অভিবাসন বিধি বদল হওয়ায় উপমহাদেশের দেশগুলি থেকে ব্রিটেনে যাওয়া কঠিন হতে পারে
উচ্চশিক্ষা বা চাকরির জন্য ব্রিটেন যাওয়া আরও কঠিন হতে চলেছে৷ মঙ্গলবার হোম সেক্রেটারি অ্যাম্বার রুড ব্রিটিশ অভিবাসন নীতির যে নয়া দিকনির্দেশ করেছেন, তা থেকে এমনই ইঙ্গিত মিলেছে৷
ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেনের অভিবাসন নীতির রূপরেখা কেমন হবে, সে সম্পর্কে এ দিন একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন রুড৷ তার সারমর্ম, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থাকা দেশগুলি থেকে ব্রিটেনে আসার ছাড়পত্র সহজে মিলবে না৷ রুডের কথায়, ‘ব্রেক্সিট তো কৌশলের অংশ মাত্র৷ কাজের কাজ করতে হলে অভিবাসনের সব উৎসের দিকে তাকাতে হবে৷ আমরা কাজ, শিক্ষার রুটগুলোও খতিয়ে দেখব৷ বাইরে থেকে নিয়োগ করার জন্য সংস্থাগুলিকে যে শর্ত পূরণ করতে হয়, তা আরও কঠোর করার দরকার কি না, সেটাও৷’
ব্রিটেন যে প্রস্তাবিত পথে চলতে চায়, তার অঙ্গ হিসেবে বলা হয়েছে, কোনও সংস্থা বাইরের দেশ থেকে কাউকে নিয়োগ করতে চাইলে আগে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, শ্রমের জোগানে ফাঁক ভরাট করার জন্যই তাঁদের নেওয়া হচ্ছে৷ এমন কোনও ক্ষেত্রে নিয়োগ করা হচ্ছে না, যে কাজটা কোনও ব্রিটিশ নাগরিকের পক্ষেও করা সম্ভব ছিল৷ এখনও এ ধরনের একটি নিয়ম কাগজে কলমে থাকলেও তা যথেষ্ট কঠোর ভাবে মানা হয় না৷ তাই রুড বলছেন, নিয়মে কোনও ফাঁক রাখা চলবে না৷ যে সব ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশি শ্রমশক্তিকেই উপযুক্ত করে তোলা সম্ভব, সে সব ক্ষেত্রে নিয়োগকারী সংস্থাকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে৷ রুডের মতে, ‘নিজেদের শ্রমশক্তিকে উন্নত না করলে’ ব্রিটেন কোনও দিনই বিশ্ব মানচিত্রে তাদের প্রথম স্থান করতে পারবে না৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নীতি কার্যকর হওয়ার অর্থ, পাক-ভারত-বাংলাদেশ উপমহাদেশের দেশগুলি থেকে ব্রিটেনে চাকরি করতে যাওয়ার ছাড়পত্র মেলা আরও কঠিন হবে৷
রুডের মতে, ‘নিজেদের শ্রমশক্তিকে উন্নত না করলে’ ব্রিটেন কোনও দিনই বিশ্ব মানচিত্রে তাদের প্রথম স্থান করতে পারবে না৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নীতি কার্যকর হওয়ার অর্থ, পাক-ভারত-বাংলাদেশ উপমহাদেশের দেশগুলি থেকে ব্রিটেনে চাকরি করতে যাওয়ার ছাড়পত্র মেলা আরও কঠিন হবে৷
একই চিত্র দেখা যেতে পারে শিক্ষা ক্ষেত্রেও৷ রুড জানিয়েছেন, এই প্রথম বারের জন্য পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে অভিবাসন সংক্রান্ত নিয়মাবলিও পুনর্বিবেচনা করা হবে৷ যাঁরা উচ্চশিক্ষার জন্য ব্রিটেনে যাওয়ার আবেদন করবেন, তাঁরা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মনোনীত পাঠক্রমের গুণমানের যোগ্য কি না, সেটা দেখা হবে৷ এ ক্ষেত্রে সার্বিক একটিই নীতি থাকবে, নাকি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সের জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা করা হবে, সেটাও বিবেচনা করে দেখা হবে৷ কাজেই চাকরির মতো উচ্চশিক্ষার পথটাও আর সহজ থাকছে না৷ রুড নিজে অবশ্য দাবি করছেন, এটা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা নয়৷ তাঁর কথায়, ‘বিষয়টা আসলে নিশ্চিত করা যে, যাঁরা এখানে উচ্চশিক্ষার জন্য আসছেন, তাঁরা পড়াশোনা করতেই আসছেন৷’
ব্রিটিশ হোম সেক্রেটারির অভিবাসন -প্রস্তাব অবশ্য চাকরি ও শিক্ষায় সীমাবদ্ধ নয়৷ সার্বিক ভাবেই আইন কঠোর করার পক্ষপাতী তিনি৷ যেমন, আইনত ব্রিটেনে থাকার কথা নয়, এমন কাউকে বাড়ি ভাড়া দিলে ডিসেম্বর মাস থেকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিককে, হতে পারে জেলও৷ ট্যাক্সিচালক হিসেবে লাইসেন্স পেতে গেলে অভিবাসন সংক্রান্ত ছাড়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক হবে৷ আগামী বছর থেকে ব্যাঙ্কগুলির কোনও বেআইনি অভিবাসীকে যেন ব্যাঙ্কিংয়ের প্রাথমিক পরিষেবাগুলিও না দেওয়া হয়, সেটা নিশ্চিত করা৷ এই সব নিয়ম চালু হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলি ছাড়া অন্য দেশ থেকে ব্রিটেনে যাওয়ার পথটা অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠবে৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন