মার্কিনীদের এই রায় বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে, ট্রাম্পের পক্ষে
দেশের সমস্যা সামলাতে ব্যর্থ হলে বহির্বিশ্বে ট্রাম্পের আস্ফালন আরও বাড়বে৷ সে বড়ো সুখের সময় নয়৷ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যাঁরা চাঁদা বা ভোট দিলেন তাঁদের অধিকাংশ জীবিকা খোয়ানো বা খোয়ানোর সম্ভাবনায় দিন গুনতে থাকা শ্বেতাঙ্গ৷
নীলাঞ্জন হাজরা
I will keep you in suspense --- Donald Trump
সুপার পিএসি৷ ৮ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে ভোট-বিপ্লব ঘটে গেল আগামী বহু বছর তা নিয়ে কাটা-ছেঁড়া করবেন হরেক কিসিমের পণ্ডিত৷ এই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে সেই কাটা-ছেঁড়ার অনেকগুলিতেই ‘সুপার পলিটিকাল অ্যাকশন কমিটি’ বা সুপার পিএসি, এই শব্দবন্ধটি বারবার উঠে আসবে৷ এখানে ‘এই মুহূর্তে’ কথাটা বোল্ড হরফে থাকা দরকার৷ কারণ এ নির্বাচনের বিষয়ে যে যখন যা বলেছেন তা কোনও না কোনও সময়ে তাঁকে গিলতে হয়েছে৷ আরও হবে৷ প্রত্যেককে৷ প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও৷ সম্ভবত তাঁকেই সব থেকে বেশি৷ চ্যানেলে চ্যানেলে , টুইটারে , ফেসবুকে ভুল শোধরানোর হিড়িক পড়ে গিয়েছে৷
প্রথমেই সেই দলে যোগ দিয়ে শুরু করি৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারের গোড়ার দিকে এই পাতাতেই আমার একমাত্র লেখায় আমি লিখেছিলাম , ‘আমি এখনও বিশ্বাস করি হিলারি ক্লিন্টন জিতবেন’৷ তারপর হঠাত্ই এক দিন, নেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে চোখে পড়ল মার্কিন নির্বাচনে কোন প্রার্থী কত খরচ করছেন আর সে অর্থ কোথা থেকে আসছে তার বেশ পুঙ্খানুপুঙ্খ একটা হিসেব৷ আর তার পর থেকেই লক্ষ করা শুরু করলাম --- নির্বাচনী প্রচার যত গড়িয়েছে, চোখে পড়েছে কর্পোরেট দুনিয়া এককাট্টা হয়ে হিলারির পক্ষে দাঁড়িয়ে পড়েছে৷ তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে সংবাদমাধ্যমের দুনিয়া এবং হলিউড বিনোদনের দুনিয়াও হিলারি ভজনায় মেতে উঠেছে৷ আর লক্ষ করলাম প্রথম সারির মার্কিন কাগজগুলি ফলাও করে জানাচ্ছে--- হিলারি ক্লিন্টনের সুপার পিএসি অর্থভাণ্ডার ইতিহাসের সমস্ত উদাহরণ ছাপিয়ে গিয়েছে৷
ইতিহাস অবিশ্যি খুব পুরনো নয়৷ ২০১০-এ মার্কিন আদালতের রায়ের মাধ্যমে এই সুপার পিএসি ব্যাপারটা তৈরি হয়৷ একটু সরলীকৃত ভাবে বলা যেতে পারে--- সুপার পলিটিকাল অ্যাকশন কমিটি তৈরি করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীরা কর্পোরেট দুনিয়া, বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন এবং ইউনিয়ন থেকে সীমাহীন অর্থ সংগ্রহ করে তা প্রচারের কাজে ব্যবহার করতে পারেন৷ যদিও সে অর্থ সরাসরি প্রার্থীকে দেওয়া যায় না৷ সোজা বাংলায়, কর্পোরেট ও বিভিন্ন সংগঠিত শক্তির অর্থবল মার্কিন নির্বাচনে কাজে লাগানোর চ্যানেলটির নাম সুপার পিএসি৷ হিলারি ক্লিন্টন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ হেন সুপার পিএসি-র মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের তুল্যমূল্য কী রকম? (দ্রষ্টব্য সঙ্গের সারণি )এ বারে কি একটা ছবি খানিকটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে? বা বলা যায় একটা প্রশ্ন? ‘কট্টরদের মধ্যে কট্টরতম দক্ষিণপন্থী’ ট্রাম্প তাঁর ক্যাম্পেন চালানোর জন্য কর্পোরেট দুনিয়ার অর্থ সমর্থন এত কম এবং আম আদমির অর্থ সমর্থন এত বেশি পেলেন কেন? এই প্রশ্নটার উত্তর যিনি যত সঠিক দিতে পারবেন তিনি ততই ভালো আন্দাজ করতে পারবেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘরে -বাইরে নীতি কী হবে? তবে এর সঙ্গে জুড়তে হবে আরও কতগুলি প্রশ্নও --- সাধারণদের যাঁরা ট্রাম্পকে চাঁদা দিলেন তাঁদের বর্ণ, শ্রেণি ও লিঙ্গগত পরিচয় কী ? তাঁরা যে প্রচার শুনে , বিশ্বাস করে হাতি চিহ্নে বোতাম টিপে অভূতপূর্ব বিপ্লব ঘটালেন তাঁদের সে বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত পূর্ণ হবে তো? ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যাঁরা চাঁদা ও ভোট দিলেন এই মুহূর্তের প্রাথমিক গোদা হিসেবে ধরা হচ্ছে তাঁদের সিংহভাগ জীবিকা খোয়ানো বা খোয়ানোর সম্ভাবনায় দিন গুনতে থাকা শ্বেতাঙ্গ৷ কিন্ত্ত হিলারিকে সমর্থনকারী মধ্য-বাম বিদ্বৎসমাজ কী ভাবে এই মানুষগুলিকে ‘মিস্’ করে গেলেন তা আমার কাছে এক পরম বিস্ময়৷ আসলে মেক্সিকো-চিন-ভারত থেকে আসা বিভিন্ন স্তরের সস্তা শ্রম মার্কিন অর্থনীতির উন্নতিই ঘটাচ্ছে --- এই মধ্য -বাম যুক্তির সত্যাসত্য যাই হোক, তা আর চলছে না৷ কোটি কোটি বেকার শ্বেতাঙ্গ বলছেন --- বকোয়াস৷ তাঁদের ক্রোধ আছড়ে পড়ছে পাড়ার মেক্সিকান বেবি -সিটার কিংবা সর্দারজি ট্যাক্সি ড্রাইভারটির উপরে৷ দিশাহারা শ্বেতাঙ্গ যুবক চার্চে ঢুকে গুলি করে মেরে ফেলছেন প্রার্থনারত কৃষ্ণাঙ্গদের৷ এ সন্ত্রাসবাদ নয়৷ সন্ত্রাসবাদের বাবা --- আর্থসামাজিক ক্ষমতাবানদের ক্ষমতা হারানোর ক্ষত-ক্ষরিত বিষ, যা মার্কিন স্যালাড বোলটিকে বিষাক্ত করে তুলছে, এবং পুলিশ-মিলিটারি নামিয়ে যা ঝেড়ে দেওয়া যাবে না৷ হ্যাঁ, এই মানুষেরা শ্বেতাঙ্গ৷ হ্যাঁ, এই মানুষেরা প্রধানত ‘গ্রাম্য’ বা ছোটো-শহরের কিছুটা গোঁড়া খ্রিশ্চান৷ হ্যাঁ, এই মানুষদের একটা বিরাট অংশ ঝাঁ চকচকে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল বোলচালে অভ্যস্ত নন৷ হ্যাঁ, ক্লাইমেট চেঞ্জ তাঁরা বোঝেন না৷ তাঁরা বোঝেন--- কয়লা ব্যবহার বন্ধ হয়ে গিয়ে হাজারে হাজারে মানুষ জীবিকাহীন হয়ে পড়ছেন৷ তাঁরাও দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া আম আদমিই৷ তাঁরা যদি দশকের পর দশক দেখেন আইনি, বেআইনি, আধা -আইনি ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়া কোটি কোটি ‘ইমিগ্র্যান্ট’-দের সৌজন্যে বড়ো বড়ো কোম্পানি থেকে আরম্ভ করে উচ্চবিত্ত বাড়িতে পর্যন্ত সেই সস্তা শ্রমের রমরমা, তা হলে তাঁদের পক্ষে শেষ পর্যন্ত ভোটের বাক্সে গিয়ে সংগঠিত পাল্টা মার দেওয়া কি খুব অস্বাভাবিক না অপরাধ?
দশকের পর দশক ধরে আইনি, আধা-আইনি ও বেআইনি ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়া বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন স্তরের চাকরিতে নিযুক্ত সস্তা শ্রমের ঢলে ক্রমাগত জীবিকা হারাতে থাকা শ্বেতাঙ্গরা আতঙ্কিত৷ এই সস্তা শ্রম শেষ পর্যন্ত ঠিক কার সুবিধার্থে মার্কিন দেশে ঢুকছে ক্রমাগত সেটা বোঝা কি সাংঘাতিক কঠিন ? অন্য দিকে , আউটসোর্সিং -এর গাল ভরা নামে যে ভাবে বিশাল বিশাল কারখানা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে সস্তা শ্রমিকের দেশে পাড়ি দিচ্ছে , সে প্রক্রিয়া বন্ধ হলে কর্পোরেট দুনিয়া এমন গেল গেল রব তোলে এটা বোঝা কি অসম্ভব? আমি এই নির্বাচনকে কর্পোরেট চালিত বিশ্বায়নের মুখে বিরাশি সিক্কার ঘুষি বলেই মনে করি৷ সেই বিশ্বায়নের যার এক এবং একমাত্র লক্ষ্য --- কর্পোরেট মালিকদের যাতে শ্রমিকদের জন্য ব্যয় কমানো৷ এর ফলে অন্ন -বস্ত্র -বাসস্থান -ন্যূনতম চিকিত্সার সুযোগ হারাচ্ছেন যে স্বল্প-শিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ তিনিই এবার দিলেন মার্কিন ইতিহাসের সব থেকে সুস্পষ্ট এস্টাব্লিশমেন্ট বিরোধী ভোট৷ শুধু শ্বেতাঙ্গ পুরুষ নয়, নারীরাও৷ প্রাথমিক হিসেবে দেখা যাচ্ছে , বিপুল সংখ্যক মহিলা ট্রাম্পকেই বেছে নিয়েছেন৷ এই পরিসংখ্যানটা অত্যন্ত জরুরি৷ দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স জানাচ্ছে --- ৫৩ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ মহিলা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন৷ আর যে মহিলাদের কলেজ ডিগ্রি নেই , তাঁদের ৬৩ শতাংশ বেছেছেন ট্রাম্পকে৷ যত বেশি বেশি পরিসংখ্যান আসছে ততই এই নির্বাচনের শ্রেণিগত চরিত্রটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ যে নারী তাঁর সন্তানের বা মা -বাবার চিকিত্সা খরচ যোগাতে হিমসিম খাচ্ছেন , যিনি জানেন না আগামী মাসে ধারে কেনা বাড়িটির ইএমআই কে যোগাবে , আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ইমিগ্র্যান্টদেরই দেশ এই ইতিহাস বোঝাতে যাওয়ার ‘প্রগতিশীল’ আস্পর্ধার গালে ঠাটিয়ে একটি চড় কষিয়েছেন তিনি৷
প্রশ্ন হল, অতঃ কিম? ট্রাম্পের এই জয়ে ভারতের কী এসে-যাবে? সে এক সাংঘাতিক সাসপেন্স৷ লেখার শুরুতে উদ্ধৃত ওই মন্তব্যটি ট্রাম্প করেছিলেন, পরাজিত হলে তিনি নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেবেন কি না এই প্রশ্নের জবাবে৷ তিনি জেতার পরে দেখা যাচ্ছে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের সম্ভাব্য নীতি নিয়ে এমন রোমহর্ষক সাসপেন্স মার্কিন ইতিহাসে বিরল৷ অথচ ১৯২৮-এর পর এই প্রথম একজন প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন মার্কিন সেনেট এবং হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ দুটোই যাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির দখলে৷ তা হলে তো, পরবর্তী নীতিগুলি রিপাবলিকানদের ঘোষিত অবস্থান মতোই উচিত৷ সমস্যা হল , ট্রাম্পের সঙ্গে রিপাবলিকানদের একটি বড়ো অংশের সম্পর্ক সাপে-নেউলে৷ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘গ্রেট’ করা ছাড়া তাঁর নিজের আর তো কোনও ঘোষিত নীতিই নেই৷ তবু আন্দাজে কিছু ঢিল ছোড়া যেতে পারে৷ যেতে পারে এই কারণেই যে, যে -হিলারিকে তিনি নিশ্চিত জেলে পুরবেনই বলে হুঙ্কার ছেড়ে ছিলেন, বিজয়ী ভাষণে তিনি সেই হিলারিই দেশের উন্নয়নে বিপুল অবদান রেখেছেন সে কথা বিনম্র চিত্তে স্মরণ করেছেন ! তাঁর সেক্রেটারিকুল তাঁকে নির্ঘাত্ বলেছেন --- স্যার , এবার আপনি রাজা হয়েছেন৷ এবার যে কাপড় পরতেই হবে! কাজেই তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রীতির অবান্তর -অসম্ভব হুঙ্কারগুলি ফেলে দিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি কী করতে পারেন তা দেখা যেতে পারে৷ ‘আউটসোর্সিং’ এবং সস্তা শ্রমের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কমাতেই হবে৷ সেটাই তাঁর মূল সমর্থকদের প্রধান দাবি৷ কিন্ত্ত কর্পোরেটদের উপরে আউটসোর্সিংয়ের জন্য অতিরিক্ত কর চাপালে এবং এইচ ওয়ান বি -র মতো ভিসা পাওয়ার উপায় কঠিনতর করলেই কর্পোরেটরা পাড়া মাথায় করবে৷ তা হলে ? তা হলে কর্পোরেটদের জন্য বিদেশের বাজার খুলে দিতে হবে৷ দুটোতেই ভারতের যাবে -আসবে৷ আউটসোর্সিং এবং ভিসা ব্যবস্থা কঠিনতর হলে ভারতের মুক্ত বাজার অর্থনীতির পালের হাওয়া কেড়ে নেওয়া হবে৷ তখন নরেন্দ্র মোদী ঠিক কী করবেন সেটা দেখার৷ এর পাশাপাশি আসবে মাল্টিব্র্যান্ড রিটেল সহ হরেক কিসিমের বাজার ১০০ শতাংশ খুলে দেওয়ার চাপ৷ এখানে একটা সুবিধা আছে --- মেক ইন ইন্ডিয়া৷ সেটা এই পরিস্থিতির সঙ্গে বেশ খাপ খেয়ে যেতে পারে৷ আগামী দু’ বছরে আমরা অবধারিত ভাবে ভারতের শ্রম আইনে শ্রমিকদের পক্ষে যা -কিছু তা নাম -কে -ওয়াস্তে করে দেওয়ার প্রক্রিয়াটা হইহই করে এগোতে দেখব এবং কোনও না কোনও নামে এসইজেড তৈরিকে সহজতর করাও দেখব৷ মুশকিল হল, এই ভাবে মেক ইন ইন্ডিয়ার পথ সুগম করলে, প্রথমেই ছুটে আসবে চিন৷ বিপুল বাণিজ্যের আর একটি ক্ষেত্র প্রতিরক্ষা৷ যত যুদ্ধের আশঙ্কা তত বাণিজ্য৷ সেখানে আবার লম্বা নাক গলিয়ে বসে আছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিন৷ এবং ফ্রান্সও৷ এই লড়াইয়ে ট্রাম্প কী করেন তা দেখার মতো হবে৷ পুটিন-ট্রাম্প সম্পর্কের থ্রিলিং মুহূর্তের অপেক্ষায় রইলাম৷
তবে ট্রাম্পের আসল পরীক্ষা হবে সন্ত্রাসবাদ-উগ্রবাদ৷ আমার ধারণা ট্রাম্পের আমলে ছোটো ছেটো যুদ্ধ ও বিভিন্ন দেশে সরকার ভাঙা-গড়া (যেমন সিরিয়ায়) হবে মার্কিন কূটনীতির মূল শক্তি৷ সিআইএ হূত গৌরব ফিরে পাবে৷ আর এখানেই একটা বোঝাপড়া প্রয়োজন হবে রুশ ডিকটেটর ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে৷ ইউক্রেনসহ ইউরেশিয়া পুটিনকে ছেড়ে দিয়ে পশ্চিম এশিয়া মার্কিন নিয়ন্ত্রণে রাখার ভাগবাঁটোয়ারাটা হয় কিনা সেটাও একটা দেখার বিষয় হবে৷ তবে আমি নিশ্চিত যে, পশ্চিম এশিয়ায় ওবামার থেকে অনেক বেশি মার্কিন সেনা মোতায়েন করবেন ট্রাম্প৷ সেই সব মার্কিন সেনা ছাউনি থেকে উড়বে ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন৷
এ ছাড়া, ওবামার আমলে ঝাঁকুনি খাওয়া মার্কিন-ইজরায়েলি সম্পর্ককে ফের মসৃণ করবেন ট্রাম্প৷ কাজেই ইরানের অর্থনৈতিক অবরোধ ফিরে আসলে আমি অবাক হব না৷ পশ্চিম এশিয়ার সব থেকে প্রগতিশীল দেশ ইরানকে মার্কিন জোটে সামিল করে একাধারে সৌদি আরব ও ইজারায়েলকে সমঝে দেওয়ার যে সুযোগ ওবামা তৈরি করছিলেন, ট্রাম্প সে পথে হাঁটবেন না৷ সত্যি বলতে কি তাঁর চার বছরের শেষের দিকে ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার আশঙ্কাও আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না৷ সেটা ভারতের পক্ষে সাংঘাতিক৷ কারণ এই সেপ্টেম্বরই ইরান থেকে ভারতে অপরিশোধিত তেল আমদানি বিগত ১৫ বছরে সব থেকে বেশিতে দাঁড়িয়েছে--- প্রতি দিন ৫৭৬০০০ ব্যারেল৷
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের গণতন্ত্র ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ের প্রশংসা এবং পাকিস্তানকে অস্ত্র কেনার অর্থ সাহায্য দুটোই আগের মতোই বজায় থাকবে৷ পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র সন্ত্রাসবাদীদের হাতে পড়ার আশঙ্কায় মার্কিনিরা বরাবরই তটস্থ৷ পাকিস্তান রাষ্ট্রকে ট্রাম্প দুর্বল করবেন না৷ আমার বিশেষ আগ্রহ থাকবে আফগানিস্তানে তালিবানদের ক্ষেত্রে কী করেন তিনি সে বিষয়ে৷ সম্ভব আইসিস মার্কা সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় না দেওয়ার শর্তে তিনি তাঁদের ঘাঁটাবেন না৷ সে শর্ত পূরণ না হলে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা উপস্থিতি বাড়বে৷
আমার বিশ্বাস ঘরে শ্বেতাঙ্গদের ক্রোধ সামাল দেওয়া ট্রাম্পের পক্ষে অসম্ভব৷ বরং তাঁর জয়ে দ্বিধাবিভক্ত আমেরিকায় বিদেশি-বিদ্বেষ এবং বর্ণবিদ্বেষ দুটোই বিপজ্জনক ভাবে বাড়বে৷ এবং ঘরের সেই ব্যর্থতার ফলেই বাইরে আস্ফালন বাড়াতে হবে তাঁকে৷ আমার ধারণা তত দিনে রিপাবলিকান মূলধারার সঙ্গে ট্রাম্পের কোলাকুলি হয়ে যাবে৷ ফলত, চার বছর পরে আমরা আরও বেশি বিপজ্জনক একটা দুনিয়ায় বসবাস করব৷
সংক্ষেপে, কর্পোরেট-বন্ধু অর্থনীতিজনিত আর্তনাদ আর বর্ণ ও জাতি সম্পর্কের ক্ষেত্রে হাসি-হাসি ভাব-ভালোবাসা এই দুটি বল একসঙ্গে নিয়ে ‘প্রগতিশীল’ মাদারি-কা-খেল আর বিপুল সংখ্যক মানুষ দেখতে চাইছেন না৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন