বুদ্ধদেবের জন্য দিল্লি থেকে বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনলো মমতা
নতুন বুলেটপ্রুফ গাড়িতে উঠছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য |
দৈনিক এই সময়, কলকাতা
পশ্চিবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্য ১৪৫০ কিলোমিটার দূর থেকে গাড়ি নিয়ে এল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন৷ কয়েক বছর টানাপোড়েনের পর অবশেষে সোমবার বুদ্ধদেবের জন্য বিকল্প বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনল রাজ্য প্রশাসন৷ যদিও একেবারে ব্র্যান্ড নিউ বুলেটপ্রুফ গাড়ি দেওয়া হয়নি তাঁকে৷আলিমুদ্দিন (সিপিএম দপ্তর) সূত্রের খবর, পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে হঠাৎ নতুন গাড়ি দেখে একটু চমকেই গিয়েছিলেন বুদ্ধদেব৷ খোঁজ নিতেই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা জানান, এই গাড়িটি তিনি দিল্লিতে ব্যবহার করতেন৷
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন দিল্লিতে গিয়ে বুদ্ধদেব যে বুলেটপ্রুফ গাড়িটি ব্যবহার করতেন, সেটি গত ছ’-সাত বছর দিল্রির বঙ্গভবনেই পড়েছিল৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ব্যবহার করতেন বলে সেই গাড়ি তেমন ব্যবহারও হয়নি গত ক’বছরে৷ বুদ্ধদেবের পুরোনো গাড়ির মতো এটিরও নম্বরের শেষ তিনটি অঙ্ক ০০১৷ এই গাড়িটি দিল্লি থেকে কলকাতায় নিয়ে এসেছে রাজ্য প্রশাসন৷ গাড়িটি ভবানীপুরে এলগিন রোডে রাজ্য সরকারের কার -পুলে রাখা ছিল৷ কিছু মেরামতির কাজ করিয়ে সোমবার থেকে এই গাড়িটি বরাদ্দ হয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য৷ সোমবার সেই গাড়ি চড়েই আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের পার্টি অফিসে আসেন বুদ্ধদেব৷
এই সময়-এর মত: হয়তো কিছুটা বিলম্ব হল৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর যাতায়াতের সুবিধার জন্য গাড়ি বদলে সুস্থ রুচিবোধ ও সৌজন্যের পরিচয় দিল মমতা সরকার৷ শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক মতভেদ থাকতেই পারে কিন্তু পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শিষ্টাচার বজায় রাখাই এক সময় বঙ্গ রাজনীতির অঙ্গ ছিল৷ আশা রইল এই পদক্ষেপ সেই ঐতিহ্যই ফিরিয়ে আনবে৷
জেড ক্যাটেগরি নিরাপত্তা পাওয়া প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেবের কনভয়ের যে বুলেটপ্রুফ গাড়িটি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ব্যবহার করেন, সেটি দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল৷ প্রায় তামাদি হয়ে যাওয়া গাড়িটি একাধিকবার দুর্ঘটনায় পড়েছে৷ কখনও হাইওয়েতে মাঝরাস্তায় গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ কখনও বা আবার মল্লিকবাজার মোড়ে আগুন লেগেছে ইঞ্জিনে৷ তা সত্ত্বেও বুদ্ধদেবের এই গাড়িটি বদল করা হচ্ছিল না৷ ফলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সুরক্ষা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে একাধিকবার৷পুরোনো বুলেটপ্রুফ গাড়িটি বারবার খারাপ হলেও এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি বুদ্ধদেব৷ সিপিএমের তরফেও সরকারি ভাবে কোনও অভিযোগ করা হয়নি৷ কেবলমাত্র বুদ্ধদেবের সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা এবং তাঁর প্রাক্তন গাড়িচালক ওসমান একাধিকবার সরকারি কার-পুলে অভিযোগ করেছেন৷ যদিও তাতে লালবাজার বা নবান্নের কর্তাদের তেমন হেলদোল ছিল না৷
এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ গাড়ি বদলের নেপথ্যে মূল কারণ হল, আগের গাড়িটি আর চলাচলের যোগ্যই প্রায় ছিল না৷ বুদ্ধদেবের গতিবিধি এখন পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে আলিমুদ্দিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ৷ এই কয়েক কিলোমিটার যেতেই আগের বুলেটপ্রুফ গাড়িটির ইঞ্জিন এতই গরম হয়ে যাচ্ছিল, যে সেটি ঠান্ডা করতে নাজেহাল হতে হত চালককে৷ বুদ্ধদেবের প্রাক্তন গাড়িচালক ওসমান সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর কার-পুলের অন্য চালকদের উপর বর্তায় বুদ্ধদেবের গাড়ি চালানোর দায়িত্ব, যাঁরা প্রায় তামাদি হতে বসা গাড়িটি নিয়ে নাজেহাল হতেন প্রায়দিনই৷ সেই জায়গায় বিকল্প গাড়ি আসায় বুদ্ধদেবের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন৷
যাওয়া-আসার পথে সাধারণত গাড়িতে এফএমে খবরও শোনেন বুদ্ধদেব৷ এ দিনও অভ্যাসবশত গাড়িতে উঠে বুদ্ধদেব চালককে বলেন, খবর চালানোর জন্য? তখন তাঁকে জানানো হয়, এ গাড়ির এফএম রেডিয়োটি কাজ করছে না৷ রাজ্য সরকারের কার-পুলে এখন প্রায় সব বুলেটপ্রুফ গাড়িই এসইউভি৷ বুলেটপ্রুফ অ্যাম্বাসাডর প্রায় নেই বললেই চলে৷ কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এখনও অ্যাম্বাসাডরেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন৷ বেশি দামের উঁচু গাড়ি তেমন পছন্দ নয় বুদ্ধদেবের৷ তাঁর এই পছন্দ-অপছন্দ আঁচ করেই প্রায় সাড়ে চোদ্দশো কিলোমিটার দূর থেকে লালকিল্লা এক্সপ্রেসে চড়িয়ে আনা হয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গাড়িটি৷
ভারতীয় রাজনীতিতে বিরোধী দলের রাজনীতিকদের প্রতি সৌজন্যতাবোধ এখনও টিকে আছে ।
উত্তরমুছুন