‘নগ্ন জাতীয়তাবাদ’: ট্রাম্পের জয়কে ওবামার ব্যাখ্যা
সংবাদমাধ্যম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ বিদেশ সফরে বেরিয়ে ‘নগ্ন জাতীয়তাবাদ’-এর বিরুদ্ধে সতর্ক হওয়ার কথা বললেন বারাক ওবামা৷ ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়কে ব্যাখ্যা করলেন মানুষের ক্রোধ ও ভয়কে কাজে লাগিয়ে ভোট টানার সাফল্য হিসেবে৷ আথেন্সে একটি সাংবাদিক বৈঠকে ওবামা বলেন, ‘বিশেষ কোনও নির্বাচন বা আন্দোলন বাদ দিয়েই বলছি, সত্যিই আমার মনে হয়, আমরা-ওরা বিভাজনকে ঘিরে গড়ে ওঠে যে উগ্র, নগ্ন জাতীয়তাবাদ বা জাতি -পরিচয় , তার উত্থানের বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে৷ যেখানে যেখানে আমাদের মধ্যে সাদৃশ্য ধরা পড়ে, সেটাই মানবজাতির ভবিষ্যত্ ও বিশ্বের ভবিষ্যত্ নির্ধারণ করবে৷ যা আমাদের বিচ্ছিন্ন করে এবং সংঘাতের দিকে এগিয়ে দেয়, সেটা নয়৷’ বিশ্ব জুড়েই এ ধরনের নগ্ন জাতীয়তাবাদী আবেগ শক্তিশালী হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ ব্রেক্সিট এবং ট্রাম্পের জয়ের পিছনেও সেই ধরনের আবেগের ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করেন৷
গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সাইপ্রাসকে পাশে নিয়ে ইউরোপের কাছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত জয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ওবামা৷ তিনি বলেন, আমেরিকাবাসীর ভয় আর রাগকে কাজে লাগিয়েছেন ট্রাম্প৷ মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, রিপাবলিকান জনপ্রতিনিধি এবং আধিকারিকরা বার বার যে কথা বলছিলেন বা সংবাদমাধ্যমে প্রচার করছিলেন , তা যে সব সময় বাস্তব ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল , এমনটা নয়৷ কিন্ত্ত মানুষকে তা প্রভাবিত করছিল৷ কারণ , বিশ্বায়ন এবং যান্ত্রিকায়ন নিয়ে আমেরিকার মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভীতি রয়েছে৷ এই বিষয়টাকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছেন ট্রাম্প৷
গ্রীসের প্রেসিডেন্ট দিমিত্রিওস প্যান্ডারমালিসের সঙ্গে ওবামা |
আমেরিকায় এ ধরনের আবেগ যে বিভাজনের মানসিকতার জন্ম দিয়েছে, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমেরিকায় যখন গায়ের রং, ধর্ম বা জাতি অনুযায়ী আমরা নিজেদের ভাগ করতে শুরু করি , তখন কী হয় , তা সবার জানা৷ এই প্রবণতা খুবই বিপজ্জনক৷ শুধু বৈষম্যের শিকার হওয়া কোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য নয় , পুরো দেশের পক্ষেই৷ আমরা যদি কৃষ্ণাঙ্গ বা ল্যাটিনো বা এশীয় বা সমকামী বা মহিলাদের মার্কিন জীবনগঠনের কাজে পুরোপুরি অংশ নিতে না দিই , তা হলে দেশ হিসেবে নিজেদের ক্ষমতা আমরা বুঝতেই পারব না৷’ এর আগে ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর প্রথম সাংবাদিক বৈঠকেও ঐক্যের বার্তার উপর জোর দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ তবে নিউ ইয়র্কের কোটিপতিকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত বলে সেখানে মন্তব্য করেন তিনি৷ ভোটের আগে ট্রাম্পকে তীব্র ভাবে আক্রমণ করলেও প্রেসিডেন্ট ইলেক্টকে পূর্ণ সহযোগিতারই প্রতিশ্রীতি দিয়েছেন ওবামা৷ এই ক’দিন সব ধরনের বিতর্কিত প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন৷সোমবার সাংবাদিকদের বারংবার জিজ্ঞাসা সত্ত্বেও কোনও মন্তব্য করেননি৷ ট্রাম্পের সমালোচনাও শোনা যায়নি তাঁর মুখে৷ যদিও সেখানেও সংহতির উপর জোর দিয়ে তিনি বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট সবার কাছে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেবেন বলে আশা করেন তিনি৷ এ দিন কিন্তু সেখান থেকে কিছুটা সরে এসে ‘নগ্ন জাতীয়তাবাদ’ এবং বিভাজনের রাজনীতির কথা বলে ওবামা তাঁর উত্তরসূরিকে একটা মোক্ষম খোঁচা দিলেন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন