সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৬

সাংবাদিকের প্রশ্ন, নাকি দলীয় কর্মীর স্তুতি, অনুমোদন ও সমর্থন!


সৈকত রুশদী

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের ভূমিকা এবং সাংবাদিকতার সংজ্ঞাও বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অন্তত: আওয়ামী লীগের শাসনামলে। 

শনিবার (২৭ আগস্ট ২০১৬) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নকর্তা সাংবাদিকদের কয়েকজনের ভূমিকা দেখে তাই মনে হয়েছে আমার কাছে। 

প্রশ্ন করার নামে সাংবাদিকদের সরকার ও সরকার প্রধানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়া, সরকারের বিতর্কিত প্রকল্পের প্রতি দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ এবং সাংবাদিক হিসেবে সেই বিতর্কিত প্রকল্প 'অনুমোদন' করার জন্য নিশ্চয়ই সংবাদ সম্মেলনের প্রয়োজন হয়না। সেজন্য ভিন্ন, দলীয় ফোরাম রয়েছে। 

বাংলাদেশের সুপরিচিত কয়েকজন সাংবাদিকের প্রশ্নের নামে যে বক্তব্য এই প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে, তা' থেকে মনে হয় সাংবাদিকতার সংজ্ঞাও বদলে গেছে। সাংবাদিক ও স্তুতিকারের পার্থক্য ঘুচে গেছে। 

সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি যদি সাংবাদিকের ব্যক্তিগত সমর্থন থেকেও থাকে, সেটি কী সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করাটা সাংবাদিক হিসেবে জরুরী? নাকি তার পিছনে অন্য কারণ আছে? বিশেষ করে টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারের সময় সরকার প্রধানের প্রতি আনুগত্য, অথবা তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন প্রকাশের বিশেষ তাৎপর্য্য রয়েছে!

একজন বাদে এই সাংবাদিকরা সকলেই আমার ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত। কেউ কেউ তিন দশক বা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে। এঁদের মধ্যে অন্তত: দুইজন অনুজ সতীর্থ আবার আমার ফেসবুক বন্ধুও! 

১৯৭৮ সালে সাংবাদিকতার সূচনা থেকে গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে বিগত ৩৮ বছরের পেশাগত জীবনে কখনও দেখিনি বা শুনিনি যে সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকরা প্রশ্নের পরিবর্তে, অথবা প্রশ্নের আগে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজকদের এবং তাদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রশংসা করতে। 

সংবাদপত্র পাঠ করতে শেখার সময় থেকে, অর্থাৎ বিগত প্রায় পাঁচ দশক ধরে জেনে এসেছি পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকরা নৈর্ব্যক্তিক অবস্থান গ্রহণ করবেন। অন্তত: প্রকাশ্যে। নিজেও সেই ধারার চর্চা করে এসেছি। এখন মনে হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার সব কিছুই ভুল!

টরন্টো
২৭ আগস্ট ২০১৬

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন