জয়ার বিস্ময়কর জনপ্রিয়তা মৃত্যুতে তাই গগনবিদারী শোক
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই প্রথমে সম্রাজ্ঞী এবং তার পরে দেবীর
ভূমিকায় দেখা যেতে থাকে জয়ললিতাকে, মনে হতে থাকে যেন নতুন অবতারে পুনর্জন্ম
হয়েছে তাঁর৷ একনায়কের যা কিছু চরিত্র লক্ষণ, ধীরে ধীরে তার সব ফুটে
উঠতে থাকে তাঁর দল ও রাজ্য পরিচালনায়৷ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবার কাছ
থেকে দূরে সরে গিয়ে তিনি বেছে নেন প্রায় স্বেচ্ছা নির্বাসন৷ দলে
কিংবা সরকারে কারও সাধ্য ছিল না তাঁর ইচ্ছার অন্যথা করার, ছোটো বড়ো সকলকেই
একেবারে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে নিজের ভক্তি ও আনুগত্য প্রকাশ করতে হত৷
সুমন চট্টোপাধ্যায়এই সময়, কলকাতা
আশির দশকের মাঝামাঝি দিল্লিতে আমি রাজ্যসভা কভার করতাম৷ জয়ললিতা তখন সংসদের সেই কক্ষের সদস্য৷ রোজ সকাল এগারোটায় প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হওয়ার আগে তিনি সভায় নিজের নির্দিষ্ট জায়গাটিতে এসে বসতেন, পড়ুয়া ছাত্রীর মতো সকলের কথা খুব মন দিয়ে শুনতেন, চেঁচামেচি, হৈ হট্টগোলে একেবারেই অংশ নিতেন না৷ দুধে-আলতা গায়ের রঙ, তামিল পর্দার সবচেয়ে সুন্দরী ও জনপ্রিয় নায়িকার কথায়-বার্তায়, চালেচলনে অন্য রকম আভিজাত্য ছিল, দেখেই বোঝা যেত তিনি ভিড়ের মধ্যে স্বতন্ত্র৷ জয়ললিতার বয়স তখন ৩৭-৩৮, সবে সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছেন, তামিলনাড়ুর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এমজি রামচন্দ্রনের (সংক্ষেপে এমজিআর ) প্রিয় পাত্রী (দুর্জনের ভাষায় ‘রক্ষিতা’) হিসেবেই তাঁর যাবতীয় পরিচয়৷ তবে এই মহিলাই যে এক দিন পুরুষতন্ত্রের সব প্রতিরোধ পায়ে দলে কিংবা তামিলনাড়ু রাজনীতির পরিচিত জাত-পাতের বিন্যাসকে থোড়াই কেয়ার করে দিয়ে চার চারবার সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবেন, সে সময় কেউ তা কল্পনাও করতে পারেননি৷
এমজিআর তাঁর নায়িকাকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিলেন একটাই কারণে৷ ইংরেজি ভাষার ওপর জয়ললিতার অনায়াস দখল৷ পশ্চিমবঙ্গের মতোই তামিলনাড়ু থেকেও যাঁরা সাংসদ হয়ে দিল্লিতে আসেন, হিন্দি কিংবা ইংরেজি কোনও ভাষাতেই তাঁরা পারতপক্ষে সড়গড় হন না, সংসদের উভয় কক্ষেই তাঁদের তাই বসে থাকতে দেখা যায় মূক ও বধির সমাজের প্রতিনিধি হয়েই৷ কনভেন্ট শিক্ষিতা, বরাবরের মেধাবী ছাত্রী জয়ললিতা জয়রাম ছিলেন সেই নিয়মে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম, বিশুদ্ধ ইংরেজিতে পাবলিক স্কুল উচ্চারণে, টানা বক্তৃতা দিয়ে যেতে তাঁর কোনও অসুবিধেই হত না৷ রাজ্যসভায় তাঁর ‘মেইডেন স্পিচ’ শুনতে তাই সভাকক্ষে হাজির ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বয়ং৷ তখনই শুনেছিলাম স্কুল -শেষের পরীক্ষায় গোটা রাজ্যে তিনি প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন৷ তাঁর ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন, আইন পড়বেন এবং এক দিন কোটিপতি আইনজীবী হবেন৷ কিন্তু মায়ের জোরাজুরিতে তাঁর জীবন সম্পূর্ণ অন্য খাতে বয়েছিল, তিনি সিনেমায় নামতে বাধ্য হয়েছিলেন৷ শেষ পর্যন্ত আবার ওই সিনেমার কল্যাণেই তিনি তামিলনাড়ুর সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাটিনি আইডল এমজিআর-এর ছত্রচ্ছায়ায় এসে পড়েছিলেন, তাঁর হাত ধরেই চলে এসেছিলেন রাজনীতিতে৷ নিজের ইচ্ছেমতো জীবনটাকে পরিচালিত করতে না পারলেও যখন যেটা করেছেন, সেখানেই সেরার শিরোপা অর্জন না করে ক্ষান্ত হননি৷ কি সিনেমায় কি রাজনীতিতে৷
নব্বইয়ের দশকে অভিনেত্রী সিমি গ্রেওয়ালকে দেওয়া জয়ললিতার সাক্ষাৎকারটি মন দিয়ে শুনলেই বোঝা যায় চারপাশের বাস্তবতা কতটা নির্মম সে সম্পর্কে তিনি ষোলো আনা অবগত ছিলেন৷ জয়ললিতা মনে করতেন, সিনেমা এবং রাজনীতি দুটোই একই রকম খারাপ হলেও একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে৷ সিনেমায় মেয়ে হল অনিবার্য পণ্য, সেখানে একটি মেয়ের গ্ল্যামারের বিকল্প কিছু নেই, থাকতে পারে না৷ কিন্তু রাজনীতিতে মেয়েদের সে ভাবে প্রয়োজন নেই পুরুষের, বস্ত্তত মেয়ে না থাকলেই তাদের বেশি সুবিধে৷ কিন্তু আমার মতো মহিলার ক্ষেত্রে সে কাজটা করা অতটা সহজ নয়, কেউ চাইলেই আমাকে দাবিয়ে দিতে পারবে ব্যাপারটা আদৌ তা নয়৷ যদিও অনেকেই আছে যারা ঠিক সেটাই চায়৷
রাজ্যসভায় পারতপক্ষে জয়ললিতা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিতেন না৷ বলতেন কম , যখন বলতে উঠতেন তখন অবধারিত ভাবে বিষয়বস্ত্ত হত নিজের রাজ্য তামিলনাড়ুর কোনও না কোনও সমস্যা৷ আর বক্তৃতার শুরু থেকে শেষ , প্রায় মন্ত্রোচ্চারণের মতো দমকে দমকে উচ্চারিত হত একটি নাম ---এম জি রামচন্দ্রন৷ সেই থেকে মুলায়ম , মায়াবতী হয়ে হালফিলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত নেতা -নির্ভর আঞ্চলিক দলগুলিতে একই ট্র্যাডিশন সমানে চলে আসছে৷ নেতা বা নেত্রীর নাম ঘনঘন উচ্চারণ তাঁদের করে যেতে হবেই৷ এমনকী প্রয়োজন না থাকলেও৷
১৯৮৭ সালে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ হওয়ার পরে বিতর্কে অংশ নিয়ে জয়ললিতার দীর্ঘ ভাষণটি আবছা ভাবে এখনও মনে আছে৷ তার একটা কারণ, কোনও ভাষণে অত বার বিশুদ্ধ সংস্কৃত উচ্চারণে কৌটিল্য আওড়ে যেতে আমি অন্তত আর কাউকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না৷ তাঁর শাসন দীর্ঘায়িত করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে কী করতে হবে তা বোঝাতে গিয়ে যৎপরোনাস্তি মিষ্টি ভাষায় জয়ললিতা চাণক্যের শরণাপন্ন হয়েছিলেন৷ বলেছিলেন, শাসকের কাজটা হবে বাগানের দক্ষ মালির মতো৷ দক্ষ মালি কে? না যিনি উৎপাটিত গাছ-গাছালির জায়গায় নতুন চারা বসান, ফুলে ফলে ভরে ওঠা গাছের আদর যত্ন করেন, দুর্বল লতাগুলিকে শক্তিশালী হতে সাহায্য করেন, বাড়-বাড়ন্ত গাছের শাখা প্রশাখাগুলি প্রয়োজন মতো নুইয়ে দেন, বেশি শক্তিশালী গাছকে প্রয়োজনে শক্তিহীন করে দেন, ঝোপঝাড়গুলিকে সুন্দর ভাবে বিন্যস্ত করেন, কাঁটাগাছগুলিকে ছেঁটে দেন এবং মাটি থেকে নিজের মতো করে মাথা চাড়া দেওয়া চারাগাছগুলি রক্ষা করেন৷ জয়ললিতার নাতিদীর্ঘ, ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবনের ওপর চোখ বোলালে বোঝা যায় চাণক্যের পরামর্শ তিনিও বোধ হয় নিজের মতো করে আত্মস্থ করেই চলার চেষ্টা করেছিলেন শেষ দিন পর্যন্ত৷
নব্বইয়ের দশকে অভিনেত্রী সিমি গ্রেওয়ালকে দেওয়া জয়ললিতার সাক্ষাৎকারটি মন দিয়ে শুনলেই বোঝা যায় চারপাশের বাস্তবতা কতটা নির্মম সে সম্পর্কে তিনি ষোলো আনা অবগত ছিলেন৷ জয়ললিতা মনে করতেন, সিনেমা এবং রাজনীতি দুটোই একই রকম খারাপ হলেও একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে৷ সিনেমায় মেয়ে হল অনিবার্য পণ্য, সেখানে একটি মেয়ের গ্ল্যামারের বিকল্প কিছু নেই, থাকতে পারে না৷ কিন্তু রাজনীতিতে মেয়েদের সে ভাবে প্রয়োজন নেই পুরুষের, বস্ত্তত মেয়ে না থাকলেই তাদের বেশি সুবিধে৷ কিন্তু আমার মতো মহিলার ক্ষেত্রে সে কাজটা করা অতটা সহজ নয়, কেউ চাইলেই আমাকে দাবিয়ে দিতে পারবে ব্যাপারটা আদৌ তা নয়৷ যদিও অনেকেই আছে যারা ঠিক সেটাই চায়৷
এমজিআর যত দিন বেঁচেছিলেন, নিজস্ব স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না জয়ললিতার৷ তাঁকে যাঁরা ঘনিষ্ঠ ভাবে চেনেন তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য এমজিআর -এর সংস্পর্শে আসার পরেই জয়ললিতার জীবনে আসে নাটকীয় মোড়, স্বপ্ন-হতাশা, ধান্দাবাজি-ষড়যন্ত্র কিংবা দেবতা-দানবের ঝঞ্ধাবহুল জগতে সেই তাঁর প্রথম প্রবেশ৷ এমজিআর আর তাঁর মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে দিতে কম চেষ্টা হয়নি সে সময়, হতাশ জয়ললিতা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়ে দলীয় পদ থেকে ইস্তফাও দিতে চেয়েছিলেন৷ এমজিআর কেবল যে তাঁর অভিভাবক ছিলেন তাই নয়, পার্থিব সব অর্থেই তিনি জয়ললিতাকে পদানত রাখার ও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতেন৷ জয়ললিতা কী পোশাক পরবেন, কাদের সঙ্গে মেলামেশা করবেন, কতটা করবেন আর কতটা সঞ্চয় করবেন তাও নির্ধারিত হত এমজিআরের নির্দেশেই৷ কিন্তু বেশ কিছুকাল রোগভোগের পরে এ হেন এমজিআর যখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন, জয়ললিতাকে তিনি নিজের উত্তরসূরি মনোনীত করে যাননি৷ অনেক লাঞ্ছনা, বিরোধিতা, বিদ্বেষ, ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করে প্রথমে তিনি দলের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়েছিলেন, তার পরে হয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী৷ হয়তো সে জন্যই জয়ললিতা গর্ব করে বলতে পারতেন, ‘এশিয়ার বাকি মহিলা নেত্রীদের মতো পারিবারিক প্রেক্ষাপট আমার ছিল না৷ আমি নিজেই নিজেকে তৈরি করেছি, কেউ সোনার থালায় সাজিয়ে আমাকে কিছুই তুলে দেয়নি৷’ সে জন্যই কি পুরাচ্চি থালাইভি নিজের উত্তরসূরি হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করে গেলেন না?
এমজিআর-এর মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবারের হাতে জয়ললিতাকে যে লাঞ্ছনা ভোগ করতে হয়েছিল চেন্নাইতে উপস্থিত থেকে আমি তা চাক্ষুষ করেছিলাম৷ মৃত্যুর খবর পেয়ে নিজের পোয়েস গার্ডেনের বাড়ি থেকে জয়ললিতা প্রথমে ছুটে গিয়েছিলেন প্রয়াত নেতার বাড়িতে৷ সেখানে তাঁর মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, কুকুর-ছাগলের মতো দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে৷ বাড়ি থেকে এমজিআর-এর মরদেহ রাজাজি সেন্টারে নিয়ে আসা হবে শুনে তিনি সবার আগে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন৷ নেতার মাথার পাশে ঠায় ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে দিয়েছিলেন একুশটি ঘণ্টা৷ তার পর শেষ যাত্রায় শকট যখন বের হল তারও ওপর জয়ললিতা সওয়ার হতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু তাঁর চুলের মুঠি ধরে, লাথি মেরে তাঁকে সেখান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়৷ শেষ যাত্রায় বের হওয়ার আগে ঠিক একই স্থানে একই ভাবে রাখা ছিল জয়ললিতার নশ্বর দেহও, শেষ মুহূর্তেও তিনি জানান দিয়ে গেলেন আসলে কে ছিলেন এমজিআর-এর প্রকৃত উত্তরসূরি
মিডিয়ার সঙ্গেও তাঁর ছিল প্রায় অহি-নকুল সম্পর্ক৷ মিডিয়ার ওপর নির্ভর করে জয়ললিতা যেমন কোনও দিন রাজনীতি করতে চাননি তেমনি মিডিয়ায় সঙ্গত সমালোচনাও ছিল তাঁর বিলকুল না পসন্দ৷ যতজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তিনি মানহানির মামলা রুজু করেছিলেন সেটাও অবশ্যই সর্বভারতীয় রেকর্ড৷
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই ধীরে ধীরে প্রথমে সম্রাজ্ঞী এবং তার পরে দেবীর ভূমিকায় দেখা যেতে থাকে জয়ললিতাকে, মনে হতে থাকে যেন নতুন অবতারে পুনর্জন্ম হয়েছে তাঁর৷ একনায়কের যা কিছু চরিত্র লক্ষণ, ধীরে ধীরে তার সব কয়টি ফুটে উঠতে থাকে তাঁর দল ও রাজ্য পরিচালনায়৷ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে তিনি বেছে নেন প্রায় স্বেচ্ছা নির্বাসনের জীবন, হাতে গোনা সামান্য কয়েকজন ছাড়া যেখানে ঊঁকি দেওয়ার সাধ্যও ছিল না আর কারও৷ দলে কিংবা সরকারে কারও সাধ্য ছিল না তাঁর ইচ্ছার অন্যথা করার, ছোটো বড়ো সকলকেই একেবারে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে নিজের ভক্তি ও আনুগত্য প্রকাশ করতে হত৷ মিডিয়ার সঙ্গেও তাঁর ছিল প্রায় অহি-নকুল সম্পর্ক৷ মিডিয়ার ওপর নির্ভর করে জয়ললিতা যেমন কোনও দিন রাজনীতি করতে চাননি তেমনি মিডিয়ায় সঙ্গত সমালোচনাও ছিল তাঁর বিলকুল না পসন্দ৷ যতজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তিনি মানহানির মামলা রুজু করেছিলেন সেটাও অবশ্যই সর্বভারতীয় রেকর্ড৷কিন্তু আম-জনতার কাছে? তিনি ছিলেন বেনেভোলেন্ট ডেসপট, গরিবের এক ও অদ্বিতীয় আম্মা৷ দাতব্যের রাজনীতির জন্য এমনিতেই পরিচয় আছে তামিলনাড়ুর৷ তবু এ কথা অনস্বীকার্য গরিব ও প্রান্তিক মানুষের কল্যাণে তিনি নিত্য নতুন যত রকম প্রকল্পের আমদানি করেছিলেন তার সমতুল্য কোনও নজির ভারতে নেই৷ মিড-ডে মিল, আম্মা ক্যানটিন, আম্মা সাইকেল , বিয়েতে সোনা এবং মঙ্গলসূত্র, শিশু আলয় এ সব তো ছিলই, এ বার ভোটে জেতার আগে আরও চমকপ্রদ সব দাতব্যের প্রতিশ্রীতি দিয়েছিলেন আম্মা৷ যেমন কৃষকের ঋণ মকুব করা, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের বিনে পয়সায় ল্যাপটপ, সব রেশন কার্ডের মালিককে বিনে পয়সায় মোবাইল ফোন, এবং শিক্ষার জন্য ঋণে সরকারি ভর্তুকি৷ কিন্তু জয়ললিতার বিশেষ কৃতিত্ব হল এই রকম লাগামছাড়া দাতব্য করতে গিয়ে রাজ্যটাকে তিনি দেউলিয়া করে দেননি৷ সত্যি কথা বলতে কি কাণ্ডজ্ঞানহীন পপুলিজম, প্রশাসকের একনায়কতন্ত্র এবং বেপরোয়া দুর্নীতি সত্ত্বেও আর্থিক অগ্রগতির রাস্তায় তামিলনাড়ু অবিচল থাকতে পেরেছে৷ দেশের মধ্যে এই রাজ্যের অর্থনীতি দ্বিতীয় বৃহত্তম, মাথা পিছু আয়ের প্রশ্নে এক নম্বরে৷ হিউম্যান ডেভলপমেন্টের যাবতীয় সূচক জাতীয় গড়ের অনেক ওপরে৷ দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম ফার্টিলিটি রেট এ রাজ্যে, ইনফ্যান্ট মর্টালিটি রেট এবং মেটারনাল মর্টালিটি রেটে দ্বিতীয়, মহিলা ও শিশুদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনাও এখানে সবচেয়ে কম৷ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিল্প কারখানা আছে তামিলনাড়ুতে , মহারাষ্ট্র কিংবা গুজরাটের চেয়েও বেশি৷ স্বাভাবিক ভাবেই গুজরাট কিংবা মহারাষ্ট্রের চেয়েও অনেক বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এই সব কারখানায়৷
তাই বলে কি তামিলনাড়ু ঋণ নেয়নি বা নেয় না? অবশ্যই নেয় এবং গত পাঁচ বছরে তা প্রায় বিরানব্বই শতাংশ বেড়েছে৷ কিন্তু রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধি ও অগ্রগতির কারণে সেই বিপুল ঋণের বোঝা এ রাজ্য সহ্য করতে পেরেছে৷ পূর্বতন সরকারের ঋণ মকুব করে দেওয়ার জন্য জয়ললিতাকে তাই দরবার করতে হয়নি দিল্লির কাছে৷ শাসন ক্ষমতায় থেকে রাজ্যের প্রায় সব শ্রেণির মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছিলেন বলেই জয়ললিতার এমন বিস্ময়কর জনপ্রিয়তা, তাঁর মৃত্যুতে এমন গগনবিদারী শোক৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন