সীমান্তের ওপারে ও হাসপাতালে পাকিস্তানীদের ওপর ভারতীয়দের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’!
কলকাতায় চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে পাকিস্তানে ফিরে গিয়েছে এই দুই কন্যা |
ভারতের নানা প্রান্তে সকলের নজর এড়িয়ে এদেশের চিকিৎসকেরা ঠিক একই দক্ষতায় শয়ে শয়ে পাকিস্তানির উপর ‘সার্জিক্যাল অপারেশন’ সফল ভাবে করছেন৷ তবে এই ‘সার্জিক্যাল অপারেশন’ সন্ত্রাসবাদীদের দমন করতে নয়, রোগীর প্রাণ বাঁচাতে৷ ফলে সব রোগীই সুস্থ শরীরে ফিরছেন সীমানার ওপারে পাকিস্তানের বাড়িতে৷ শুধু তাই নয়, ভারতীয় চিকিৎসকদের এই সাফল্যর কাহিনী দেশে ফিরে প্রচারও করছেন রোগীর পরিজনেরা৷ ফলে, এই হানাহানির পরিবেশেও ভারতে যোগাযোগ করছেন বহু নিরুপায় পাকিস্তানি পরিবার৷ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে তাদের আরোগ্যের আশ্বাসও দিচ্ছেন ভারতীয় চিকিত্সকেরা৷ পিছিয়ে নেই কলকাতাও৷
এই মুহূর্তে ভারতের একাধিক মেট্রো শহরের নামজাদা হাসপাতালে বহু পাকিস্তানি চিকিৎসাধীন রয়েছে৷ কারও অপারেশন হয়েছে৷ কারও অপেক্ষা অপারেশনের৷ পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক হানাহানিতে এই রোগী -চিকিৎসক সম্পর্কে কোনও চিড় ধরেনি৷ সুস্থ হয়ে যারা ছুটি পেয়েছেন, চলছে নিয়মিত যোগাযোগ৷ সৌজন্যে, ফোন -হোয়াটসঅ্যাপ৷ ভারতীয় চিকিত্সক মহল অবশ্য আত্মবিশ্বাসী --- সীমান্তে যাই হোক না কেন, মানুষের প্রাণ বাঁচানোর এই নজির বজায় থাকবে৷ প্রাণ বাঁচাতে ভারতীয় ডাক্তাররা নিয়মিত‘সার্জিক্যাল অপারেশন’ করতে থাকবেন৷
চিকিৎসার জন্য পাকিস্তান থেকে প্রতি বছর ভারতে আসেন হাজারখানেক রোগী৷ চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে বেশি ভিড় জমে দিল্লিতে৷ যেমন, গত বছর দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালে ১১১ জনের লিভার প্রতিস্থাপনের অপারেশন হয়েছিল৷ এমন নয় যে পাকিস্তান থেকে রোগীদের ঢল নামাতে বাড়তি প্রচার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ বরং দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপন, কিডনি প্রতিস্থাপন, হার্টের অপারেশনসহ অন্যান্য চিকিৎসায় সাফল্যর ঘটনা রোগীর পরিজনদের মারফত পৌছে যায় পাকিস্তানে৷ শনিবারও দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলোতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আট জন পাকিস্তানি৷ লিভারের সমস্যা নিয়ে তারা এসেছেন সেখানে৷ লিভার প্রতিস্থাপন বিভাগের প্রধান সুভাষ গুন্ত জানান , ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক টানাপোড়েন রোগীদের সঙ্গে হাসপাতালের সম্পর্কে কোনও ছেদ টানতে দেয়নি৷ যারা আসতে পারছে না, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছে৷ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক দুই দেশের রাজনৈতিক বিবাদ৷ চিকিৎসকদের কাজ হচ্ছে প্রাণ বাঁচানো৷ রোগীদের নাগরিকত্ব কী তা নিয়ে চিকিত্সকেরা ভাবে না৷ রোগীর রোগটাই মূল উদ্বেগের কারণ থাকে৷ আজও একজনের অপারেশন হচ্ছে৷’
এর পর তালিকায় রয়েছে চেন্নাই ও মুম্বই৷ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে চেন্নাই ও মুম্বইতে দক্ষ চিকিৎসকদের জন্য হার্ট-লিভার-কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য পাকিস্তানি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ যেমন, কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে হার্ট ও ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে লাহোরের এক তরুণ৷ পাকিস্তান সরকার তাঁর অপারেশনের জন্য ইতিমধ্যে ৫২ লাখ টাকা মঞ্জুরও করেছে৷ দরকার একজন ব্রেন ডেড রোগী যার শরীর থেকে হার্ট ও ফুসফুস নিয়ে তা প্রতিস্থাপন করা যাবে৷
কলকাতাতেও পাকিস্তানের রোগী আসা নতুন ঘটনা নয়৷ পাকিস্তানে বসে সু-চিকিৎসার কাহিনী শুনেই শ্বাসনালির সমস্যা নিয়ে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে এসেছিলেন করাচির সাদিয়া তারিক৷ থাইরয়েডের অপারেশন করতে গিয়ে গলায় জটিলতা তৈরি হয়৷ শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ছিল৷ কথা বলা বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল তাঁর৷ লেজার অপারেশন করে সমস্যার সমাধান করা হয়৷ যা সাফল্যর সঙ্গে করেছিলেন ইএনটি বিশেষজ্ঞ শান্তনু পাঁজা৷ অপারেশনের পর করাচি ফিরে গিয়েছেন ওই মধ্যবয়স্ক মহিলা৷ কিন্তু এখনও চিকিত্সকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন ওই রোগী পরিবার৷ শান্তনু বলেন, ‘রোগী কলকাতায় ফিরে রিভিউ করানো সম্ভব নয়৷ তাই ফোন-ইমেল ও স্কাইপের মাধ্যমে রোগীর রিভিউ চালাতে হয়৷ দিন কয়েক আগেও হয়েছে৷’
সম্প্রতি কলকাতায় হার্টে ফুটোর অপারেশন হয়েছিল করাচির বাসিন্দা ভুরা সন্তোষের মেয়ে স্বপ্নার৷ অর্থের অভাবে বছর চারেকের মেয়েকে চোখের সামনে শুকিয়ে যেতে দেখছিলেন করাচির ওই দিনমজুর৷ রোটারি ক্লাব অফ কলকাতা মহানগরের সহযোগিতায় রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়্যাক সায়ন্সেস এ হার্টের অপারেশন হয় স্বপ্নার৷ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে ওই শিশুটি৷
শুধু কলকাতাতেই অবশ্য নয়, বিশিষ্ট হার্ট সার্জন দেবী শেঠীর পরিচালিত অন্য হাসপাতালে হার্টের অপারেশনের জন্য বহু রোগীই বেঙ্গালুরুতে আসেন৷ তাঁর বক্তব্য, ‘অপারেশনের পর রোগীর সঙ্গে চিকিত্সকের সম্পর্ক শেষ হয় না৷ বহু রোগী বার বার এখানে এসে রিভিউ করাতে পারে৷ তাই আমরা নিয়মিত ফোন করে রোগীদের ফলোআপ করি৷ এই যোগাযোগ কখনই থমকে থাকে না৷’ এই প্রসঙ্গে রোটারি ক্লাব অফ কলকাতা মহানগরের রোটারিয়ান শেখর মেহেতা বলেন, ‘পাকিস্তানের বহু শিশুর হার্টের অপারেশন রোটারির সাহায্যে বিনামূল্যে ভারতে হয়েছে৷ আগামী দিনেও প্রাণ বাঁচাতে এ রকম সার্জারি কবর আমরা৷’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন