সীমান্তে কেন বাজে
যুদ্ধের বাদ্য?
‘যখনি মানুষ চায়, বস্ত্র ও খাদ্য, সীমান্তে বেজে ওঠে যুদ্ধের বাদ্য’
বিপ্লব ভট্টাচার্য
এই সময়, কলকাতার দৈনিক পত্রিকা
‘In war, truth is the first casualty’৷ প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে, গ্রিক নাট্যকার-সাহিত্যিক ইস্কাইলাস-এর এই কথাগুলো বোধহয় যুদ্ধের বিরুদ্ধে সভ্যতার শেষ কথা,যা আজও ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক৷ উরি সেনাছাউনিতে ‘হামলা’এবং তার ফলে ১৮ জন সেনার মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক৷ কিন্তু একই সঙ্গে এই ঘটনা আরও অনেক প্রশ্নের উদ্রেক ঘটায়,যার উত্তর জানার অধিকার ভারতের প্রত্যেক নাগরিকের আছে৷ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে এবং উগ্র দেশপ্রেমের জিগির তুলে যে যুদ্ধের উন্মাদনা সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে,তা এই উপমহাদেশের ভবিষ্যতের উপর এক বিরাট প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দেবে৷ কিন্তু এ সব করে অপ্রিয় প্রশ্নগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না :
১৷ উরি
’র মতো
‘সংবেদনশীল’এলাকায়,সেনাছাউনিতে যে পরিমাণ
নিরাপত্তা থাকা উচিত--- তা যদি
না থেকে
থাকে,তা
হলে তার
দায় কার
? প্রতি বছর
সাধারণ বাজেটের
এক বিপুল
পরিমাণ অর্থ
বরাদ্দ করেও,এমত অবস্থার
সম্মুখীন কেন
হতে হচ্ছে
?
কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সেখানে পাকিস্তানের নাক গলানোর কোন এক্তিয়ার নেই, তা হলে কোন যুক্তিতে বালুচিস্তানের সমস্যায়,যা পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয়,ভারত নাক গলায় ? কোন যুক্তিতে বালোচদের ‘স্বাধীনতার’ আন্দোলনকে সমর্থন করা যায় এবং কাশ্মীরের ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী অবস্থান চালিয়ে যাওয়া যায়? মোদী সরকারের পরস্পরবিরোধী অবস্থান এবং ছেলেমানুষি সিদ্ধান্তের কারণে অবস্থা জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে৷
২৷ ‘নিরাপত্তা
উপদেষ্টা ’র মতো গালভরা পদের
অধিকারী দাভোল
সাহেবের আমলে,সেনাদের ক্ষেত্রেই
যদি নিরাপত্তার
এমন অবস্থা
হয়,সারা
দেশের মানুষের
নিরাপত্তার ব্যবস্থা সহজেই অনুমেয়৷ জনগণের
পয়সায়,এই
ধরনের শ্বেত
হস্তী পুষে
যদি জনগণেরই
নিরাপত্তার কোনও গ্যারান্টি না থাকে,তা হলে
কার লাভের
জন্য এদের
নিয়োগ করা
?
৩৷ নির্দিষ্ট
গোয়েন্দা রিপোর্ট
থাকা সত্ত্বেও,কী ভাবে
এমন এক
ভয়ংকর ঘটনা
ঘটে গেল
?
৪৷ যে
‘জঙ্গিদের’নিকেশ করা হয়েছে বলে
দাবি করা
হচ্ছে,তাদের
মৃতদেহের,অস্ত্রশস্ত্রের,পরিচয়ের বিশদ
বিবরণ এখনও
কেন সামনে
আসেনি ? বলা
হচ্ছে,মৃতদেহগুলো
এতটাই বীভত্স
যে তার
ছবি দেখানো
ঠিক হবে
না ; স্মরণ
করা যেতে
পারে,বীভত্স
থেকে বীভত্সতর
লাশের ছবি,এই সেনা
আধিকারিকরাই,তাদের বীরত্বের নিদর্শন স্বরূপ,আমাদের অতীতে
অসংখ্যবার দেখিয়েছেন--- তা হলে এ
ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম
কেন ? কাঁটাতারের
উপর ঝুলতে
থাকা ফ্যালানির
নিথর দেহের
বা অধুনা
কাশ্মীরে ঘটে
চলা পেলেট
গানের বীভত্সতার
ছবিও আমরা
দেখতে অভ্যস্ত
হয়ে গেছি,সেখানে এ
ক্ষেত্রে এত
ঢাক ঢাক
গুড়গুড় কীসের
?
৫৷ কাশ্মীরে
লক্ষ লক্ষ
সেনা ও
নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন রেখেও এক
চিলতে অবস্থার
উন্নতি ঘটানো
যায়নি,উলটে
সমস্যা গভীরতর
হয়েছে ; এ
ক্ষেত্রে সরকারের
নীতির অসারতা,ভ্রান্তি ও
অপদার্থতাই প্রমাণিত হয়৷ কেন কাশ্মীর
নিয়ে শ্বেতপত্র
প্রকাশ করে
জনগণের সামনে
সত্যাসত্য তুলে ধরা হয় না
?
৬৷ সীমান্ত
সমস্যার কথা
ছেড়ে দিন,যে ভাবে
দিনের পর
দিন দেশের
অভ্যন্তরে ‘শান্তি স্থাপন’তথা ‘সার্বভৌমত্ব’রক্ষার নামে
নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনা মোতায়েন
করে ন্যূনতম
নাগরিক অধিকার
কেড়ে নেওয়া
চলছে এবং
যা হয়ে
চলেছে সেই
১৯৪৭-র
‘ক্ষমতা হস্তান্তর
’-এর পর
থেকেই ; সেই
বিপুল জান-মালের ক্ষতির
দায় কার
? কার স্বার্থে
বস্তারে ‘মাওবাদী’দমনের নামে,ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ
আদিবাসী জনজাতির
উপর নির্বিচার
দমন-পীড়ন
চলছে?
৭৷
সরকার দাবি
করে,কাশ্মীর
ভারতের অভ্যন্তরীণ
বিষয় এবং
সেখানে পাকিস্তানের
নাক গলানোর
কোন এক্তিয়ার
নেই, তা
হলে কোন
যুক্তিতে বালুচিস্তানের
সমস্যায়,যা
পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয়,ভারত নাক
গলায় ? কোন
যুক্তিতে বালোচদের
‘স্বাধীনতার’আন্দোলনকে সমর্থন করা যায়
এবং কাশ্মীরের
ব্যাপারে সম্পূর্ণ
বিপরীতধর্মী অবস্থান চালিয়ে যাওয়া যায়? মোদী সরকারের
পরস্পরবিরোধী অবস্থান এবং ছেলেমানুষি সিদ্ধান্তের
কারণে অবস্থা
জটিল থেকে
জটিলতর হচ্ছে৷
এর সুদূরপ্রসারী
প্রভাব পড়তে
বাধ্য; কাল
যদি কোনও
কারণে চিন
সিন্ধুর জল
ভারতে আসা
বন্ধ করে
বা ব্রহ্মপুত্রের
জল থেকে
বঞ্চিত করে
তা হলে
উত্তর-পশ্চিম
এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে
কী পরিমাণ
বিপর্যয় হতে
পারে সে
সম্বন্ধে সরকারের
কোনও সম্যক
ধারণা আছে
বলে মনে
হয় না৷
ভারতের কৃষক
তথা মেহনতি
মানুষের সাথে
পাকিস্তানের সাধারণ কৃষিজীবী মানুষের কোন
বৈরিতা নেই;
কিন্তু যুদ্ধ
বা ছায়াযুদ্ধের
বলি হতে
হয়,সীমান্তের
দু’দিকের
এই সাধারণ
জনতাকেই--- এই ‘অন্যায় যুদ্ধ’র
বিরুদ্ধে মানুষের
জোটবদ্ধ অবস্থান
নেওয়াটাই আজকের
সময়ের দাবি৷
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
এর কবিতার
আগুনশব্দ,‘যখনি মানুষ চায়, বস্ত্র
ও খাদ্য,
সীমান্তে বেজে
ওঠে যুদ্ধের
বাদ্য৷’--- এটাই আবারও শ্লোগান হয়ে
রাজপথে মুখরিত
হোক৷ বিপ্লব
ভট্টাচার্য, ই-মেল মারফত্ প্রান্তসীমান্তে
কেন বাজে
যুদ্ধের বাদ্য?৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন