হিন্দুত্ববাদ এবং স্বপ্নলব্ধ ভারতের ইতিহাস
আকবরের বিরুদ্ধে রানা প্রতাপই জয়ী এবং পদ্মিনী এক ঐতিহাসিক চরিত্র: আরএসএস। শিক্ষার গোড়াতেই ‘তথ্য’ ও ‘প্রকৃত’ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইতিহাসকে না বুঝলে, এ ধরনের অযুক্তির বিরুদ্ধে লড়াই অসম্ভব৷
অনির্বাণ ভট্টাচার্য
প্রথমেই একটা কথা স্পষ্ট করে নেওয়াটাই ভালো হবে, যে গিয়েছে সে দিন, যখন আগ্রাসী ঘন কালো মেঘের আড়ালে, নিশ্চিত ভাবেই রুপোলি আলোর টুকরো ঝলক অপেক্ষা করছে, এমন বিশ্বাসে ঘর বাঁধত আক্রান্ত বা বিপন্ন মানুষ৷ সে যুগ এখন তামাদি৷ যেমন আক্রান্ত বা বিপন্ন মানুষের তল পাওয়ার আশাও৷ যুগ তো এখন ‘পোস্ট -ট্রুথ’-এর বা ‘অল্টারনেটিভ ফ্যাক্ট’-এর৷ সত্য -মিথ্যার সরাসরি ও স্পষ্ট বিভাজনকেও, যা ইহকালে অবান্তর করে তুলছে৷ কোনও রকম যুক্তি সাজানোর ক্ষেত্রে প্রামাণ্য ‘ফ্যাক্ট’ বা তথ্যকেও নেহাতই অপশনাল করে তুলেছে৷ বা এই যে বললাম, প্রামাণ্য, তা নিয়েও গুচ্ছ প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে৷ বদলে খাড়া করা হচ্ছে, ওই বিকল্প তথ্যের সারি, ‘অল্টারনেটিভ ফ্যাক্ট’৷
রানা প্রতাপ বা শিবাজি, এমনকী লক্ষ্মীবাঈ-ও কস্মিনকালে ‘অখণ্ড’ ‘ভারত’ নামক ‘নেশন ‘-এর জন্যে লড়েননি৷ লড়বেনই বা কী উপায়ে, ‘নেশন’-এর ধারণাটিই তো তখন দানা বাঁধেনি৷ যে কারণে ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহও, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম অধ্যায় নয়৷
অবশ্যই, যে কোনও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এমনই তথ্যকে নেড়েচেড়ে ছেনে -পরীক্ষা করাটাই দস্ত্তর, কিন্ত্ত এ যুগের হোতারা, ব্যাপারটিতে বেশ ভিন রকম এক রং লাগিয়েছেন৷ অর্থাত্ প্রথম প্রশ্নই হচ্ছে এখন, সে ঘন কালো মেঘ কি আদৌ ঘন কালো মেঘ? নাকি তা আদতে ভিনমাত্রার কিছু একটা, যা হয়তো দীর্ঘ দিনের ‘প্রামাণ্য সত্য ‘-র বিকৃতির ফলে বর্তমানে এহেন ঘন কালোর রূপ পেয়েছে ? ফলে সে কালো মেঘ এখন শুধু মাত্র ঘন কালো মেঘ নয়, সাধারণের সমীপে তার চরিত্র -প্রকৃতি নির্ভর করছে, দর্শনের উপর, দৃষ্টিভঙ্গির উপর৷ অর্থাত্, কে কী ভাবে সে ঘন কালো মেঘকে দেখছে, বা বলা অধিক সঙ্গত হবে, কাকে কী ভাবে সে ঘন কালো মেঘ দেখতে ‘শেখানো ‘ (মতান্তরে বাধ্য করা) হচ্ছে, তার উপরই নির্ভর করছে ‘সত্য’৷ যে ‘সত্য’ সন্ধানের এক মাত্র হাতিয়ার এ ক্ষেত্রে ইতিহাস৷ বা সে ইতিহাস ‘নির্মাণ’৷
ইদানীং বহু চর্চা হচ্ছে, আরএসএস ও বর্তমান সরকারের মদতপুষ্ট নয়া এই ইতিহাস -দর্শন নিয়েই৷ যে দর্শনে অনায়াসেই হলদিঘাটির যুদ্ধে মহারাণা প্রতাপকে আকবরের বিরুদ্ধে জয়ী ঘোষণা করে দেওয়া হয় বা মহেঞ্জোদারো ‘র নর্তকীমূর্তিকে দাপট -সহকারে দেবী পার্বতী রূপে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস দেখা যায় বা সঞ্জয় লীলা বনশালী ‘র ‘পদ্মাবতী ‘ ছবির শ্যুটিং আটকে দেওয়া হয়, এই অভিযোগে, যে ‘সত্য’-র বিকৃতি হচ্ছে৷ এমন প্রবণতা ও ঘটনাবলীর উদাহরণ অগুনতি৷ লিস্টি দিয়ে লাভই বা কী৷ রানা প্রতাপ যে নিশ্চিত ভাবেই হলদিঘাটিতে পরাজিত হয়েছিলেন, সে সম্পর্কে ‘প্রামাণ্য ‘ তথ্য পাওয়া যায় যেমন আবুল ফজলের ‘আকবরনামা’-য়, তেমনই ফজলের বিরোধী বদায়ুনি’র ‘মুন্তাখাব-উত্-তওয়ারিখ’-এও কিন্তু একই ‘সত্য’ পাওয়া যায়৷ এমনকী, এই যে মেওয়ারের রানা’র প্রবল প্রতাপ, তাও কিন্ত্ত এমনই তথ্যের উপর প্রবল ভাবে নির্ভরশীল৷ অ্যাদ্দিন ধরে যে ধারায় বিশ্বাস রাখা হয়েছে, সেগুলিই হঠাত্ ইদানীং আক্রমণের মুখে এবং সে সব ‘সত্য’-কে উল্টে ‘নির্মিত ‘ আখ্যা দেওয়া শুরু৷ সমান তালেই ‘পদ্মাবতী’র ক্ষেত্রে যদি ধরা যায়, একটি গল্পকে, সত্য ইতিহাসের তকমা দেওয়াও তো হচ্ছে অম্লানবদনে৷ মালিক মহম্মদ জায়াসি’র ‘পদ্মাবত ‘ কাব্যেই তো কাল্পনিক উপস্থিতি রাজা রতন সিং -এর এই রানি পদ্মিনীর, যাঁর প্রায় ভিনগ্রহী সৌন্দর্যের টানেই নাকি আলাউদ্দিন খিলজি ‘র চিতোর আক্রমণ, ও আগ্রাসীর হাতে নিজ সম্ভ্রম হারানোর পূর্বেই, যাঁর আত্মাহুতি৷ দুর্ধর্ষ টানটান গল্প, খোদ মালিক জায়াসি-ই রচনার শেষ লগ্নে লিখেছেন, গোটা ব্যাপারটিই আসলে এক উপমা, যেখানে চিতোর যেন এক শরীর, রাজা হলেন মন, পদ্মিনী প্রজ্ঞার প্রতীক ও খিলজি, লোভ ও কামের চিহ্ন৷ কিন্ত্ত বাস্তবে হল কী, না, এক রাজপুত স্ত্রী ‘র সম্ভ্রম রক্ষার বীরগাথা হয়ে উঠে এল এই গল্প৷
এ বার দেখুন, সম্ভ্রম -রক্ষা কার থেকে, না এমন এক জন, যে আগ্রাসী তো বটেই, তার চেয়েও বড়ো কথা, সে ‘বহিরাগত’, অর্থাৎ ‘অপর ‘৷ মনে রাখতে হবে, এ সবের বহু পূর্বেই কিন্ত্ত জমি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে৷ গোলওয়ালকর সেই ‘৪৬ সালেই কুরুক্ষেত্রে ‘গীতা জুনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল’ স্থাপন করে মূল স্রোতের ‘বিকল্প’ এক ইতিহাস -দর্শনের সূচনা বেশ রমরমিয়ে চালু করে দিয়েছিলেন৷ মহাত্মা গান্ধীর হত্যার পর আরএসএস -এর উপর নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে, ফের সে ‘প্রকল্প’ জোর কদমে আরম্ভ হল, ‘৫২ সালে গোরখপুরে ‘সরস্বতী শিশু মন্দির’ প্রতিষ্ঠা দিয়ে৷ সেই থেকে আরএসএস -এর আপন ‘বিদ্যা ভারতী ‘ অবয়বে সাংঘাতিক রূপে বেড়েছে৷ তা, সেখানে প্রবল ভাবে এই ‘অপর ‘ খাড়া করার আগে নিজ সুরক্ষিত এক পাঁচিল -ঘেরা ঘেটো তৈরি করার প্রক্রিয়া চলেছে৷ প্রমাণ করে ছাড়া হয়েছে যে, সর্বধর্ম সমন্বয় মূলত অলীক এক কল্পনা, এক দল ইতিহাসকারের, এবং এমনকী ‘সত্য ‘-র অবমাননা -ও৷ অর্থাৎ, আর্য তত্ত্বকে সুকৌশলে ‘ব্যবহার ‘ ও নাত্সি কায়দায় ‘প্রত্নতাত্ত্বিক ‘ তথ্যকেও পছন্দসই ছাঁচে ঢেলে, সে জমি কিন্ত্ত স্বাধীনোত্তর পর্বে, বেশ যত্ন-সহকারে তৈরি করা চলছিল, সৌজন্য সাভারকর, গোলওয়ালকর ও তাঁর অনুগামীরা৷ নানা উপায়ে, প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস হচ্ছিল, হচ্ছেও, যে নিঃসন্দেহে ভারত এক হিন্দু-রাষ্ট্র৷ যে ঠাস বুনোট ক্রমাগত ভেদ করে, তাতে অ -সুরের মূর্চ্ছনা ছড়ানোই সে ‘অপর ‘ অর্থাত্ এ ক্ষেত্রে মুসলমানদের এক মাত্র লক্ষ্য৷ অতএব প্রয়োজন নিজ মান রক্ষা করে, তাদের যথাযথ প্রতিহত করা৷ এবং সে যুদ্ধেই কখনও বীরত্বের নিশান মহারানা প্রতাপ, কখনও শিবাজী, কখনও এমনকী হিন্দু নারী, পদ্মিনী-ও৷ আরএসএস -দর্শনে আবার এই বীরত্ব -প্রদর্শনের (মূলত যাঁরা যুদ্ধ লড়েছিলেন, যেমন এ ক্ষেত্রে রানা প্রতাপ বা শিবাজি ) লক্ষ্য ছিল কিন্ত্ত এক৷ মাতৃভূমির (সাভারকরের মতে পিতৃভূমি ) স্বাধীনতালাভ, বা স্বাধীনতারক্ষা৷ কাদের থেকে, না, বিদেশি শক্তি, পূর্বে যাদের ম্লেচ্ছ বা যবন অভিহিত করা হয়েছে, বং পরবর্তীতে যারা হিন্দু রাষ্ট্রের ‘অখণ্ড ‘ এক সোনালি যুগের অবসান ঘটিয়ে ইসলামধর্মের প্রতিষ্ঠা করেছিল ‘পবিত্র ‘ ভারতে৷ সে প্রতিষ্ঠা যেমন আগ্রাসনের, তা, শক্তিপ্রয়োগে ধর্মান্তরেরও, অভিযোগ এমনই দক্ষিণপন্থীদের৷ অর্থাত্ অবস্থা যা দাঁড়াল, ইতিহাস বইয়ে যাঁদেরই কথা আমরা পড়ি, বিশেষ করে কংগ্রেস স্থাপন হওয়া ও গান্ধী -যুগ শুরু পূর্বে, যাঁদের আমরা পাই, প্রত্যেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামী (আরএসএস -এর ‘অল্টারনেটিভ ফ্যাক্ট ‘ তো আবার বলে কংগ্রেস -পর্বও নাকি নেহাতই অপ্রাসঙ্গিক !)৷ রানা প্রতাপ, শিবাজি, ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ প্রত্যেকেই৷ অতি সূক্ষ্ম ভাবে এখানেই গুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ইতিহাসচেতনা৷ অর্থাত্ এই যে রানা প্রতাপ লড়ছেন বা ধরা যাক শিবাজি, এমনকী সেপাই বিদ্রোহ -কালে লক্ষ্মীবাঈও, তাঁরা আদতে লড়েছিলেন কীসের জন্য ? আরএসএস -ধর্মী ইতিহাস বলবে দেশ অর্থাত্ ভারতের স্বাধীনতার জন্য৷ অবশ্য শুধু আরএসএস -কে এখানে দোষ দিয়েই বা লাভ কী, স্কুলের প্রায় সমস্ত পাঠ্যপুস্তকেও তো এই ভ্রান্ত ইতিহাসচেতনা৷ ‘পেট্রিয়টিজম’ বা দেশপ্রেম আর ‘ন্যাশনালিজম’ বা জাতীয়তাবাদের মধ্যের তফাতটিই তো খুব যত্নে বা অযত্নে গুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ অধিকাংশের কাছে তো এই দুই আসলে অভিন্ন৷ কিন্ত্ত বাস্তব তো এই যে, রানা প্রতাপ বা শিবাজি বা এমনকী লক্ষ্মীবাঈ -ও কস্মিনকালে ‘অখণ্ড ‘ এক ‘ভারত ‘ নামক ‘নেশন ‘-এর জন্যে লড়েননি৷ বেচারি লড়বেনই বা কী উপায়ে, ‘নেশন ‘-এর ধারণাটিই তো তখন দানা বাঁধেনি৷ যে কারণে ১৮৫৭ -র মহাবিদ্রোহ-ও, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম অধ্যায় নয়৷ তা মালিকপক্ষ হয়ে ওঠা এক জাতির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা৷ নিশ্চয়ই, সে ক্ষেত্রে এক কেন্দ্রের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল অন্যত্রও, অর্থাত্ তা ছিল স্পষ্টতই এক রকম অভ্যুত্থান, কার বিরুদ্ধে, আমরা জানি, কিন্ত্ত কার জন্যে, তা আমরা জানি না৷ বা আমাদের দীর্ঘ দিনের ইতিহাস -পাঠে শেখানো হয়েছে, তা ছিল নিজ মাটির জন্যে৷ ঠিকই, কিন্ত্ত নিজ মাটি আর ‘ভারত ‘ নামক নেশন -স্টেট যে এক না -ই হতে পারে, সে বেলা ?ইতিহাস পড়ানোর ক্ষেত্রে এখানে এক ভয়ানক কাণ্ড ঘটেছে৷ বিদ্রোহীদের ইতিহাসচেতনার ‘প্রকৃত’ পর্যালোচনা স্পষ্ট করবে, তা ছিল মূলত তাঁদের কৌম, জাতি ও ধর্ম-রক্ষার্থে৷ প্রচলিত ধ্যানধারণা, রীতির বিরুদ্ধতা তাঁরা সইতে পারেননি, অতএব রুখে দাঁড়ানো৷ ইংরেজের সমূলে উত্খাত এ ক্ষেত্রে ভাবনা হলেও, আধুনিক যুগে দেশের স্বাধীনতা বলতে আমরা যা বুঝি, সে লক্ষ্য সেপাইদের ছিল না৷ সময়ে ফিরে গিয়ে একই কথা প্রযোজ্য, রানা প্রতাপ বা শিবাজির ক্ষেত্রেও৷ অর্থাত্ ইংরেজ বা মুঘলদের ঐক্যবদ্ধ এক শত্রু -গোষ্ঠী রূপে বিচার করে তাদের বিরুদ্ধে লড়া মানেই কখনওই ‘ভারত’-এর হয়ে লড়া নয়, এবং প্রতাপ বা শিবাজি -ও, লড়েছিলেন, নিজ অঞ্চলের মুক্তি বা তার সুরক্ষার হেতু৷ ‘ভারত ‘-এর জন্যে কখনওই নয়৷ এ বার সমস্যা হল, স্কুলের পাঠ্যক্রমে, তা সে যে বোর্ডই হোক না, কখনওই এ বিষয়ে আলোচনা বা বিশ্লেষণধর্মী হয়ে ওঠেনি৷ ইতিহাস যেমন ‘ফ্যাক্ট’-এর উপর নির্ভরশীল, তেমন সে ‘ফ্যাক্ট ‘-কে বিশ্লেষণ করার উপরও তো নির্ভরশীল, এই মৌলিক ভাবনাটিই তো এখানে অনুপস্থিত৷ ইতিহাসেও তো আজকাল সহজ নম্বর তোলার জন্যে ‘অবজেক্টিভ’ প্রশ্নের ছড়াছড়ি ! এখানেই তো আরএসএস -পন্থীদের পোয়াবারো৷ ‘ফ্যাক্ট ‘ বা তথ্যের ভাণ্ডার রূপে জাতীয় আর্কাইভ -এর উপর যে জোর দিতে চেয়েছিলেন যদুনাথ সরকার, তা সে যুগেও যেমন অবহেলিত ছিল, বর্তমান কালেও অবস্থা তথৈবচ৷ এখন চল হয়েছে সে ‘ফ্যাক্ট ‘-কেই ‘মুখের কথা’ রূপে ব্যবহার করার৷ এবং কোনও রকম বিশ্লেষণ -ভাবনাও যে হেতু প্রকৃত রূপে আমাদের ডিএনএ থেকেই অনুপস্থিত, ফলে আরএসএস -পন্থীদেরও কোনও এক তথ্য অবলম্বনে বা নতুন এক তথ্য ‘আবিষ্কার ‘ করে, পছন্দসই প্রোপাগ্যান্ডামূলক কর্মসূচির অন্তর্গত করে ফেলা, হাতের মোয়া-সম হয়ে উঠছে৷
অতএব যা হওয়ার হচ্ছে, ‘পোস্ট –ট্রুথ’-এর এ কালে, বেড়েও চলবে৷ শুধু মাত্র বিপন্ন কাল, বিষণ্ণ সময় ইত্যাদি বলে হবেটা কী, ইতিহাসচেতনা, স্কুলে ইতিহাস পাঠ্যক্রম, ইতিহাস শিক্ষার প্রকারেই যদি না যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বদল আনা হয়৷ ‘ফ্যাক্ট ‘ ও তার ‘প্রকৃত ‘ বিশ্লেষণ ব্যবহারে ইতিহাসকে না বুঝলে, ‘উল্টোরথ’-কে ঠেকানো অসম্ভব৷ তবে এও খেয়াল রাখা প্রয়োজন, এই ইতিহাস -ভাবনাও যেন ‘অখণ্ড হিন্দু সোনালি যুগ’-এর ন্যায় ইউনিফর্ম ও ঠাস এক বস্ত্ত না হয়ে ওঠে৷ মনে রাখা দরকার, ইতিহাস এক নয়, বহু৷ সে ‘পূর্বকাল’ হয়তো অবদমিত কোনও এক গোষ্ঠীর গাথা৷ আত্মস্থ তো করতে হবে সে ধারাও৷ অতএব ঘুরেফিরে আসে ফের সেই বিশ্লেষণের চিন্তা৷ সে সবে মাথা না ঘামিয়ে কোনও কিছুরই মূলস্রোতে ‘অন্তর্ভুক্তি’ বা ‘নিষেধাজ্ঞা’ (যদিও সে ভিন্ন আর এক রাজনীতি) শ্রেয় নয়৷ অযুক্তির সঙ্গে শিক্ষা বা যুক্তি দিয়ে লড়া, প্রায় কোনও কালেই পেরে উঠত না, ঠিকই, কিন্ত্ত অযুক্তিকেই না চিনলে তো আরও মহাবিপদ, তাই নয় ?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন