সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৬

নব্য জেএমবির লক্ষ্য, আইএসের সাহায্যে বৃহত্তর বাংলাদেশ স্থাপন!



জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের ৬৫ নম্বর শাখা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। উদ্দেশ্য  বাংলাদেশকে ভাঙা৷ খবর কলকাতার দৈনিক ‘এই সময়‘ পত্রিকার।

সোমবার ‘এই সময়‘ লিখেছে:

আপাতত সেই শাখাই দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গোয়েন্দাদের৷ কারণ, বাংলাদেশের গুলশান হামলার পর সে দেশের জেএমবি জঙ্গিদের গ্রেফতার করে বাংলাদেশের পুলিশ জানতে পেরেছে, পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির যে সংগঠনটি কাজ করছে, সেটাই তাদের ৬৫ নম্বর শাখা৷ মূল সংগঠনের কাছে এই শাখার পরিচিতি বৈদেশিক শাখা হিসেবে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের আগে ভারতে এসে নিজের দেশকে স্বাধীন করার জন্য কাজ শুরু করেছিলেন তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের বহু মানুষ৷ আর এ বার জঙ্গি সংগঠনের বৈদেশিক শাখা খোলা হয়েছে খাস বাংলাদেশকে ভাঙার জন্য৷ কারণ, নব্য জেএমবির লক্ষ্য, আইএসের সাহায্য নিয়ে বৃহত্তর বাংলাদেশ স্থাপন করার৷

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা-ময়মনসিংহের মেন রোডের ধারে ত্রিশালে পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া হয় জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ নেতা সালাউদ্দিন এবং জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজানকে৷ এর পরেই তারা পালিয়ে ভারতে ঢুকে গা ঢাকা দেয় বলে গোয়েন্দারা জানতে পারেন৷ তবে জেএমবির কাজ কারবার সবার সামনে আসে ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর৷ বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর৷ এই ঘটনার তদন্ত করে আদালতে চার্জশিটও জমা দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা৷ খাগড়াগড়ের তদন্ত করতে বাংলাদেশে এনআইএ -র একটি দলও যায়৷ তারা পলাতক ৮ জনের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ঢাকাকে চিঠিও লেখে৷ পলাতকদের মধ্যে তালহা শেখ , কওসর -সহ বোমারু মিজানের নামও রয়েছে৷ ওই ঘটনায় মোট তিনজন বাংলাদেশের নাগরিক এখনও পলাতক৷ গোয়েন্দাদের বক্তব্য , জেএমবির পশ্চিমবঙ্গের শাখার মাথায় রয়েছে সোহেল মেহফুজ ওরফে হাতকাটা মেহফুজ৷ বাকি চাঁইয়েরা হল বোমারু মিজান এবং সালাউদ্দিন৷ তাদের লক্ষ্য , বাংলাদেশে নাশকতা মূলক কাজ করা৷ সম্প্রতি গুলশানের ঘটনার পর যে জেএমবি নেতাদের র্যাব গ্রেন্তার করেছে , তাদের জেরা করেই এই তথ্য সামনে এসেছে৷ ফলে এ সব তথ্য এনআইএ -কে দেওয়া হবে বলে বাংলাদেশ পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে৷ জানা গিয়েছে , মুর্শিদাবাদ , মালদহ এবং নদিয়া , এই তিন জেলা নিয়েই মূলত বৈদেশিক শাখা প্রথমে খোলা হয়৷ যার সদস্য সংখ্যা এখন বিভিন্ন জেলাতে প্রায় ১০০৷ এদের নেতৃত্বে রয়েছে হাতকাটা মেহফুজ৷ এরা মূলত মালদহ সীমান্ত দিয়ে জাল নোট এবং মাদকের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল৷ এবং ব্যবসা থেকে উপার্জিত মোটা অঙ্কের টাকা সংগঠনের জন্য হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হত৷ খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সময় থেকে এ রাজ্যে জেএমবির অস্তিত্ব জানা গেলেও , তারও বহু আগে থেকেই জামাতুল মুজাহিদিন এ পারের জমি ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নাশকতার কাজ শুরু করে৷ ফলে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সন্দেহ , কল্যাণপুর এবং নারায়ণগঞ্জের সফল অপারেশনের পর ওই সংগঠনের অনেক সদস্যই এখন পালিয়ে এ পারে এসে এখানকার সংগঠনের চাঁইদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে৷ ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হবে বলেও দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার তরফে৷ তবে গুলশান হামলার মূল চক্রান্তকারী তামিম আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার পরে বাংলাদেশ গোয়েন্দাদের নজরে এখন নুরুল ইসলাম মারজান৷ যার পরিচিতি নব্য জেএমবির ন্যাশনাল অপারেশন কম্যান্ডার হিসেবে৷ গোয়েন্দাদের সন্দেহ, পুলিশের তত্পরতা বেড়ে যাওয়ায় সে পালিয়ে ভারতে চলে আসতে পারে৷ পাশাপাশি নব্য জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হওয়া আনসার-্আল-ইসলামের নেতা মেজর জিয়ার খোঁজেও তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ৷ নব্য জেএমবির সঙ্গে থাকলেও , মূলত মুক্তমনা লেখক এবং ব্লগারদের হত্যা করাই ছিল এই সংগঠনের উদ্দেশ্য৷ ২০১০ সালে জেএমবির নেতা আমির সইদুর রহমান ধরা পড়ার পর জেএমবির পশ্চিমবঙ্গ শাখা খোলার বিষয়ে তাদের পরিকল্পনার কথা প্রথম জানা যায়৷ এমনকি , ২০০৫ সালে বাংলাদেশে ধারাবাহিক বোমা বিস্ফোরণের সময় এ পারের দুষ্কৃতীদের সাহায্য নেওয়া হয়েছিল বলেও ধৃতেরা জেরার জবাবে জানিয়েছে৷ ৷

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন