মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৬

ইন্টারনেটে নজরদারিতে চীনের নয়া তথ্যপ্রযুক্তি আইন, সমালোচনা

বহির্বিশ্ব থেকে নিজেদের আরও আড়াল করতে নয়া তথ্যপ্রযুক্তি আইন আনল চীন৷ সোমবার সে দেশের সংসদ এই আইনে সম্মতি দিয়েছে৷ কমিউনিস্ট সরকার জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা সার্বভৌমত্ব রক্ষাই এই আইনের লক্ষ্য৷ নয়া আইনের প্রবল বিরোধিতা করেছে আন্তর্জাতিক বণিক মহল৷

তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বকে উন্মুক্ত করে দিলেও সেখানে পাঁচিল তুলেছে চীন৷গ্রেট ফায়ারওয়াল’- সে দেশের ইন্টারনেট দুনিয়ায় বজ্র আঁটুনি৷ সেই আঁটুনি আরও কঠোর হতে চলেছে৷ ২০১৭- জুন থেকে নয়া তথ্যপ্রযুক্তি আইন কার্যকর হতে চলেছে চীনে৷ সোমবার সংসদে পাশ হওয়া আইনের লক্ষ্য কী? চীন সরকার মনে করে, ইন্টারনেটে তথ্যের মহাসড়কে তারা জুড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি বাড়ছে৷ যে কোনও দিন সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে পারে৷ বহিঃশত্রু বা সন্ত্রাসবাদীরা নিশানা করতে পারে চীনকে৷ তাই সরকার চায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের গতিবিধির উপর আরও কড়া নজর রাখতে৷ শুধু চীনের ভিতর নয়, বিদেশ থেকেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাতে কমিউনিস্ট সাম্রাজ্যে শত্রুপক্ষ সিঁদ কাটতে না পারে, সে জন্য নয়া আইনকে হাতিয়ার করতে চায় ড্রাগনের দেশ৷  

চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম জিনহুয়া জানিয়েছে, এই আইনে শুধু সংগঠন নয়, ব্যক্তির উপরও কড়া হচ্ছে নজরদারি৷ কেউ যাতে অশালীন ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিতে না পারে, সে জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে৷ কোনও ধর্ম সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টাকে নয়া ব্যবস্থার ফলে রুখে দেওয়া যাবে বলে চীন আশাবাদী৷ 

চীনের নয়া আইন প্রণয়নের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ দীর্ঘদিন ধরেই চীনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের উপর রাষ্ট্রের কড়া নজরদারি রয়েছে৷ ফেসবুক টুইটার বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠলেও দুনিয়ার সবচেয়ে জনবহুল দেশে তা অধরা৷ চীনের নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে, যার নাম উইবো৷ সেখানেও ইচ্ছা মতো যে কোনও লেখা বা ছবি পোস্ট করা যায় না৷ বিশেষত কমিউনিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে কিছু লেখা সম্ভব নয়৷ অন্যান্য ওয়েবসাইটেও নজর রাখে চীন সরকার৷ জন্য যে ফায়ারওয়াল ব্যবহার করা হয়, তাকে সাইবার দুনিয়াগ্রেট ফায়ারওয়ালবলে৷ তা সত্ত্বেও বাড়তি নজরদারির জন্য নয়া আইনের প্রয়োজন কেন বোধ করল চীন?  

ইন্টারনেট থেকে আর কী বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে তারা, সেটা আইনের ভাষ্যেই স্পষ্ট৷ সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিলোপ, জাতীয় সংহতির ক্ষতি দেশভাগের আশঙ্কায় ভুগছে কমিউনিস্ট শাসকেরা৷ পশ্চিমের সমালোকরা বলছেন, তিয়েনানমেনের ভূত এখনও চীনের মাথায় রয়েছে৷ এখন গণতন্ত্রের দাবিতে সেই বিক্ষোভের মতো পথে নেমে আন্দোলন না করলেও চলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দানা বাঁধতে পারে প্রতিবাদ৷ আদতে তাতেই কি শঙ্কিত চীন সরকার?

পাশ হওয়া আইনের খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পর ৪০টি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা প্রতিবাদ জানিয়েছিল৷ তারা সরকারের কাছে লিখিত প্রতিবাদও জমা দেয়৷ নয়া ব্যবস্থায় বাণিজ্যিক সংস্থার গোপন তথ্য সরকারের নাগালে এসে যাবে, এই আশঙ্কাতেই আপত্তি৷ কিন্তু, আপত্তি অগ্রাহ্য করে খসড়ার বিতর্কিত ধারাগুলি নয়া আইনে রাখা হয়েছে৷ চীনে মার্কিন বণিকসভার চেয়ারম্যান জেমস জিমারম্যান বলেন, ‘এই আইন ধোঁয়াশায় ভরা৷ কর্তৃপক্ষের আইন সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত৷হিউম্যান রাইটস ওয়াচের চীনা শাখার প্রধান সোফি রিচার্ডসনের মন্তব্য, ‘আন্তর্জাতিক স্তরে নয়া আইনের বিরোধিতা করা হলেও চীন সরকার তা শোনেনি৷ সব সমালোচনায় আপাতত চীনের বিশেষ হেলদোল নেই৷ সংসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইয়াং হেকিংয়ের বক্তব্য, ‘চীন ইন্টারনেটের মহাশক্তি৷ তাই চীনের ঝুঁকিই সবচেয়ে বেশি৷ সে কারণেই আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে ইন্টারনেটের ফাঁকফোকর বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে৷

1 টি মন্তব্য:

  1. ইন্টারনেটে নজরদারির বিষয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা নেয়ার সুযোগ আছে!!

    উত্তরমুছুন