মর্গে রাখা মৃতদেহকে দেখে নিজের মেয়ে বলে সনাক্ত করেছিলেন বাবা৷ ময়নাতদন্তের পর সৎকারও সেরে ফেলেছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের দাসপুরের এই পরিবার৷ তার পরই ঘরে ফিরে এল তাঁদের মেয়ে৷ আর আঁতকে উঠলেন কিশোরীর মা-বাবা --- কাকে দাহ করে এলাম আমরা?
মেয়ে ঘরে ফেরায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও, অন্যের দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার আফশোস যাচ্ছে না ছা-পোষা এই পরিবারের৷ তাই মৃত তরুণীর আত্মার শান্তি কামনায় সব রকম ধর্মীয় বিধি মানছে পরিবারটি৷
গত ৮ আগস্ট থেকে দাসপুরের এই পরিবারের কিশোরী মেয়ে নিখোঁজ৷ কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে অপহরণ করে পাচার করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি৷ ওই ঘটনায় পাচারে জড়িত সন্দেহে পাশের গ্রামের টুম্পা পাল নামে এক তরুণীকে বেঁধে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলেও দেয় গ্রামবাসী৷ তাঁদের পাচার হওয়া মেয়েই খুন হয়েছে বলে আশঙ্কা ছিল পরিবারটির৷
২০ আগস্ট দিঘার ঝাউবন থেকে এক অজ্ঞাতপরিচয় তরুণীর দেহ উদ্ধার করা হয়৷ সংবাদপত্রে মৃতদেহের ছবি দেখে পর দিন দাসপুর থানা এলাকার এক ব্যক্তি পুলিশকে যোগাযোগ করেন৷ ২২ আগস্ট পরিবারের লোকজন কাঁথি মর্গে যায়৷ সঙ্গে নিয়ে যায় নিখোঁজ কিশোরীর ছবি৷ মৃতদেহের সঙ্গে সেই ছবির মিল আছে বলে জানায় পুলিশ৷ এর পর নানা চিহ্ন দেখে মৃতদেহ সনাক্ত করা হয়। ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে গিয়ে দাহও করে দেওয়া হয়৷
ওই দিনই দাসপুর থানার পুলিশ টুম্পা পালের মা, ভাই এবং বাচ্চু আলি নামে এক যুবককে আটক করে৷ বাচ্চুর সঙ্গে কিশোরীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে জানায় প্রতিবেশীরা৷ ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, নিখোঁজ কিশোরী বেঁচে রয়েছে৷ ২৩ আগস্ট রাতে উত্তর ২৪ পরগনার কৈখালি এলাকার একটি বাড়ি থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করে পুলিশ৷ রাতেই খবর দেওয়া হয় তার বাড়িতে৷ তার পর থেকেই অপরাধবোধে ভুগছেন কিশোরীর বাবা-মা৷ কিশোরীর মা বলছেন , ‘যার মৃতদেহ সনাক্ত করে নিয়ে এসে দাহ করা হল, যার মুখাগ্নি করল আমার ছেলে, সে তা হলে কে?’ কিশোরীর বাবার আক্ষেপ, ‘আমাদের মেয়েকে আমরা ফিরে পেলাম ঠিকই৷ কিন্তু ওই মেয়েটির (যাকে নিয়ে এসে দাহ করা হয়েছে) বাবা-মা যদি কোনও দিন সামনে এসে দাঁড়ান, কী উত্তর দেব তাঁদের?’ তাই অনাম্নী সেই তরুণীর জন্য সব নিয়মকানুন পালন করছে পরিবার৷ নিরামিষ খাচ্ছেন৷ শনিবার শ্রাদ্ধও করবেন তাঁরা৷
কিশোরীর বোন বলেন, ‘সে দিন আমিও দিঘায় গিয়েছিলাম বোনের দেহ সনাক্ত করার জন্য৷ মুখের নীচের দিকটা ক্ষত-বিক্ষত ছিল৷ নাকের উপর থেকে কপাল পর্যন্ত দেখে বোন বলেই মনে হচ্ছিল৷ দিঘা থানার পুলিশও ছবি মিলিয়ে দেখে বলল, মেয়েটি আমারই বোন৷ বোনের বুকের বাঁ দিকে একটি কালো তিলের মতো দাগ ছিল৷ মৃতদেহটিতেও তা দেখতে পেলাম৷ মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ দাসপুর থানার পুলিশ ফোন করে জানাল আমার বোন বেঁচে রয়েছে৷ যাকে মর্গ থেকে এনে দাহ করা হয়েছে, সে আমাদের বোন নয়৷ রাতেই মা-বাবাকে ঘুম থেকে তুলে খবরটা দিলাম৷’
তরুণীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাচ্চু আলি, দেবকুমার পাল ও পাপ্পু খান নামে তিন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে৷ গ্রেপ্তারকৃতদের ঘাটাল আদালতে তোলা হয়৷ ঘাটাল কোর্টের এসিজেএম সব্যসাচী চট্টরাজ অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন খারিজ করে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন