বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৬

পাকিস্তানি নাগরিক হলেই জঙ্গি! এঁরা সেলিব্রিটি এটাই এঁদের অপরাধ?

সৌপর্ণা চট্টোপাধ্যায়

ভারত-পাক সম্পর্ক কোনও দিনই একমাত্রিক ছিল না৷ আক্রমণ প্রতি-আক্রমণের নীচে চাপা পড়ে আছে আন্তর্জাতিক কূটনীতি, নিরাপত্তা, ভারত-পাক সম্পর্ক কোন পথে, এমন নানা প্রশ্ন৷ উরিতে বা পাঠানকোটের ওপর যে অকারণ জীবনহানি হয়েছে তার জন্য দলাদলির চাপে যে কোনও দেশের সাংস্কৃতিক দিকগুলিকে পিষে মারার অধিকার কারওর নেই৷

বিভিন্ন পাকিস্তানি সেলিব্রিটিরা এই সার্জিকাল স্ট্রাইক-এর ফলে বিনা কারণবশত যে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছেন তা একেবারেই সমর্থন যোগ্য নয়৷ বাস্তবিক ভাবে এই ধরনের জটিল পরিস্থিতি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে জাতীয়তাবাদের নামে করা মিথ্যে দাম্ভিকতা ও চরম নির্বুদ্ধিতার কারণে৷ অনেকের কাছেই এটা পরিষ্কার নয় যে উরি বা পাঠানকোট-এ জঙ্গি হানা এবং অকারণ প্রাণহানির সাথে পাকিস্তানি সেলিব্রিটিদের ভারতের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দিকে যুক্ত থেকে কাজ করার মধ্যে কী সম্পর্ক? বরং নতুন প্রজন্মের ভারতীয়রা শিখছে যে কী ভাবে মিলেমিশে নিজের দেশ ছাড়াও অন্য দেশকে ভালোবেসে কাজ করা যায়৷ তার মানে এটা নয় যে জঙ্গিহানা যখন তখন আমাদের ওপর হবে আর আমরা তার কোনও প্রতিবাদই করব না৷ কিন্ত্ত তার মানে তো এটা নয় যে, যেহেতু পাকিস্তান থেকে জঙ্গিহানা হচ্ছে তাই সব পাকিস্তানিরাই জঙ্গি বা আতঙ্কবাদী, তারা সবাই ভারতকে শত্রু মনে করে, ঘৃণা করে৷ তা হলে তো যদি কোনও দিন অন্য কোনও দেশ থেকে যদি এ রকম হানা হয় তখন ভারত বলবে সেই দেশেরও সবাই জঙ্গি, তারাও সবাই শত্রু৷

তাই এক কথায় জাতীয়তাবাদের নামে পাকিস্তানি সেলিব্রিটিদের এই ভাবে সার্জিকাল স্ট্রাইকের আওতায় এনে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত চরম অপ্রাসঙ্গিক, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত৷


দেশের যাই ঘটনাই ঘটুক না কেন, সেই সব বিষয়ে সাধারণের কথা তো ধরা হয় না, তবে সেলিব্রিটিদের নিয়েই বা এত টানা-হ্যাঁচড়া কেন? এঁদের বক্তব্য পেশ করতেই হবে, কিন্তু কেন? আর যদি এঁরা কোনও মন্তব্য করেও থাকেন তবে তাই নিয়ে বাকিদেরই বা আরও জলঘোলা করা কেন? এঁরা সেলিব্রিটি এটাই এঁদের অপরাধ? আর তা ছাড়া সবচেয়ে বডে়া কথা হল কী করে ভারতের কোনও নির্দিষ্ট দল বা প্রতিষ্ঠান গলা তুলতে পারে পাকিস্তানের কোনও সেলিব্রিটিদের বিরুদ্ধে, যখন কিনা ভারত সরকার তাদের ভিসা এবং ভারতে এসে কাজ করার অনুমতিপত্র দিয়েছে৷ আমাদের সংবিধানের ধারা অনুযায়ী জনগণের পূর্ণ স্বাধীনতা আছে নিজের ইচ্ছেমতো মন্তব্য করার এবং নিজস্ব অভিব্যক্তি প্রকাশ করার৷ যদি কোনও ভারতীয় স্ব-ইচ্ছায় অন্য দেশের (সে যে কোনও দেশেরই হোক না কেন) সেলিব্রিটিদের বর্জন করতে চায় তা হলে তারা তা করতেই পারে, কিন্তু দেশের সব জনগণ কী করবে, কী করবে না সেটা বলার অধিকার জনগণ কিন্ত্ত কোনও নির্দিষ্ট দল বা সংগঠনকে দেয়নি৷ তা হলে তো এ কথাও বলতে হয়, যে সব দল বা সংগঠন এই জিগির তুলছে তারা রীতিমতো সংবিধানকে লঙ্ঘন করার মতো দণ্ডনীয় অপরাধে অপরাধী৷ তাই এক কথায় জাতীয়তাবাদের নামে পাকিস্তানি সেলিব্রিটিদের এই ভাবে সার্জিকাল স্ট্রাইকের আওতায় এনে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত চরম অপ্রাসঙ্গিক, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত৷

সৌপর্ণা চট্টোপাধ্যায়, কদমতলা, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

এই সময়, কলকাতার দৈনিক 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন