কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র প্রশংসায় পঞ্চমুখ জন কেরি
১৯৭৪ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেথ মুজিবুর রহমানের সাথে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার । এ সফরকালে কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘ইন্টারন্যাশনাল বাস্কেট কেস’ বলেছিলেন |
হেনরি কিসিঞ্জারের সেই ভবিষ্যদ্বাণীকে মিথ্যা প্রমাণ করে বাঙালি জাতি সোনার বাংলা গড়ে তুলেছে। স্বাধীনতার মাত্র ৪২ বছরে বাংলাদেশ ৬ শতাংশের প্রবৃদ্ধির বৃত্ত ভেঙে ৭ শতাংশে উন্নীত করেছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে।নিরক্ষতা দূর হচ্ছে, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে জাতিসংঘের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বের কাছে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা অর্জনের সময় কেবল অর্থনীতি-ব্যবসা বাণিজ্যেই নয়, আর্থ-সামাজিক নানা সূচকেই অনেক পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথায় চরম দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ মারা যায়। আর স্বাধীনতার পর গত চার দশকে বিদেশি রাষ্ট্রের শোষণমুক্ত বাংলাদেশ বেশ পুষ্ট হয়েছে। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বহু পথ এগিয়েছে বাংলাদেশ। আর এ অর্জনে কেবল পাকিস্তানকেই নয়, অর্থনীতি ও সামাজিক নানা সূচকে ভারতের চেয়েও বেশ এগিয়েছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প কোনো প্রকার বৈদেশিক সহায়তা ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট ইনডিকেটরস ডাটাবেজে এবং আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদনে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে ৫৮তম অবস্থানে ছিল। ২০১৫ সালে ২০৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার জিডিপি অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতির আঙিনায় ১৪ ধাপ ওপরে উঠে ৪৪তম স্থানে অবস্থান করছে। জানা গেছে, ১৯৭২ সালে দেশের রপ্তানি আয় ছিল ৩৩ কোটি ডলার। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১২০ কোটি ডলারে। একই সময়ে আমদানি ব্যয় ২৯ কোটি ডলার থেকে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলারে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ নিয়ে তৎকালীন বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী দেশগুলোর মধ্যে একদলের ধারণা ছিল বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হলে বিদেশি সাহায্য লাগবে। আরেক দলের ধারণা ছিল, সাহায্য দিলেও কাজ হবে না। তাই সে সময় মার্কিন মন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে ‘ইন্টারন্যাশনাল বাস্কেট কেস’। অর্থাৎ তলাবিহীন ঝুড়ি, এখানে যত অর্থই ঢালা হবে, তলা না থাকায় কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আমাদের সেই অপবাদ ঘুচেছে। সম্প্রতি বিশ্বের প্রভাবশালী ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে বাংলাদেশ নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টটির শিরোনামে বলা হয়েছে ‘বাংলাদেশ, ‘বাস্কেট কেস’ নো মোর।’
বাংলাদেশ এগোচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে শুরু করে দীর্ঘ ২৫ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশে গড়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হার সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি বাড়েনি। পরের ১০ বছর জিডিপি বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ হারে। আর গত ১২ বছর ধরে দেশের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এখন তা ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন