শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৬

৬২ বছরের দাম্পত্য জীবনের প্রান্তে এসে ওঁদের বিচ্ছিন্ন জীবন!




৬২ বছরের বিবাহিত জীবনের প্রান্তে এসে আজ ওঁদের বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। দুজনের করুণ মিনতিকে অগ্রাহ্য করেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে দুটো আলাদা  শুশ্রুষা কেন্দ্রে।

তাঁরা কাঁদছেন। বয়সের ভারে ন্যুব্জ দুটো শরীর। অশক্ত, অসমর্থ্য হাতে-হাত। ওঁরা কাঁদছেন। এ ভাবেই তো হাতে হাত রেখে কেটেছে ছ’দশকেরও বেশি। ৬২টা বসন্তে একসঙ্গে কত গান, কত যুদ্ধ-লড়াই, কত প্রেম-অপ্রেম। আজও একের হাতে শক্ত করে ধরা আর একটি হাত। তবু নিরুপায় চোখের জলের ধারা যেন বাগ মানতে চাইছে না। তাই তাঁরা কাঁদছেন।

পরিবারও চায়নি এমনটা হোক। বারবার অনুরোধ উপরোধ করেও দুজনকে একসঙ্গে রাখার মতো কোনও জায়গা মেলেনি কোনও কেয়ার হোমে। হৃদয়টাই যেন ভেঙে দু’টুকরো করে দেওয়া হয়েছে এই বয়েসে এসে। দেখা হতেই তাই বাঁধ মানেনি চোখের জল। অসহায় দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সেই ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দিয়েছিলেন নাতনি। সেই ছবিই এখন ভাইরাল।

কানাডার ভ্যানক্যুউভরের বাসিন্দা ৮৩ বছরের ওলফার্ম গটসচক আর ৮১ বছরের অনিতা। ১৯৫৪ সালে জার্মানিতে যখন প্রথম দেখা হয়েছিল ওঁদের, ওলফার্ম যখন ২১ বছরের তরুণ আর অনিতা আঠারোর সদ্য তরুণী। বিয়ে হয়েছিল চার মাস পরেই। তার পর ৬২টা বছর কেউ কাউকে ছেড়ে থাকেননি। আর বয়স যত নিয়ে যাচ্ছে জীবনের শেষ প্রান্তের দিকে, ততই যেন একে অন্যকে আরও আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইছেন দুজনে। কিন্তু সেই একসঙ্গে চলার পথটাই যে কেড়ে নিল নানান প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মকানুন!

সমস্যার শুরু ৮ মাস আগে। ডিমেনসিয়ায় আক্রান্ত হন ওলফার্ম। একা হাতে ওলফার্মের যত্ন নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না অনিতার পক্ষে। বাধ্য হয়েই ওলফার্মকে পাঠাতে হয় কেয়ার হোমে। কিন্তু মন মানতে চায় না অভিন্ন দুই হৃদয়ের। চিকিৎসকের কাছ থেকে একটু বেশি সময় হোমে থাকার অনুমতি আদায় করেন অনিতা। এদিকে প্রত্যেকদিন একটু একটু করে স্মৃতিশক্তি খোয়াচ্ছেন ওলফার্ম। বেশিরভাগ কথাই মনে রাখতে পারেন না। তবে রোজ নিয়ম করে অপেক্ষা করেন স্ত্রীর জন্য। কবে আবার তাঁরা একসঙ্গে থাকবেন সেই আশায় দিন গোনেন।

তাঁদের একসঙ্গে রাখতে কম লড়াই করেনি গোটা গটসচক পরিবার। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও হোম কর্তৃপক্ষের থেকে ওলফার্ম আর অনিতাকে একসঙ্গে রাখার অনুমতি জোগাড় করতে পারা যায়নি।

২৩ অগস্টও রোজকার মতোই স্বামীকে দেখতে নার্সিংহোমে এসেছিলেন অনিতা। সেখানে এসে জানতে পারেন ওলফার্মের রিপোর্টে লিম্ফোমা (এক ধরনের ব্লাড ক্যানসার) ধরা পড়েছে। এরপরেই আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারেন না অনিতা। স্বামীর সঙ্গে দেখা হতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দু’জনে। তাঁদের অসহায়ভাবে কাঁদতে দেখে স্থির থাকতে পারেননি নাতনি অ্যাশলে বার্টইক। তাঁর প্রিয় ‘ওমি’ আর ‘ওপি’র ছবি তুলে পোস্ট করেন ফেসবুকে। ক্যাপশনে লেখেন, ‘আমার তোলা সবচেয়ে দুঃখের ছবি’। শুধু ছবি পোস্ট করাই নয়, ছবির সঙ্গে জুড়ে দেন তাঁদের অসাহয়তার কাহিনীও। স্বাস্থ্য পরিষেবার এই সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে সকলের কাছ থেকে সমর্থনও চান অ্যাশলে। এরপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইর‌্যাল হয়ে যায় সেই ছবি।

জীবনের শেষ কটা দিন কি দু’জনকে একসঙ্গে থাকতে দেওয়া যায় না? হোম কর্তৃপক্ষের কথা, ‘আমরা সব সময়েই চেষ্টা করি যাতে বৃদ্ধ দম্পতিকে এক সঙ্গেই রাখা যায়। কিন্তু স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে সব সময় তা সম্ভব হয় না’।

তবু অ্যাশলের আশা, শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ ওঁর দাদু, ঠাকুমাকে আবার একসঙ্গে করে দেবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন