আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ‘শেষ’ নয়, ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টায় সুর নামাচ্ছে ফিলিপিন্সই
সত্যিই কি আমেরিকার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যাবে ফিলিপিন্সের? আর তা যদি হয়, তা হলে ঠিক কী ভাবে? কী-ই বা হবে তার পরিণতি? সাধারণ মানুষের এই টুকরো টুকরো প্রতিক্রিয়া আর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও পদাধিকারীদের কথায় খুব বেশি ফারাক কিন্তু নেই৷ দুতের্তের কথা এখনও ঠিক হজম হচ্ছে না তাঁদেরও৷ যা বলেছেন, সব দিক ভেবে বলেছেন কি ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট? কেন এই সংশয় আর বিভ্রান্তি, তার কিছু উত্তর হয়তো দিতে পারবে পরিসংখ্যান৷
‘মনে হয়, উনি মজা করছিলেন।’ মন্তব্যটা এল যাঁর কাছ থেকে, তাঁর বয়স ৫৯, ম্যানিলায় সেলসউওম্যান হিসেবে কাজ করেন৷ বৃহস্পতিবার বেজিংয়ে ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট দুতের্তে যা বলেছেন, তা যে সত্যি হতে পারে, সে কথা বিশ্বাস হচ্ছে না মারিসা লাগুইতানের৷ অবাক হয়ে বলছেন, আমেরিকা তো দীর্ঘদিন ধরে এ দেশের বন্ধু৷ কী হবে, যদি ফিলিপিন্স থেকে বিপিও-গুলো সব চলে যায়? আমাদের তো চাকরি থাকবে না! মারিসার মতো পোড় খাওয়া অভিজ্ঞতা এখনও হয়নি, এমন এক তরুণীর গলায় নির্ভজাল আশঙ্কা৷ তাঁরও প্রশ্ন,
আমেরিকা ও ফিলিপিন্সের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক শুধু কূটনৈতিক বা সামরিক সহযোগিতার নয়৷ অর্থনৈতিক বিষয়ে আমেরিকার উপর এই এশীয় দেশটির নির্ভরতা বিপুল৷ গত বছর দু’দেশের মধ্যে পণ্য ব্যবসার পরিমাণ ছাড়িয়ে গিয়ে ছিল ১৮০০ কোটি মার্কিন ডলার৷ আর ফিলিপিন্সে বিভিন্ন মার্কিন সংস্থার বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি৷ বিদেশে কর্মরত ফিলিপিনোদের কাছ থেকে তাঁদের দেশ বছরে যে ১৭৬০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করে, তার মধ্যে আমেরিকা প্রবাসী নাগরিকদের অবদান প্রায় এক তৃতীয়াংশ৷ এই পরিস্থিতিতে দুতের্তের ‘বিচ্ছেদ’ ঘোষণার কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁর মন্ত্রীরাও৷ বেজিংয়ে দুতের্তে শুধু আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে চিনের হাত ধরার কথা বলেই থামেননি, ‘বিচ্ছেদ বলতে কী বোঝাচ্ছেন, সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন৷ তাঁর নিজের ভাষাতেই, ‘আমি আমেরিকার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘোষণা করছি৷ সামরিক ভাবে, এবং সামাজিক ভাবে না হলেও অর্থনৈতিক ভাবে।’ অর্থনৈতিক বিচ্ছেদ হলে যে ফিলিপিন্সের জন্য তার ফল মোটেও ভালো হবে না, তা নিয়ে দ্বিমত নেই ওয়াকিবহাল মহলের৷ প্রশান্ত মহাসাগরীয় এশিয়া বিষয়ে বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, আমেরিকার উপর ফিলিপিন্সের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা অতিক্রম করে দুতের্তের কথাকে সত্যিই কাজে পরিণত করা সম্ভব নয়৷
সেটা বুঝতে পেরেছে ফিলিপিন্সও৷ ফলে শুরু হয়ে গিয়েছে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা৷ শুক্রবার দুতের্তের দন্তর বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, আগে থেকেই যারা বন্ধু, এমন দেশগুলির সঙ্গে চুক্তি ভাঙা বা সমঝোতা নষ্ট করার কোনও ইচ্ছে নেই ফিলিপিন্সের৷ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র আর্নেস্টো আবেলার মতে, দুতের্তের ঘোষণা আসলে স্বাধীন বিদেশনীতি অনুসরণ করার বিষয়ে ফিলিপিন্সের অবস্থানটাই আরও এক বার জানিয়ে দেওয়া৷ প্রেসিডেন্টের কথার অর্থ আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ‘শেষ করা নয়, শুধুমাত্র আমেরিকার উপর নির্ভরশীল না হয়ে এশীয় দেশগুলিকেও সঙ্গী করা বলে দাবি করেছেন আমেরিকার সঙ্গে ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্র ’ বন্ধ করার প্রশ্ন নেই৷
এমনকি চিনও সম্ভবত এটা আশা করছে না যে, আমেরিকার সঙ্গে ফিলিপিন্সের সম্পর্ক সত্যিই ছিন্ন হবে৷ বেজিংয়ে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুনিয়াং এ দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, এটাকে (আমেরিকা ও চিনের মধ্যে) হার-জিতের খেলা হিসেবে না দেখাই ভালো৷ তাঁর কথায়, চিনের দিক থেকে দেখতে গেলে, আমারা মনে করি, বর্তমান বিষয়টাকে হয় তুমি, নয় আমি বা তুমি জিতলে আমার হার, এ ভাবে বলা যায় না৷ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে কোনও ভাবে প্রভাবিত না করেই একটি দেশের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ার ঘটনা তো হয়েই থাকে৷ আমেরিকা অবশ্য একটা ঝাঁকুনি খেয়েছে৷ ফিলিপিন্সের পক্ষে পুরোপুরি সম্পর্ক ছিন্ন করা সহজ নয় বুঝলেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, দক্ষিণ চিন সাগর এলাকায় তাদের পরিকল্পনাটা দুতের্তের কথায় এলোমেলো হয়ে গিয়েছে৷ বিতর্কিত ওই অঞ্চলে চিনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা ঠেকিয়ে রাখতে এতদিন ফিলিপিন্সই ছিল তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী সহযোগী৷ ম্যানিলার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এবং ভিয়েতনাম, মালয়শিয়ার মতো দেশগুলিকে সঙ্গে নিয়ে আমেরিকা যে কূটনীতির চালটা দিচ্ছিল, তা এ বার ভেস্তে যাওয়ার মুখে৷ কিন্তু মার্কিন রাজনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করে নিচ্ছেন, দক্ষিণ চিন সাগরে ফিলিপিন্সকে হারানো একটা বড় ধাক্কা৷ সে জন্য দুতের্তের মন্তব্যের পর প্রতিক্রিয়া আসতে দেরি হয়নি৷ এ বিষয়ে নিজেদের অসন্তোষ গোপন করছে না তারা৷ ম্যানিলায় মার্কিন দূতাবাস এ দিন ‘অকারণ অনিশ্চয়তা তৈরি ’র জন্য দুতের্তের মন্তব্যের সমালোচনা করেছে৷ মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জন কির্বি জানিয়েছেন, কেন অপ্রত্যাশিত ভাবে এমন মন্তব্য করা হল, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হতে পারে ফিলিপিন্সের কাছে৷
এমনকি চিনও সম্ভবত এটা আশা করছে না যে, আমেরিকার সঙ্গে ফিলিপিন্সের সম্পর্ক সত্যিই ছিন্ন হবে৷ বেজিংয়ে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুনিয়াং এ দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, এটাকে (আমেরিকা ও চিনের মধ্যে) হার-জিতের খেলা হিসেবে না দেখাই ভালো৷ তাঁর কথায়, চিনের দিক থেকে দেখতে গেলে, আমারা মনে করি, বর্তমান বিষয়টাকে হয় তুমি, নয় আমি বা তুমি জিতলে আমার হার, এ ভাবে বলা যায় না৷ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে কোনও ভাবে প্রভাবিত না করেই একটি দেশের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ার ঘটনা তো হয়েই থাকে৷ আমেরিকা অবশ্য একটা ঝাঁকুনি খেয়েছে৷ ফিলিপিন্সের পক্ষে পুরোপুরি সম্পর্ক ছিন্ন করা সহজ নয় বুঝলেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, দক্ষিণ চিন সাগর এলাকায় তাদের পরিকল্পনাটা দুতের্তের কথায় এলোমেলো হয়ে গিয়েছে৷ বিতর্কিত ওই অঞ্চলে চিনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা ঠেকিয়ে রাখতে এতদিন ফিলিপিন্সই ছিল তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী সহযোগী৷ ম্যানিলার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এবং ভিয়েতনাম, মালয়শিয়ার মতো দেশগুলিকে সঙ্গে নিয়ে আমেরিকা যে কূটনীতির চালটা দিচ্ছিল, তা এ বার ভেস্তে যাওয়ার মুখে৷ কিন্তু মার্কিন রাজনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করে নিচ্ছেন, দক্ষিণ চিন সাগরে ফিলিপিন্সকে হারানো একটা বড় ধাক্কা৷ সে জন্য দুতের্তের মন্তব্যের পর প্রতিক্রিয়া আসতে দেরি হয়নি৷ এ বিষয়ে নিজেদের অসন্তোষ গোপন করছে না তারা৷ ম্যানিলায় মার্কিন দূতাবাস এ দিন ‘অকারণ অনিশ্চয়তা তৈরি ’র জন্য দুতের্তের মন্তব্যের সমালোচনা করেছে৷ মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জন কির্বি জানিয়েছেন, কেন অপ্রত্যাশিত ভাবে এমন মন্তব্য করা হল, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হতে পারে ফিলিপিন্সের কাছে৷
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদেরও কেউ কেউ বলছেন, নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ করতেই এমন কথা বলেছেন ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট৷ সম্ভবত দেশে মার্কিন উপস্থিতিতে তাঁর ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে, এমন একটা ধারণা থেকে ক্ষোভ তৈরি হয়ে থাকবে তাঁর মনে৷ বেজিংয়ের বিস্ফোরণ তারই বহিঃপ্রকাশ৷ আবার কারও মতে, ড্রাগ মাফিয়াদের বিষয়ে তাঁর নীতি ও ফিলিপিন্সে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে আমেরিকার মাথা ঘামানোটা মেনে নিতে পারছেন না দুতের্তে৷ কেউ কেউ অবশ্য পুরো বিষয়টাকেই উড়িয়ে দিচ্ছেন নিছক পাবলিসিটি স্ট্যান্ট বলে।
দৈনিক এই সময়, কলকাতা
Very intersting development in global politics!
উত্তরমুছুন