বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৬

সীমান্তে কেন বাজে যুদ্ধের বাদ্য?
যখনি মানুষ চায়বস্ত্র ও খাদ্যসীমান্তে বেজে ওঠে যুদ্ধের বাদ্য


বিপ্লব ভট্টাচার্য

এই সময়, কলকাতার দৈনিক পত্রিকা

‘In war, truth is the first casualty’ প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে, গ্রিক নাট্যকার-সাহিত্যিক ইস্কাইলাস-এর এই কথাগুলো বোধহয় যুদ্ধের বিরুদ্ধে সভ্যতার শেষ কথা,যা আজও ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক৷ উরি সেনাছাউনিতেহামলাএবং তার ফলে ১৮ জন সেনার মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক৷ কিন্তু একই সঙ্গে এই ঘটনা আরও অনেক প্রশ্নের উদ্রেক ঘটায়,যার উত্তর জানার অধিকার ভারতের প্রত্যেক নাগরিকের আছে৷ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে এবং উগ্র দেশপ্রেমের জিগির তুলে যে যুদ্ধের উন্মাদনা সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে,তা এই উপমহাদেশের ভবিষ্যতের উপর এক বিরাট প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দেবে৷ কিন্তু সব করে অপ্রিয় প্রশ্নগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না

১৷ উরি মতোসংবেদনশীলএলাকায়,সেনাছাউনিতে যে পরিমাণ নিরাপত্তা থাকা উচিত--- তা যদি না থেকে থাকে,তা হলে তার দায় কার ? প্রতি বছর সাধারণ বাজেটের এক বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেও,এমত অবস্থার সম্মুখীন কেন হতে হচ্ছে ?

কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সেখানে পাকিস্তানের নাক গলানোর কোন এক্তিয়ার নেই, তা হলে কোন যুক্তিতে বালুচিস্তানের সমস্যায়,যা পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয়,ভারত নাক গলায় ? কোন যুক্তিতে বালোচদের ‘স্বাধীনতার’ আন্দোলনকে সমর্থন করা যায় এবং কাশ্মীরের ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী অবস্থান চালিয়ে যাওয়া যায়? মোদী সরকারের পরস্পরবিরোধী অবস্থান এবং ছেলেমানুষি সিদ্ধান্তের কারণে অবস্থা জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে৷

২৷নিরাপত্তা উপদেষ্টা মতো গালভরা পদের অধিকারী দাভোল সাহেবের আমলে,সেনাদের ক্ষেত্রেই যদি নিরাপত্তার এমন অবস্থা হয়,সারা দেশের মানুষের নিরাপত্তার ব্যবস্থা সহজেই অনুমেয়৷ জনগণের পয়সায়,এই ধরনের শ্বেত হস্তী পুষে যদি জনগণেরই নিরাপত্তার কোনও গ্যারান্টি না থাকে,তা হলে কার লাভের জন্য এদের নিয়োগ করা ?

৩৷ নির্দিষ্ট গোয়েন্দা রিপোর্ট থাকা সত্ত্বেও,কী ভাবে এমন এক ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেল

৪৷ যেজঙ্গিদেরনিকেশ করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে,তাদের মৃতদেহের,অস্ত্রশস্ত্রের,পরিচয়ের বিশদ বিবরণ এখনও কেন সামনে আসেনি ? বলা হচ্ছে,মৃতদেহগুলো এতটাই বীভত্স যে তার ছবি দেখানো ঠিক হবে না ; স্মরণ করা যেতে পারে,বীভত্স থেকে বীভত্সতর লাশের ছবি,এই সেনা আধিকারিকরাই,তাদের বীরত্বের নিদর্শন স্বরূপ,আমাদের অতীতে অসংখ্যবার দেখিয়েছেন--- তা হলে ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম কেন ? কাঁটাতারের উপর ঝুলতে থাকা ফ্যালানির নিথর দেহের বা অধুনা কাশ্মীরে ঘটে চলা পেলেট গানের বীভত্সতার ছবিও আমরা দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি,সেখানে ক্ষেত্রে এত ঢাক ঢাক গুড়গুড় কীসের ?

৫৷ কাশ্মীরে লক্ষ লক্ষ সেনা নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন রেখেও এক চিলতে অবস্থার উন্নতি ঘটানো যায়নি,উলটে সমস্যা গভীরতর হয়েছে ; ক্ষেত্রে সরকারের নীতির অসারতা,ভ্রান্তি অপদার্থতাই প্রমাণিত হয়৷ কেন কাশ্মীর নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে জনগণের সামনে সত্যাসত্য তুলে ধরা হয় না

৬৷ সীমান্ত সমস্যার কথা ছেড়ে দিন,যে ভাবে দিনের পর দিন দেশের অভ্যন্তরেশান্তি স্থাপনতথাসার্বভৌমত্বরক্ষার নামে নিরাপত্তা বাহিনী সেনা মোতায়েন করে ন্যূনতম নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া চলছে এবং যা হয়ে চলেছে সেই ১৯৪৭-ক্ষমতা হস্তান্তর ’-এর পর থেকেই ; সেই বিপুল জান-মালের ক্ষতির দায় কার ? কার স্বার্থে বস্তারেমাওবাদীদমনের নামে,ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী জনজাতির উপর নির্বিচার দমন-পীড়ন চলছে

৭৷ সরকার দাবি করে,কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সেখানে পাকিস্তানের নাক গলানোর কোন এক্তিয়ার নেই, তা হলে কোন যুক্তিতে বালুচিস্তানের সমস্যায়,যা পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয়,ভারত নাক গলায় ? কোন যুক্তিতে বালোচদেরস্বাধীনতারআন্দোলনকে সমর্থন করা যায় এবং কাশ্মীরের ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী অবস্থান চালিয়ে যাওয়া যায়মোদী সরকারের পরস্পরবিরোধী অবস্থান এবং ছেলেমানুষি সিদ্ধান্তের কারণে অবস্থা জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে৷ এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে বাধ্য; কাল যদি কোনও কারণে চিন সিন্ধুর জল ভারতে আসা বন্ধ করে বা ব্রহ্মপুত্রের জল থেকে বঞ্চিত করে তা হলে উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে কী পরিমাণ বিপর্যয় হতে পারে সে সম্বন্ধে সরকারের কোনও সম্যক ধারণা আছে বলে মনে হয় না৷ ভারতের কৃষক তথা মেহনতি মানুষের সাথে পাকিস্তানের সাধারণ কৃষিজীবী মানুষের কোন বৈরিতা নেই; কিন্তু যুদ্ধ বা ছায়াযুদ্ধের বলি হতে হয়,সীমান্তের দুদিকের এই সাধারণ জনতাকেই--- এইঅন্যায় যুদ্ধ বিরুদ্ধে মানুষের জোটবদ্ধ অবস্থান নেওয়াটাই আজকের সময়ের দাবি৷

কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর কবিতার আগুনশব্দ,‘যখনি মানুষ চায়, বস্ত্র খাদ্য, সীমান্তে বেজে ওঠে যুদ্ধের বাদ্য৷’--- এটাই আবারও শ্লোগান হয়ে রাজপথে মুখরিত হোক৷ বিপ্লব ভট্টাচার্য, -মেল মারফত্ প্রান্তসীমান্তে কেন বাজে যুদ্ধের বাদ্য?


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন