেন না বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের হাই-কমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলির আক্ষেপ, ‘‘আমরা তো প্রস্তুত। কিন্তু ভারতকে তো নিজেদের অভ্যন্তরীন সমস্যা মেটাতে হবে। সেই সমস্যা যাতে দ্রুত মেটে তার দিকে আমরা তাকিয়ে আছি।’’

তিস্তার প্রসঙ্গই অবশ্য তোলেননি বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। তাঁর সাফ কথা, ‘‘আজ না-হোক কাল ঢাকা-দিল্লির বন্ধুত্বের সব সমস্যা মিটে যাবে। সব সমস্যা একেবারে মিটে গেলে তো মন্ত্রী-কূটনীতিকদের চাকরিই থাকবে না!’’

মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৭

কোরআনে হাত রেখে শপথ নিলে পশ্চিমা মিডিয়া মুসলিম মৌলবাদী আখ্যা দিত!

সৈয়দ আবুল মকসুদ

যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উত্তাল বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনের পর্দায় দেখলাম। খুবই সুন্দর অনুষ্ঠান। খরচ হয়েছে ২০ কোটি ডলার। এর আগের কয়েকজন প্রেসিডেন্টের যেমন বড় বুশ, বিল ক্লিনটন, ছোট বুশ ও বারাক ওবামার ক্ষমতা গ্রহণের অনুষ্ঠানও দেখেছি, তবে তত মনোযোগ দিয়ে নয়, যতটা মনোযোগ দিয়ে দেখেছি মিস্টার ট্রাম্পের অভিষেক।
খ্রিষ্টধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হওয়ায় আরও ভালো লাগল। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত দেশ বলেই নয়, খ্রিষ্টানপ্রধান দেশ দুনিয়ায় আরও আছে, কিন্তু আমেরিকার জনগণের গড ও যিশুখ্রিষ্টে অবিচল আস্থা। তাদের ভাষায়: ‘ইন গড উই ট্রাস্ট’। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো সাংঘাতিক সেক্যুলার-কাম-রাষ্ট্রধর্মের দেশ তাদের নয়। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের মতো ধর্ম তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই অভিষেকের আগে ট্রাম্প সাহেব ও তাঁর রানি মেলানিয়া গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করেছেন। (অভিষেকের পরে অবশ্য তিনটি বল ড্যান্স কনসার্টের আয়োজন ছিল, তাতে দম্পতিরা নেচেছেন এবং মি. ট্রাম্প রূপসী মেলানিয়াকে দীর্ঘস্থায়ী চুম্বনে তাঁর প্রগাঢ় ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।) হোয়াইট হাউসে গিয়ে তাঁরা বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির সঙ্গে চা বা কফি খেয়েছেন। ইসায়ী ধর্মের বিভিন্ন শাখা ক্যাথলিক, লুথারিয়ান, প্রটেস্ট্যান্ট গির্জার ধর্মযাজকেরা ও র্যাবাই (ইহুদি-ধর্মযাজক) এলেন এবং তাঁরা তাঁদের বাণী পাঠ করলেন। তাঁদের বাণীতে বারবার গড (ঈশ্বর) এবং যিশুখ্রিষ্টের নাম উচ্চারিত হলো। তারপর নতুন প্রেসিডেন্টকে প্রধান বিচারপতি শপথবাক্য পাঠ করান। তাঁর এক হাত উত্তোলিত, আরেক হাত পবিত্র বাইবেলের ওপর রাখা। একটি ট্রেতে সে বাইবেল ধরে ছিলেন মিসেস মেলানিয়া।


কোনো মুসলমানপ্রধান দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান।  দেশের জাতীয় মসজিদে গিয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করলেন। তারপর গেলেন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে।  কোরআনের ওপর হাত রেখে সর্বশক্তিমান আল্লাহর (গড) নামে শপথ নিলেন। ওই দেশ ও ওই রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রীকে নির্ঘাৎ মুসলিম মৌলবাদী বলে আখ্যায়িত করত পশ্চিমের বস্তুনিষ্ঠ মিডিয়া।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সরকারি পদ গ্রহণের জন্য কোনো ধর্মপালনের বিধান নেই, তবু অধিকাংশ প্রেসিডেন্ট গির্জায় যান। তা তিনি সেখানে গিয়ে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করুন বা না করুন। বারাক হোসেন ওবামাও গিয়েছেন।
কল্পনা করুন, পৃথিবীর মানুষের যে মনস্তত্ত্ব, তাতে কোনো উন্নয়নশীল দেশের, বিশেষ করে কোনো মুসলমানপ্রধান দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে শপথ নেবেন। তার আগে তিনি দেশের জাতীয় মসজিদে গিয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করলেন। তারপর গেলেন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে। সুন্নি, শিয়া বা অন্য কোনো মাজহাবের ইমামরা এলেন এবং তাঁরা তাঁদের আশীর্বাণী পাঠ করলেন। সব শেষে কোরআনের ওপর হাত রেখে সর্বশক্তিমান আল্লাহর (গড) নামে শপথ নিলেন। ওই দেশ ও ওই রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রীকে নির্ঘাৎ মুসলিম মৌলবাদী বলে আখ্যায়িত করত পশ্চিমের বস্তুনিষ্ঠ মিডিয়া।
গণতন্ত্র ইউরোপের কোনো কোনো দেশে ছিল রাজতন্ত্রের সঙ্গে মিলেমিশে, কিন্তু গত প্রায় আড়াই শ বছর যাবৎ যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। সেই গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সে দেশের প্রতিষ্ঠাতারা স্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন। এবং তাঁদের সঙ্গে মার্কিন দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের ভূমিকাও বিরাট। জর্জ ওয়াশিংটন, টমাস জেফারসন, জেমস ম্যাডিসন, আব্রাহাম লিংকন, থিওডোর রুজভেল্ট, ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট, ডি ডি আইজেনহাওয়ার, জন এফ কেনেডি প্রমুখ আমেরিকার উন্নতিতে ও গণতন্ত্র
প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন। তাঁদের সঙ্গে চার্লস পিয়ার্স, উইলিয়াম জেমস, যোশিয়া রয়েস, জর্জ সান্তায়ানা, জন ডিউই, আলফ্রেড হোয়াইটহেড প্রমুখ দার্শনিক ও ভাবুকেরা জাতির একটি দার্শনিক ভিত্তি তৈরি করে দিয়ে গেছেন। আমেরিকাকে পৃথিবীতে এক নম্বর বানাতে কোনো ধনকুবেরের চেয়ে তাঁদের এবং বিজ্ঞানী-শিক্ষাবিদদের ভূমিকাই প্রধান। পুঁজিবাদী সমাজে ধনকুবেরদের একটা ভূমিকা তো থাকেই।

বাইবেলে হাত রেখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন বারাক হোসেইন ওবামা
শুধু আমেরিকার নয়, যেকোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের অভিষেক অনুষ্ঠান অবশ্যই আনন্দের বিষয়। কিন্তু ট্রাম্প যখন দায়িত্ব বুঝে নেন তখন তাঁর দেশে এবং পৃথিবীর অনেক দেশে তাঁর বিরুদ্ধে উত্তাল বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্তত ৬০টি দেশে নারীসমাজ রাজপথে নেমেছে বিচিত্র প্ল্যাকার্ড বহন করে এবং স্লোগান দিতে দিতে। যাঁর আশীর্বাদ আবশ্যক, সেই মাননীয় রোমান ক্যাথলিক পোপ পর্যন্ত আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন: দুনিয়া কি একুশ শতকের হিটলারকে দেখতে যাচ্ছে?
নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই মি. ট্রাম্পের কথাবার্তা ও অঙ্গভঙ্গি জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বিশ্বব্যাপী বহু মানুষের অন্তরের গভীরতম স্থানে আঘাত করেছে। শতাধিক বছর ধরে পৃথিবীর শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নারী ও পুরুষ নারীর অধিকার ও মর্যাদার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন শত শত বছরের পুরুষতান্ত্রিকতার প্রাধান্য কমাতে। সেই নারী জাতিকেও তিনি অসম্মান করেছেন। মার্টিন লুথার কিং জুলিয়ারের ছিল একটা ড্রিম—স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মাধ্যমে আংশিক পূরণ হয়েছে। মি. ট্রাম্প বাকি অংশ নস্যাৎ করে দিলেন। তাঁর ১৫ সদস্যের মন্ত্রিপরিষদে মাত্র একজন কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিন বংশোদ্ভূত কারও স্থান হয়নি।
নির্বাচনের আগে মি. ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন ভারত ও হিন্দুদের তিনি ভালোবাসেন। কিন্তু নির্বাচিত হয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তাইওয়ানের সরকারপ্রধানের সঙ্গে। চীনের চেয়ে তাইওয়ান তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার অর্থ চীনের নেতাদের বোঝার ক্ষমতা যথেষ্ট।
হিন্দুপ্রধান ভারত একটি বহু জাতি ও বহু ধর্মাবলম্বীর বাসভূমি। ভারত একটি মহান সভ্যতা। ভারতের ইতিহাস-ঐতিহ্য আমেরিকার ইতিহাস-ঐতিহ্যের চেয়ে হাজার গুণ পুরোনো। সেখানে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং হিন্দুদেরই প্রাধান্য। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে এখনো ভারত একটি ‘ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র’। সেখানে রাষ্ট্রপতি থেকে রাষ্ট্রের যেকোনো পদে অহিন্দুদের নিযুক্তিতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু মি. ট্রাম্প হতে চান শুধু ভারতের হিন্দুদের বন্ধু—ভারতের বৌদ্ধদের নয়, পার্সিদের নয়, আহমদিয়াদের নয়, শিখদের নয়, বাহাইদের নয় এবং শুধু ভারতের কেন, কোনো মুসলমানের তো নয়ই। তাঁর এই উক্তি পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো রাষ্ট্রনায়কের সবচেয়ে সাম্প্রদায়িক উচ্চারণ।
আগামীকাল যদি চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি শুধু বাংলাদেশের মুসলমানদের বড় বন্ধু। চীনের ব্যবসা-বাণিজ্য বাংলাদেশের মুসলমানরাই বেশি পাবেন। রাশিয়ার পুতিন যদি বলেন, আমরা বাংলাদেশের মুসলমানদের বন্ধু, তা হবে বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি অপমান। কারণ, তা বাংলাদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানদের প্রতি চরম অবজ্ঞার শামিল।
ট্রাম্প সাহেব খুবই বুদ্ধিমান। তিনি রাশিয়ার প্রশংসা করে বৌদ্ধপ্রধান চীনকে চাপে রাখতে চান, মুসলমানদের নিন্দা করে হিন্দুপ্রধান ভারতকে প্রীত করতে চান। তিনি তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে ইসলামি জঙ্গিদের নির্মূল করার অঙ্গীকার করেছেন। পৃথিবীর পনেরো আনা মুসলমানও চায় ইসলামি জঙ্গিরা নির্মূল হোক, আইএস ও আল-কায়েদা নির্মূল হোক। কিন্তু তাদের নির্মূল করার ষোলো আনা দায় বিধাতা তাঁকেই দিয়েছেন, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
মুসলমানদের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী মধ্যপ্রাচ্যে কী কারণে টেররিস্ট হয়েছে, তা ট্রাম্প সাহেবের চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। তিনি পৃথিবীর যাবতীয় বিষয় বাদ দিয়ে চাইছেন ইসরায়েলে তাঁর দেশের দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নেবেন। জেরুজালেম মুসলমানদের পবিত্র স্থান। সেখানে কি ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, চীনের দূতাবাস আছে? এই দূতাবাস সরানোর ঘোষণার কী অর্থ, তা তাঁর অবশ্যই জানা আছে।
সারা দুনিয়ার মানুষের কপালে যা ঘটবে, আমাদেরও তা–ই হবে। তাই বেশি ভাবার কিছু নেই। মনে হয়, হালকা থেকে মাঝারি ধরনের জঙ্গিবাদ আমাদের সরকারের জন্য সুবিধাজনক। পশ্চিমা দুনিয়া তা-ই চায়। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যতই বলছেন বাংলাদেশে আইএস বা আল-কায়েদা নেই; সাধারণ মানুষেরও তা-ই ধারণা, কিন্তু আমেরিকা বলতে চাইছে, তারা আকছার আছে। এর মধ্যে কিছুদিন আগে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দুকে তথ্যমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে ৮ হাজার আল-কায়েদা জঙ্গি আছে। ৮ হাজার বা ৮০০ খুব বেশি সংখ্যা, যদি বাংলাদেশে দুই-এক শ আল-কায়েদার জঙ্গি থাকত, তাহলে জনগণ ও সরকার অবশ্যই টের পেত।
বাংলাদেশ তার তৈরি পোশাকসহ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা বা জিএসপি নিয়ে এমনিতেই মুশকিলে আছে। দর-কষাকষির ক্ষমতা আমাদের ব্যবসায়ী নেতা ও আমলাদের পর্যাপ্ত নেই। ট্রাম্প প্রশাসন যে দয়াপরবশ হয়ে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দেবে, সে আশা দুরাশা। অথচ আমাদের রপ্তানি পণ্যের জন্য তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার ওপর যদি আল-কায়েদা বা আইএস নিয়ে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, তাহলে বিপদের আশঙ্কা।
আমেরিকা শুধু ফার্স্ট নয়, যদি ফার্স্টতরও হয়, তাতে আমাদের ঈর্ষার কারণ নেই। কারণ, আমরা তার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারব না। আমাদের রোল নম্বর দুই নয়, তিন অঙ্কের ঘরে। সম্পদে, সামরিক অস্ত্রে, জ্ঞানে যে জাতি বড়, তাকেই মানুষ বড় বলে। ওসবের অগ্রগতিতেই বড় বা এক নম্বর হওয়া যায়।
কোনো জাতির সমৃদ্ধি ও সভ্যতা চিরকাল এক রকম থাকে না। একটি সময় তা চূড়া স্পর্শ করে। তারপর শুরু তার পতনের। পতন শুরু হওয়ার পরও ২০, ৫০ বছর এক রকম থাকে, ভেতরে-ভেতরে ক্ষয় হয়ে গেলেও। তবে শাসকদের কারও না কারও হাতে পতনের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছে। তুরস্কের ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছে। ভারতবর্ষে মোগল সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছে, যার শুরু আওরঙ্গজেব থেকে। একসময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য অস্ত যেত না। উদার ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শাসক ছাড়া কোনো হঠকারী সংকীর্ণচেতা শাসক কোনো জাতিকে উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে না, ধ্বংসের সূচনা করতে পারে মাত্র।
আমাদের প্রাচ্যের, বিশেষ করে ভারতবর্ষের নীতি সবার সঙ্গে ঐক্য ও সম্প্রীতি। আমরা মানুষে মানুষে অবিশ্বাস, ঘৃণা, বিদ্বেষ, ষড়যন্ত্র, ভীতি প্রদর্শন অপছন্দ করি। আমেরিকায় ট্রাম্প সাহেব ছাড়া আরও মানুষ আছেন। তাঁদের শুভবুদ্ধি আছে বলে জানি। যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোও শক্তিশালী। রাজনীতিকদের অনেকের দেশপ্রেম ও কাণ্ডজ্ঞান অসামান্য। মার্কিন কংগ্রেসের অনেক সদস্য তাই ট্রাম্পের অভিষেকে যোগ দেননি। সেখানকার পোশাক ডিজাইনারদের প্রায় কেউই মিসেস ট্রাম্পের পোশাকের নকশা করতে সম্মত হননি। তাই আশা করি কোনো ব্যক্তিবিশেষ পৃথিবীকে অস্থিতিশীল করতে পারবেন না।

সৈয়দ আবুল মকসুদ: লেখক ও গবেষক।

প্রথম আলো’র সৌজন্যে

শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৭

৫ জানুয়ারির ভুল, ভুল থেকে শিক্ষা

একটি নির্বাচনকালীন গ্রহণযোগ্য সরকার গঠন করতে হবে। এসব কাজে সরকারকে বিরোধীদল কর্তৃক সর্বতোভাবে সহায়তা করতে হবে। আমার মতে, এসবই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের শিক্ষা আমাদের জন্য।

আসিফ নজরুল


৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে একতরফা মূল্যায়ন হলে তা দেশের গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য আরও অমঙ্গলজনক হবে। কারণ, এই নির্বাচন সরকারের গণপ্রতিনিধিত্বমূলক চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্নই শুধু জন্ম দেয়নি, দেশের নির্বাচনব্যবস্থা সম্পর্কেও মানুষের মনে প্রবল অবিশ্বাস ও অনাস্থার সৃষ্টি করেছে। এর সঠিক বিশ্লেষণ হলেই কেবল আমরা ভবিষ্যতের করণীয় সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি।

২.
৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে দুটি প্রধান দৃষ্টিকোণ রয়েছে। একটি দৃষ্টিকোণ তুমুল সমালোচনামূলক। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয় যে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ও অপ্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচনের একটি। এই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি, সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে প্রার্থীকে কোনো ভোটই চাইতে হয়নি, সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এতে অংশ নেয়নি, এমনকি যে কয়টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানেও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়নি। বলা হয় যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার মাধ্যমে এবং পরে প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব না মেনে নিয়ে আওয়ামী লীগ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। অনেকে এ-ও মনে করেন যে নির্বাচন-পূর্ববর্তী সময়ের জনমত জরিপ, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর ফলাফল এবং বাংলাদেশের চিরন্তন রাজনৈতিক সংস্কৃতি (ক্ষমতাসীন দলের পরাজয়) অনুসারে ৫ জানুয়ারি একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এতে ফলাফল সম্পূর্ণ অন্য রকম হতে পারত।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের অন্য পক্ষের লোকজনের প্রায় কেউই এই নির্বাচনের গুণগত মান নিয়ে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য করেন না, বলেন না যে এটি একটি ভালো নির্বাচন ছিল। তবে তাঁদের মতে, এই নির্বাচন মন্দ দিকের পুরো দায়দায়িত্ব বিএনপির। তঁাদের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয় যে এই নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ অবাধ করার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে আন্তরিকতাপূর্ণ আলোচনা করেছিল, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, এমনকি নির্বাচনের সময় অতি গুরুত্বপূর্ণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএনপিকে দেওয়ার প্রস্তাবও করেছিলেন। বলা হয় যে বিএনপি সরকারের আন্তরিকতায় সাড়া না দিয়ে সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে এই নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিল বলেই নির্বাচন এমন একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

৩.
এই দুই বয়ানের কোনোটি কি পুরোপুরি অসত্য? আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা মনে করি, একটি বয়ান সত্যি হলে অন্যটি পুরোপুরি মিথ্যা। কিন্তু আমাদের এখন সময় এসেছে উপলব্ধি করার যে উপরিউক্ত দুই বয়ানই সত্যি, অন্তত অনেকাংশে সত্যি। এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়াও ভুল হয়েছিল, এই নির্বাচন একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত করাও ভুল হয়েছিল।
এসব ভুল মোচনের সুযোগ তখন ছিল। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ মোতাবেক সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নিয়ে নির্বাচনটি পিছিয়ে দিয়ে সবার অংশগ্রহণের শেষ একটি চেষ্টা করার সুযোগ ছিল। এমন প্রস্তাব তখন নাগরিক সমাজের একটি বড় অংশের পক্ষ থেকে নির্বাচনের কিছুদিন আগে করাও হয়েছিল।
এটি সম্ভব না হলে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পালন করে অল্প সময়ের মধ্যে আরেকটি নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রধানমন্ত্রী নিজে এমন সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সে রকম কিছু করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি, সে রকম উদ্যোগ নিতে আওয়ামী লীগকে প্রভাবিত করার নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিও বিএনপি করতে পারেনি। বরং ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে জনসভা করার সুযোগ না পাওয়ার পর বিএনপি ও তার সঙ্গীরা অধৈর্য হয়ে যে সহিংস আন্দোলন শুরু করে তা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দায় থেকে আওয়ামী লীগকে অনেকাংশে অবমুক্ত করে দেয়।
৫ জানুয়ারি এবং এর পরের ঘটনাপ্রবাহে তাই সবার ভুল ছিল। কারও বেশি কারও কম। ভুল পরিমাপের চেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে এটি উপলব্ধি করা যে ৫ জানুয়ারিকেন্দ্রিক ভুলের মাশুল দিচ্ছে কোনো না কোনোভাবে সবাই। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ ভোটাধিকারের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে, দেশে নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি আস্থা মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হয়েছে,
জনমতের গুরুত্বের প্রতি সরকারের অবজ্ঞা বৃদ্ধি পেয়েছে, শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে, নাগরিক সমাজ বিভক্ত হয়েছে, গণমাধ্যমের ওপর সরকারের খবরদারি বেড়েছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের প্রতি রুষ্ট মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহু অন্যায্য আবদার মেনে নিতে হয়েছে, সুস্থ রাজনীতির অভাবে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সবচেয়ে যা ভয়াবহ এর মধ্য দিয়ে মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হয়েছে।

৪.
৫ জানুয়ারি থেকে তাহলে কী শিখব আমরা? শুধু দোষারোপ করা? নাকি এগোনোর পথটাও খোঁজা? আমার মতে দ্বিতীয়টি। কারণ, ইতিহাসচর্চা মানে বর্তমান থেকে অতীতের পানে ক্রুদ্ধভাবে চেয়ে দেখা নয়। প্রখ্যাত আমেরিকান ইতিহাসবিদ উইলিয়াম অ্যাপলম্যানের মতে, ইতিহাসচর্চার বরং উদ্দেশ্য হওয়া উচিত অতীতে ফিরে গিয়ে আগের ধারণা ও দৃষ্টিকোণগুলোর সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করা এবং এভাবে বর্তমানের করণীয় সম্পর্কে আরও গভীর ও যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসা।
আমার মতে, এটি করতে হলে আমাদের অন্তত এটি বুঝতে হবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্যে আর যা-ই হোক কোনো গৌরব নেই। এই নির্বাচন কাউকে বিজয়ী করেনি। এমন নির্বাচন আর কখনো না হতে দেওয়ার মধ্যেই আমাদের কল্যাণ নিহিত।
আমাদের কল্যাণ নিহিত সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যে। আমরা সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনেই দেখেছি সুষ্ঠু নির্বাচন মানুষকে কতটা আশাবাদী করে তোলে। নারায়ণগঞ্জে আইভীর জয়ে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে, আবার ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১২টিতে জিতে বিএনপিও জয়ী হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন আবারও প্রমাণ করেছে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা। এই সদিচ্ছা আমরা আগেও স্থানীয় নির্বাচনে সরকারের মধ্যে দেখেছি (যেমন ২০১৩ সালের গাজীপুর নির্বাচন), নির্বাচন কমিশন তাই তখনো নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পেরেছিল। কিন্তু একই কমিশন আবার সরকারের চাপে পড়ে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বহু প্রশ্নবিদ্ধ পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচিত হয়েছিল (যেমন সময় পার হওয়ার পর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন গ্রহণ করা, অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করার পরও তাঁদের প্রার্থিতা বহাল রাখা ইত্যাদি)।
নির্বাচন কমিশনের এই ভূমিকা যতই নজিরবিহীন হোক, তা অস্বাভাবিক ছিল না। কারণ, বাস্তবতা এটিই যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কখনো কোনো জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন দলীয় সরকারগুলো ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারেনি।
হয়তো এই বাস্তবতা থেকেই আওয়ামী লীগ নেত্রী ২০১৩ সালে একটি নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো তখনকার সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট বা পর্যাপ্ত ছিল না, কিন্তু তা অবজ্ঞা করার মতোও ছিল না। আমি মনে করি, বর্তমান বাস্তবতায় এই প্রস্তাব ধরে এগোলেই আমরা ৫ জানুয়ারির মতো একটি ভুলে ভরা অতীত থেকে সামনের দিকে এগোতে পারি।
আমাদের অবশ্যই ভবিষ্যতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচনী আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। কিন্তু এসবের পাশাপাশি আমাদের গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনকালীন সরকারও গঠন করতে হবে। এসব কাজে সরকারকে বিরোধী দল কর্তৃক সর্বতোভাবে সহায়তা করতে হবে। আমার মতে, এসবই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের শিক্ষা আমাদের জন্য।

আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রথম আলো’র সৌজন্যে