শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৬

মার্কিন-পাক ঘনিষ্ঠতার অবসানে রাজনীতি বিচিত্র সব শয্যাসঙ্গী 

সম্পাদকীয়, দৈনিক এই সময়, কলকাতা

পাকিস্তান বিষয়ে যে দুয়েকটি কথা সকলেই জানেন, সেই তালিকায় সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আসতে পারে, তার নাম মার্কিন-ঘনিষ্ঠতা৷ এই সখ্যের ইতিহাস দীর্ঘ এবং বর্ণময়৷ তদানীন্তন ঠাণ্ডা লড়াই এবং রুশ-ভারত মিত্রতার কথা স্মরণে রাখলে তার একটি ভিন্ন প্রেক্ষিতও পাওয়া যায়৷
১৯৭১-এ ভারত-পাক যুদ্ধের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সহানুভূতি কোন দিকে ছিল, সে সব তথ্য অধুনা ইতিহাস৷ এমত বৃত্তান্ত স্মরণে রাখলে এই কূটনীতিক মহোদয় আমেরিকাকে আর বিশ্বশক্তি হিসাবে গ্রহণ করতেই রাজি নন৷ বরং, তাঁর মতে ওয়াশিংটন ‘ক্ষয়িষ্ণু শক্তি’, যাকে পরিত্যাগ করে ইসলামাবাদ অধুনা রাশিয়া এবং চিনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার কথা ভাবছে৷ এই বক্তব্যকে মার্কিন প্রশাসনের প্রতি একটি অনতিপ্রচ্ছন্ন হুমকি হিসাবে দেখলেও বিশেষ আপত্তি উঠবে না৷

কূটনীতিতে হুমকি বিষয়টি ব্রাত্য নয়৷ কঠোরে-কোমলে সে বস্ত্তটি বিভিন্ন তরফ থেকে নানা দিকে ধাবিত হয়ে থাকে৷ তৎসহ, রাজনীতি যে বিচিত্র সব শয্যাসঙ্গী তৈরি করে, সে কথাও নতুন কিছু নয়৷ তারই অনুষঙ্গে আসে পুরনো সঙ্গীর প্রতি অনাদর৷ পাক -চিন সখ্য এখন তুঙ্গে , তবে রাশিয়ার প্রতি ইসলামাবাদের অলিভ-ডাল প্রেরণের ঘটনা তাত্পর্যপূর্ণ৷ অস্যার্থ, ইসলামাবাদের বিদেশ -নীতিতে একটি বড় মাপের বদল আসতে পারে৷

কাশ্মীর নিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত  মুশাহিদ হাসান সইদ
অতঃপর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন পথে এগোবে, সেই পথের পাঁচালিটিও কম আকর্ষণীয় হবে না৷ পাকিস্তানের গোঁসা নিরসনে বিদায়ী ওবামা প্রশাসন কতটা উদ্যোগী হয়, তা দেখার বিষয়৷ পাক-ভূমিতে সন্ত্রাসবাদের লালন-পালন নিয়ে ইসলামাবাদের উপরে তারা কতটা চাপ তৈরি করে, তা দেখার বিষয়৷ এমনকী, পাক-পরমাণু অস্ত্র বেহাত হয়ে যাতে জঙ্গিদের হস্তগত না হয়, সে বিষয়ে মার্কিন মুলুকে ভাবী প্রেসিডেন্টের দৌড়ে আগুয়ান হিলারি ক্লিন্টন কতটুকু উদ্বেগ প্রকাশ করেন, তা-ও৷

সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পাকিস্তানের ভূমিকা বারংবার আমেরিকার কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ উরি-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে পাকিস্তান তাদের পক্ষে বিশেষ সমর্থন জোগাড় করে উঠতে পারেনি৷ নয়াদিল্লির অবস্থান সে তুলনায় স্বস্তিকর৷ সাম্প্রতিক অতীতে মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানে যে সব জঙ্গি কার্যকলাপের উত্পত্তি সে ব্যাপারে ইসলামাবাদকে কঠোর হতে হবে৷ কেরির বাণী কানে মধুবর্ষণ না করলেও নওয়াজ শরিফ এ ব্যাপারে সে দেশের সেনাপ্রধানকে কতটা কঠোর হতে বলেছেন, তা-ও দেখার বিষয়৷ নয়াদিল্লি সাগ্রহে নজর রাখছে, সন্দেহ নেই৷

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন