ভারতে বিচারাধীন ৮ সিমি বন্দি খুনের ঘটনায় নানা প্রশ্ন
আনন্দবাজার পত্রিকা ও দৈনিক এই সময়,কলকাতা, ভারত
ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের রাজধানী ভোপালের জেল থেকে বিচারাধীন বন্দি, ৮ সিমি (স্টুডেন্ট ইসলামিক মুভমেন্ট ইন্ডিয়া) সদস্য- মহম্মদ সালিক, মহম্মদ খালিদ, আকিল, আব্দুল মজিদ, আমজাদ, মুজিব শেখ, মেহবুব গুড্ডু ও জাকির সাদিকের পালানো ও ৭ ঘণ্টার মধ্যেই তাদের সকলকে নিকেশ করার ঘটনা খুলে দিল একরাশ বিতর্কের ঝাঁপি! যার সূত্রে ফের উঠে আসছে ইশরাত জহান ভূয়ো সংঘর্ষের প্রসঙ্গ। দু’টি ঘটনাই ঘটেছে রাজ্যে বিজেপির সরকার থাকা কালে। ২০০৪ সালের ১৫ জুন গুজরাতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ইশরাত জহান-সহ চার জনের মৃত্যুতে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল রাজ্যের. তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকে। এ বার অভিযোগের আঙুল মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিংহ চৌহানের সরকারের দিকে।
এদিকে মধ্যপ্রদেশসরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এনকাউন্টারেরঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে৷ মধ্যপ্রদেশের মুখ্যসচিব, ডিরেক্টরজেনারেল অফ পুলিশ, আইজি কারা-কে নোটিস পাঠিয়েছে কমিশন৷ ছ’সন্তাহের মধ্যে এনকাউন্টারের বিষয়ে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে৷ পুলিশ ও জেলহেফাজতে থাকা বন্দিদের অধিকার নিয়ে বরাবরই সরব জাতীয় মানবাধিকারকমিশন৷ পুলিশ ও জেল হেফাজতে একাধিক বন্দির মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগপ্রকাশ করেছে কমিশন৷ এনকাউন্টার নিয়েও প্রত্যেকটি রাজ্য সরকারকেনির্দিষ্ট গাইডলাইন দেওয়া রয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন৷
৮ বন্দির মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসতেই শুরু হয়ে গিয়েছিল রাজনৈতিক চাপানউতোর। যে বিতর্কে ইন্ধন জুগিয়েছে ৩টি ভিডিও। যার একটিতে দেখা গিয়েছে, এক পুলিশকর্মী ঠান্ডা মাথায় বুলেট বৃষ্টি করছে এক জেলছুট বন্দির দিকে। দ্বিতীয়টিতে এক ব্যক্তি সিমি সদস্যের পকেটে থেকে একটি ছুরি জাতীয় বস্তু বার করে দেখিয়ে আবার সেখানেই রেখে দিচ্ছে। আর তৃতীয়টিতে, পাঁচ জন সিমি সদস্য টিলার উপরে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলছে। তার পরেই শোনা গিয়েছে গুলির শব্দ। ভিডিওগুলি সামনে আসার পরেই গোটা ঘটনাটি ‘সাজানো সংঘর্ষ’ নয়তো— এই প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের দ্বিগ্বিজয় সিংহ, আরজেডির লালুপ্রসাদ বা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের মতো ঘোষিত বিজেপি-বিরোধীরা। অভিযোগ উঠেছে, ছক কষে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে ওই ৮ জনকে। গোটা ঘটনাটিকে সংঘর্ষ বলে দাবি করে গেলেও হিসেবের কড়ি মেলাতে পারছে না শিবরাজ সরকার। সংঘর্ষটি ভূয়ো কি না তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘‘যে নিরাপত্তারক্ষীদের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়, কেবল ভিডিও-র ভিত্তিতে তাদের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়।’’
বিজেপি-র সম্পাদক শ্রীকান্ত শর্মা বলেছেন, সিমি জঙ্গিদের পুলিশ কী ভাবে মারল, তা নিয়ে কোনও তদন্ত হবে না৷ নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জঙ্গিদের মৃত্যু নিয়ে তদন্ত করা বন্ধ হোক৷ মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিং-ও বলেছেন, এনআইএ তদন্ত হবে শুধুমাত্র কী করে জঙ্গিরা জেল ভেঙে পালাল তা নিয়ে৷ কিন্ত্ত পুলিশের গুলিতে তাদের মৃত্যু নিয়ে কোনও তদন্ত হবে না৷ আর যাঁরা এই সব প্রশ্ন করছেন, তাঁদের সরাসরি জঙ্গিদের দলে ফেলে দিয়ে বিজেপির নেতা ও মন্ত্রীরা দিনভর টুইট করে গিয়েছেন যে, সেনা মারা গেলে কেউ কোনও কথা বলেন না৷ আর জঙ্গি মারা গিয়েছে বলে বিরোধী নেতারা প্রশ্নের ঝড় বইয়ে দিচ্ছেন৷ এঁরা সকলে জঙ্গিদের পক্ষে৷ বোঝাই যাচ্ছে, এই বক্তব্যের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের আবেগ ফের উস্কে দিতে চাইছে যা বিজেপি, যা উরির ঘটনার পরেও করা হয়েছিল গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে৷ কোন কোন প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না? এক, মঙ্গলবার ঘটনার পর মধ্যপ্রদেশ পুলিশের আইজি বলেছিলেন, আট জঙ্গি জেল ভেঙে পালানোর কিছুক্ষণ পর গ্রামবাসীরা খবর দেয়৷ সেই মতো নিরাপত্তা বাহিনী যায়৷ তাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় সিমির আট জঙ্গির৷ তাতেই তারা মারা যায়৷ কিন্ত্ত এর পর মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিং বলছেন, পুলিশ জঙ্গিদের ট্র্যাক করে তাদের কাছে পৌঁছে যায়৷ তা হলে ঠিক কী হয়েছিল?
কেন্দ্র পাশে দাঁড়ালেও শিবরাজ সরকার কিছুতেই অস্বস্তি এড়াতে পারছে না। ঘটনার পরে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা কেটে গেলেও ঘটনার টুকরো টুকরো অংশ জুড়ে নিখুঁত একটা চিত্রনাট্য তুলে ধরতে কার্যত ব্যর্থ মধ্যপ্রদেশ সরকার। উল্টে প্রশাসন ও রাজ্যের মন্ত্রীদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব হাওয়া জুগিয়েছে ভুয়ো সংঘর্ষের তত্ত্বেই। এরই মধ্যে শিবরাজের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ওই বন্দিদের মৃত্যু নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে তারা। চাপের মুখে শিবরাজ সরকার এর তদন্তভার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা তথা এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশ্ন শুধু ৮ জেলছুটের মৃত্যু নিয়ে নয়। একসঙ্গে এত জনের পালিয়ে যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন কম নয়। বিশেষ করে ভোপালের কেন্দ্রীয় কারগারটি যেখানে নিরাপত্তা ও পরিষেবার দিক দিয়ে দেশের সেরা জেল হিসেবে আইএসও শংসাপত্র পেয়েছিল বারো বছর আগেই।
গ্রামবাসীরা খবর দিয়েছিল নাকি পুলিশ টের পেয়ে তাড়া করে গিয়েছিল? প্রশ্ন দুই, জঙ্গিরা কেমন করে পালাল? জেলমন্ত্রী কুসুম মেহবেলে বলছেন, কী করে ওরা পাঁচিল বেয়ে উঠল, তা তিনি জানেন না৷ সিসিটিভি ক্যামেরা কেন খারাপ ছিল ? তা-ও আবার তিন দিন ধরে? কারামন্ত্রীর জবাব, ‘বলছি তো, আমাদের তরফে বেশ কিছু খামতি ছিল৷ তদন্তের পর সব কিছু পরিষ্কার হবে৷’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবার বলছেন, জেলের বাইরের দিকে সিসিটিভি ক্যামেরাই ছিল না! প্রশ্ন তিন, নতুন পোশাক, নতুন জুতো কী করে পেল জঙ্গিরা? কারামন্ত্রীর কাছে এর কোনও জবাব নেই৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, তারা জেলে বসেই পেতে পারে৷ জেলে তারা সাধারণ পোশাকেই থাকত৷ কারণ, ওরা ছিল বিচারাধীন বন্দি, অপরাধী নয়৷ কারামন্ত্রী বলছেন, এ সবই তদন্তসাপেক্ষ৷ আবার এমনও হতে পারে বাইরে ওরা পোশাক পেয়েছে৷ অস্ত্রশস্ত্র কী ভাবে পেল জঙ্গিরা? কারামন্ত্রী বলছেন, এটাও তদন্ত করে দেখতে হবে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানাচ্ছেন, এদের কাছে অস্ত্র ছিল৷ কী করে পেল, কারা দিল, সেটা তদন্ত করে দেখতে হবে৷ প্রশ্ন চার, জেলরক্ষী রামশঙ্কর যাদবকে কী করে মারল জঙ্গিরা? চব্বিশ ঘণ্টা আগে বলা হয়েছিল, জেলের থালা, গ্লাস দিয়েই তাঁর গলা কেটে দেয় দুষ্কৃতীরা৷ কিন্তু কারামন্ত্রী জানাচ্ছেন, চপার দিয়ে তাঁকে মারা হয়েছে৷ যাদব তো ছুটি নিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁকে তো জোর করে ডাকা হয়েছিল লোক কম বলে? কারামন্ত্রীর জবাব, এ রকম কোনও তথ্য তাঁর জানা নেই৷ তদন্ত করা হলে তা জানা যাবে৷ প্রশ্ন পাঁচ, জঙ্গিরা যে জায়গায় মারা গিয়েছে, সেটা হল উঁচু জায়গা৷ পুলিশ নীচে ছিল৷ এ রকম ক্ষেত্রে যারা ওপরে থাকে, তাদের অবস্থানগত একটা সুবিধা থাকে (স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভান্টেজ)৷ তাদের হাতে অস্ত্র থাকলে, তারা পুলিশকে যথেষ্ট বেগ দেবে৷ কিন্ত্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, এটা তো পুলিশের কৃতিত্ব৷ তারা জঙ্গিদের দ্রুত অপারেশন চালিয়ে মেরে ফেলে৷ মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের বক্তব্য, এটা তো নিরাপত্তা বাহিনীর কৃতিত্ব৷ অবস্থানগত অসুবিধার কথা কেউ মানতে চাননি৷
প্রথম প্রশ্ন: কুখ্যাত বন্দিরা থাকা সত্ত্বেও গোটা জেল চত্বরের সিসিটিভি কেন খারাপ ছিল?
প্রশ্ন দুই: বলা হচ্ছে, জেলের ৭০ জন রক্ষীর মধ্যে ৩০ জন দীপাবলির ছুটিতে ছিল। বন্দিদের পালিয়ে যাওয়ার জন্যই নিরাপত্তায় ঢিল দেওয়া হয়েছিল?
প্রশ্ন তিন: সিমি সদস্যদের উপরে নজর রাখার ভার ছিল যাঁদের, তাঁরা নাকি সে রাতে ঘুমাচ্ছিলেন। এটা কি ইচ্ছাকৃত? গাফিলতি যে হয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের জেলমন্ত্রী কুসুম মেহদালে। তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘এটা সত্যি সিসিটিভি খারাপ ছিল। এটা নিরাপত্তার বড় খামতি। জওয়ানরা কেন ঘুমোচ্ছিলেন, তদন্ত হবে।’’
প্রশ্ন চার: বন্দিরা চাবি পেল কী করে? প্রাথমিক তদন্তে বলা হচ্ছে, জঙ্গিরা টুথব্রাশে পেরেক লাগিয়ে চাবি বানিয়ে ফেলেছিল। আজ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ স্বীকার করেছেন, জঙ্গিরা, বাসন, জিভ-ছোলা, টুথব্রাশ দিয়ে মাস্টার চাবি ও অনান্য চাবির নকল বানিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু যেটা কারও হজম হচ্ছে না, তা হল, জেলের সব থেকে সুরক্ষিত এলাকা অ্যান্টি টেরর সেলের চাবি জোগাড় হল আর কারারক্ষীরা কিছু জানতে পারল না! রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহের স্বীকারোক্তি, ‘‘জেল ভাঙার বিষয়ে কোনও আগাম গোয়েন্দা তথ্য ছিল না।’’
প্রশ্ন পাঁচ: বলা হচ্ছে জেলছুটদের কাছ থেকে ৭টি বন্দুক ও গুলি পাওয়া গিয়েছে। এগুলি তারা পেল কী ভাবে? জেলের ভিতরেই কি অস্ত্র পেয়েছিল জঙ্গিরা? নাকি বাইরে আসার পরে কারও কাছ থেকে তারা এগুলি পেয়েছিল? পুলিশের দাবি, পালানোর সময়ে একা বা একাধিক ব্যক্তি তাদের জন্য রাস্তায় বন্দুক নিয়ে অপেক্ষা করেছিল। তারাই হাতিয়ার জুগিয়েছে। পুলিশ ঘিরে ফেললে আত্মসমর্পণের বদলে তারা ৬ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পুলিশকে বাধ্য হয়ে গুলি ছুড়তে হয়।
প্রশ্ন ছয়: পুলিশের এই বক্তব্যও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। সাহায্যকারীরা কেন শুধু অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করল? বন্দুক যারা জোগাল, তারা কেন গাড়িতে করে আরও দূরে পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করল না?
প্রশ্ন সাত: জঙ্গিরা অস্ত্র পাওয়ার পরেও কেন গাড়ি বা ট্রাক ছিনতাই করে দূরে পালানোর চেষ্টা করল না? কেন জেল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নির্জন প্রান্তরে গিয়ে পৌঁছল?
প্রশ্ন আট: আট জনকেই একসঙ্গে পাওয়া গেল কেন? প্রশিক্ষণের সময়েই জঙ্গিদের শেখানো হয় রক্ষীদের নজর এড়াতে কী ভাবে দু’-তিন জনের দল বানিয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়তে হয়। যাতে পিছু ধাওয়াকারীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন নয়: মৃতদের পরনে ছিল টি-শার্ট, জিন্স ও পায়ে স্নিকার্স। বিচারধীন বন্দিরা সাধারণত জেলের পোশাকে থাকে। ওই জামাকাপড় তবে এল কোথা থেকে? এই প্রশ্নে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহের দাবি, ‘‘বিচারাধীন বন্দি হিসেবে তাদের সাধারণ পোশাক পরার অধিকার ছিল।’’
প্রশ্ন দশ: এনকাউন্টারের দরকার ছিল কি? বিশেষ করে যখন জঙ্গিদের চার দিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছিল বলেই ভিডিওতে শোনা গিয়েছে। মধ্যপ্রদেশ পুলিশের আইজি যোগেশ চৌধুরির দাবি, ‘‘ওই সিমি সদস্যরা পুলিশের দিকে গুলি ছোড়ায় বাধ্য হয়ে পুলিশকে গুলি ছুড়তে হয়।’’
প্রশ্ন এগারো: নিহতদের কপালে ও বুকে গুলির ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। অথচ ওরা ছিল পাহাড়ের উপরে। সুবিধেজনক অবস্থানে। ফলে নিচ থেকে তাদের কপাল ও বুক লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে কী ভাবে নিরাপত্তারক্ষীরা হত্যা করল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
শিবরাজ এখন এই এক রাশ প্রশ্নের মুখে দিশাহারা। এর মধ্যেই বিতর্ক বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর আর্জি, ‘‘দোহাই সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করবেন না এ নিয়ে।’’ বিরোধীরা অবশ্য মেরুকরণেরই মেঘ দেখছেন এ
প্রশ্ন দশ: এনকাউন্টারের দরকার ছিল কি? বিশেষ করে যখন জঙ্গিদের চার দিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছিল বলেই ভিডিওতে শোনা গিয়েছে। মধ্যপ্রদেশ পুলিশের আইজি যোগেশ চৌধুরির দাবি, ‘‘ওই সিমি সদস্যরা পুলিশের দিকে গুলি ছোড়ায় বাধ্য হয়ে পুলিশকে গুলি ছুড়তে হয়।’’
প্রশ্ন এগারো: নিহতদের কপালে ও বুকে গুলির ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। অথচ ওরা ছিল পাহাড়ের উপরে। সুবিধেজনক অবস্থানে। ফলে নিচ থেকে তাদের কপাল ও বুক লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে কী ভাবে নিরাপত্তারক্ষীরা হত্যা করল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
শিবরাজ এখন এই এক রাশ প্রশ্নের মুখে দিশাহারা। এর মধ্যেই বিতর্ক বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর আর্জি, ‘‘দোহাই সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করবেন না এ নিয়ে।’’ বিরোধীরা অবশ্য মেরুকরণেরই মেঘ দেখছেন এ
বিকল সিসিটিভি, বিতর্কে ভোপাল জেল
অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়, দৈনিক এই সময়সিমি জঙ্গিদের এনকাউন্টার নিয়ে রাজনৈতিক তরজা ক্রমেই বাড়ছে৷ এরইমধ্যে ভোপালের সেন্ট্রাল জেল-এর ‘বিকল সিসিটিভি’ বিতর্কের আগুনে আরও ইন্ধন জুগিয়েছে৷ জানা গিয়েছে জঙ্গিদের জেল পালানোর দিনতিনেক আগে থেকেই জেলের অধিকাংশ সিসিটিভি অকেজো ছিল৷ সেন্ট্রাল জেলে সিমি জঙ্গির সংখ্যা ছিল মোট ৩৫৷ নিরাপত্তার কারণে মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন জেল থেকে সিমি জঙ্গিদের ভোপালে নিয়ে আসা হয়৷ অথচ সেই সেন্ট্রাল জেলের নিরাপত্তা এত ঢিলেঢালা হয় কী করে? নাকি জেনেবুঝেই সিসিটিভিগুলি খারাপ করে রাখা হয়েছিল? জঙ্গিদের ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে এতবড় ফাঁক থেকে গেল কী করে? এবার কিন্তু এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে৷ উত্তরে মধ্যপ্রদেশের কারামন্ত্রী কুসুম মেহেদেলে বলেন , ‘আমরা মানছি যে কিছু জায়গায় সমস্যা ছিল, কিছু জায়গায় ফাঁক থেকে গিয়েছিল৷ প্রাথমিক তদন্তে এই তথ্যই উঠে এসেছে৷ জেলের ভিতরে কয়েকটা সিসিটিভি ক্যামেরা খারাপ ছিল এ কথা সত্যি৷ কেন ওই ক্যামেরাগুলি মেরামত করা হয়নি তা আমরা তদন্ত করে দেখছি৷ এ বিষয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’
মহম্মদ সালিক, মহম্মদ খালিদ, আকিল, আব্দুল মজিদ, আমজাদ, মুজিব শেখ, মেহবুব গুড্ডু ও জাকির সাদিক--- আট জঙ্গিই ভোপালের সেন্ট্রাল জেলে আসার আগে থেকেই নিরাপত্তারক্ষীদের বাড়তি নজরদারিতে ছিলেন৷ এই মোস্ট ওয়ান্টেড সিমি জঙ্গিদের মধ্যে চারজন গুড্ডু, আমজাদ, জাকির এবং মহম্মদ খালিদ এর আগেও জেল পালানোয় হাত পাকিয়েছিল৷ সেবার ২০১৩ সালে মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়া জেল থেকে পালিয়েও শেষরক্ষা হয়নি৷ ফের পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় কুখ্যাত চার জঙ্গি৷ এরপরেই তাদের খান্ডোয়ার জেল থেকে সরিয়ে ভোপালের সেন্ট্রাল জেলে নিয়ে আসা হয়৷ কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনীতে ঘেরা ভোপাল সেন্ট্রাল জেল৷ সেখানে ২৪ ঘণ্টার নজরদারির জন্যেই এই বন্দোবস্থ হয়েছিল৷ কিন্তু ভোপাল সেন্ট্রাল জেলেও এই এই চারজনকে নিয়ে কম সমস্যায় পড়তে হয়নি৷ জেল থেকে আদালতে হাজিরার সময়ে বেশ কয়েকবার প্রহরারত পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিল এই চারমূর্তি৷ শুধু তাই নয় আদালতের মধ্যেও আইনজীবীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করত জঙ্গিরা৷ বাদ পড়তেন না বিচারকরাও৷ জঙ্গিদের চিৎকার চেঁচামেচিতে প্রায়ই আদালতের কার্যকলাপ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখতে হত৷ বাধ্য হয়েই বিচারকরা জঙ্গিদের জেল থেকে বের করে আদালতে নিয়ে আসার বিষয়ে আপত্তি জানান৷ প্রয়োজনে জেলের ভিতরেই জঙ্গিদের রেখে ভিডিও কনফারেন্সিং -এর মাধ্যমে শুনানি চালাতে বলেছিলেন বিচারকরা৷ অভিযোগ এতকিছুর পরেও টনক নড়েনি জেল কর্তৃপক্ষের৷ এমন খতরনাক জঙ্গিদের নিরাপত্তা যে মোটেই আঁটোসাঁটো ছিল না, তা জেল পালানো থেকেই পরিস্কার৷ অবশ্য জঙ্গিরা আদৌ জেলথেকে পালিয়েছিল কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেবিভিন্ন মহল৷
ভারতীয় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শিকার এই মুসলিমরা!
উত্তরমুছুন