বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

একতরফা সিন্ধু জল চুক্তির সমঝোতা বাতিল হলে

আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি রং বদলাতেই পারে



অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

উরিতে হামলার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুঝতে পারছেন, প্রতিশ্রুতি রাখার দায়বদ্ধতা ক্রমশ ভারী হয়ে উঠছে মাথার উপর। সমগ্র ভারত চাইছে সমুচিত জবাব। কিন্তু কী হবে সেই সমুচিত জবাব? এখনও স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী।

যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না মোদী, ছিলেন বিরোধী শিবিরে এবং ছিলেন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী, তখন দেশের কাঙ্খিত পাকিস্তান নীতি সম্পর্কে দৃঢ় মতামত ছিল তাঁর। পশ্চিম সীমান্তের ও পার থেকে ছিটকে আসা প্রতিটি আঘাতকে সুদে-আসলে ফিরিয়ে দেওয়ার নীতির কট্টর সমর্থক ছিলেন তিনি। পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দিতে অসমর্থ হওয়ার অভিযোগ তুলে মোদী তদানীন্তন সরকারকে বিদ্ধও করতেন নিয়ত। আজ সেই তিরে মোদী নিজেই বিদ্ধ কিছুটা।

নরেন্দ্র মোদীর সেই কট্টর কণ্ঠস্বরটা কিন্তু অতীত নয়। ভারতীয় জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ ওই কণ্ঠস্বরটার জন্যই নরেন্দ্র মোদীকে সমীহ করতে শুরু করেছিল। রাজনীতিক মোদীর কণ্ঠস্বরটা আজও সম্ভবত ওই উচ্চগ্রামেই বাঁধা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী সেই অবস্থান থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আজ।

দেশজোড়া আক্রোশ রয়েছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। উপযুক্ত প্রত্যাঘাতের দাবি রয়েছে। যে নরেন্দ্র মোদী এই উপযুক্ত প্রত্যাঘাত নীতির অন্যতম প্রধান প্রবক্তা, তিনিই আজ প্রধানমন্ত্রী। তাও কেন সমুচিত জবাব পেল না সন্ত্রাসের মদতদাতা পাকিস্তান? প্রশ্ন ধূমায়িত দেশ জুড়ে। কিন্তু সে প্রশ্নের খুব স্পষ্ট উত্তর এখনও মোদীর কাছে নেই।

পাকিস্তানের সঙ্গে সঙ্ঘাতের প্রশ্ন যত বার উঠেছে, তত বারই বজ্রনির্ঘোষ শোনা গিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর কণ্ঠে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইতে বিন্দুমাত্র আপোস না করার হুঙ্কার শোনা গিয়েছে বার বার। কিন্তু যখন সন্ত্রাসকে সমুচিত জবাব দেওয়ার সময় এল, তখন খানিকটা যেন নিরুপায় দশা প্রধানমন্ত্রীর। উরি হামলার পর সর্বসমক্ষে প্রথম মুখ খুললেন যে দিন, কোঝিকোড় থেকে সে দিন পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন অনুন্নয়ন, দারিদ্র্য, অশিক্ষা আর কর্মসংস্থানহীনতা ঘোচানোর লড়াইতে। কিন্তু নিজেই বুঝলেন, সে বার্তা সন্ত্রাসে রক্তাক্ত ভারতবাসীর তীব্র উষ্মায় বিন্দুমাত্র জল ঢালতে পারেনি। তাই পর দিনই ফের কঠোর শব্দ প্রয়োগ করলেন। বললেন, সামরিক বাহিনী পদক্ষেপ করবেই। কিন্তু কোথায়, কী ভাবে, কোন পথে পা ফেলবে সেনা, সে দিশা মোদী এখনও দেখাতে পারেননি। সম্ভবত নিজেও এখনও সে দিশা খুঁজে পাননি।

রাজনীতিক নরেন্দ্র মোদীর বাধ্যবাধকতা তাঁকে অস্থির করে তুলছে। তাঁর যে কট্টরবাদী কণ্ঠস্বরটার অনুরণন শব্দব্রহ্মের মতো চিরন্তন হয়ে রয়েছে, সেই কণ্ঠস্বরটাই এখন অস্বস্তির খচখচে কাঁটা। পাকিস্তানকে যে কোনও মূল্যে বিপাকে ফেলা রাজনীতিক মোদীর জন্য আজ খুব জরুরি। তাই সিন্ধু জল চুক্তি বাতিলের কথা ভাবতে হচ্ছে। যুদ্ধ করা না যাক, জল আটকে দিয়ে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করার কথা ভাবতে হচ্ছে।

মনে রাখতে হবে, এই জল চুক্তিটা হয়েছিল ১৯৬০ সালে। তার পরে ১৯৬৫ সালে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে পুরোদস্তুর যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে ভারত। ১৯৯৯ সালে কার্গিলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছে দু’দেশ। সেই সব চরম পরিস্থিতিতেও কিন্তু সিন্ধু জল চুক্তির মৃত্যু পরোয়ানা লেখার কথা ভারতকে ভাবতে হয়নি। উরিতে কি তা হলে আরও গুরুতর কিছু ঘটল যে জল বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবতে হচ্ছে ভারতকে?

জল বন্ধ করে দিয়ে রাজনীতিক নরেন্দ্র মোদী নিঃসন্দেহে কিছু হাততালি কুড়োতে পারবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কী হবে? বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের মুখ যে মোদী, কূটনৈতিক ভাবে পাকিস্তানকে ঘিরে ফেলার চেষ্টায় যে মোদী, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে আরও সম্মানিত আসনে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টায় যে মোদী, সেই মোদী কোথায় থাকবেন?

অস্বস্তি শুধু সেখানেই নয়, আরও আছে। বিশ্ব জনমত আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে। কিন্তু সিন্ধু জল চুক্তির মতো আন্তর্জাতিক সমঝোতা একতরফা বাতিল হলে পরিস্থিতি রং বদলাতেই পারে।

অতএব, এ বারও অনেক ভেবেচিন্তেই পা ফেলতে হবে নরেন্দ্র মোদীকে। প্রতিশ্রুতি থেকে পিছু হঠতে তিনি পারবেন না। আবার দায়িত্বশীল, গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে ভারতের যে ভাবমূর্তি নয়াদিল্লির সুদীর্ঘ কূটনৈতিক প্রয়াসের অর্জন, তাকেও বিসর্জন দিতে পারবেন না।

সমুচিত জবাব কোন পথে তা হলে? পথটা খুঁজে নেওয়া কঠিন। কিন্তু খুঁজে নেওয়ার ভারটা নরেন্দ্র মোদীরই।

আনন্দবাজার, কলকাতা

মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

সিন্ধুর পানি নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের পানি-যুদ্ধ

চুক্তি বাস্তবায়ন ও সমস্যা সমাধানে স্থায়ী সিন্ধু কমিশন গঠন

➠ ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাক প্রেসিডেন্ট আইউব খানের মধ্যে স্বাক্ষরিত

➠ সিন্ধু ও তার যে শাখানদীগুলি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত, সেগুলির পানিবণ্টন নির্দিষ্ট করতে চুক্তি


ময়দানে নেমে যুদ্ধে সায় না দিলেও, এ বার সম্ভবত পাকিস্তানের সঙ্গে পানি-যুদ্ধে নামতে চলেছে ভারত৷ অন্তত তেমনটাই ভাবনা চিন্তা শুরু করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ এতদিন প্রধানমন্ত্রী মোদীর অবস্থান ছিল, ‘গুলির আওয়াজ আর শান্তি প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলতে পারে না৷’ কাশ্মীরের উরির সেনা ছাউনিতে হামলার পর তা বদলে দাঁড়াল, ‘রক্ত ও নদীর পানি একসঙ্গে বইতে পারে না৷’

সোমবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ৭ লোক কল্যাণ মার্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়৷ বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল, সিন্ধু পানি চুক্তি অনুসারে সিন্ধু, চন্দ্রভাগা ও ঝিলম নদীর পানির যে সিংহভাগ অংশ পাকিস্তান ব্যবহার করে, তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় কি না৷ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে কতটা এবং কী ভাবে করা যায়৷

➠ চুক্তি অনুযায়ী, বিপাশা, ইরাবতী ও শতদ্রুর পানি নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে৷

➠ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত চন্দ্রভাগা ও ঝিলমের উৎস ভারতে। সিন্ধুর উৎস তিব্বতে হলেও ভারতের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ অংশ প্রবাহিত হওয়ায় ২০% পানি সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও নৌ চলাচলে ব্যবহার করতে পারে ভারত

সংবাদপত্রের সূত্রের খবর, এই আলোচনা চলাকালীনই প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘রক্ত ও পানি একসঙ্গে বইতে পারে না৷’ কিন্তু, প্রশ্ন হল, পাকিস্তানের দিকে বয়ে চলা পানিকে কি থামানো সম্ভব? সরকারি সূত্রের খবর, চন্দ্রভাগার ওপর তিনটি বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এই বৈঠকে৷ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিশ্বাস, এই বাঁধ তৈরি হলে চন্দ্রভাগার পানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে৷

১৯৬০ সালে করাচিতে এই চুক্তি সই করেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইউব খান৷ চুক্তি অনুযায়ী, কাশ্মীর-পাঞ্জাব অঞ্চলে শতদ্রু, বিপাশা এবং ইরাবতী, এই তিনটি নদীর পানি ভারত ব্যবহার করবে৷ আর সিন্ধু, চন্দ্রভাগা ও ঝিলমের পানি মূলত যাবে পাকিস্তানে৷ তবে সেচ, পরিবহণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি ভারতও ব্যবহার করতে পারবে৷ কিন্তু, চুক্তি অনুযায়ী, এই তিনটি নদীর ওপর নয়াদিল্লি কোনও নির্মাণকাজ করতে পারবে না৷ অর্থাৎ বাঁধ দিতে পারবে না৷ কারণ, এই তিন নদীর পানি কোনওভাবে রুখে দিতে পারলে, পাকিস্তানে খরার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে! সেই কারণেই বিশ্ব ব্যাঙ্কের তত্ত্বাবধানে এই পানিচুক্তি হয়েছিল৷ গত ছাপান্ন বছরে দু-দেশের সম্পর্কে ভয়ঙ্কর চড়াই -উতরাই এলেও, টিকে গিয়েছে পানিচুক্তিটি৷ কিন্তু, এবার সেই চুক্তির ভবিষ্যতই প্রশ্নের মুখে৷

ভারতের উপর দিয়ে প্রবাহিত সিন্ধুর এপার-ওপার ব্রহ্মপুত্র এই চুক্তি বাতিল পাকিস্তানের পক্ষে ভয়ের কেন? কৃষিকাজ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ সিন্ধু, চন্দ্রভাগা ও ঝিলমের উপর পাক-কৃষির ৯০ % নির্ভরশীল৷ পাকিস্তানের জিডিপি-র ১৯.৮ % আসে কৃষি থেকে৷ কর্মক্ষম জনসংখ্যার ৪২.৩ % কৃষিতে নিযুক্ত বিদ্যুতের অভাবে গত দু’বছরে ১০০ টি কারখানা বন্ধ হয়েছে, ৫ লক্ষ মানুষ কর্মহীন৷ সিন্ধু নদীর পানি নিয়ন্ত্রিত হলে বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে পানীয় পানির আকাল দেখা দেবে সিন্ধুর পানি নিয়ন্ত্রিত হলে ভাসবে জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাবের একাংশ ভারতের উপর প্রভাব ব্রহ্মপুত্রের অংশে বাঁধ দেওয়া ও পানিবণ্টন নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের ঝামেলা চলছে

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, পানির গতি রুখে দিতে পারলে, জোর ধাক্কা খাবে কৃষিপ্রধান পাকিস্তানের অর্থনীতি৷ যাদের ঘাড়ে ভারতের থেকেও বেশি ঋণের বোঝা রয়েছে৷ কৃষি ধাক্কা খেলে, ইসলামাবাদের পক্ষে এই ঋণ শোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে৷ কিন্ত্ত, এটি যেহেতু আন্তর্জাতিক চুক্তি, তাই লঙ্ঘন করলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে৷


ব্রহ্মপুত্র নদের উপর ভারত ও বাংলাদেশের কৃষি, পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকাংশে নির্ভরশীল। সিন্ধুর উৎস তিব্বতে হলেও চীনকে এই চুক্তির বাইরে রাখা হয়েছে৷ চীন সিন্ধুর প্রবাহ রোখার সিদ্ধান্ত নিলে ভারত ও পাকিস্তান --- দু’পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সিন্ধু নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে চীন যদি ব্রহ্মপুত্রের পানি বন্ধ করে দেয়, চাপে পড়বে ভারত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সেক্ষেত্রে চুক্তি -ভঙ্গের দায় নয়াদিল্লির ঘাড়ে বর্তাবে৷ তবে এর উল্টো যুক্তিও আছে৷
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক আদালতের রায় উপেক্ষা করেছে চীন৷ কিন্তু, তারপরও কেউ তাদের টিকিটুকুও ছুঁতে পারেনি৷ দক্ষিণ চীন সমুদ্র নিয়ে বেজিং যদি এই মনোভাব দেখাতে পারে, তা হলে নয়াদিল্লি কেন পারবে না? এখানেই লুকিয়ে অন্য শঙ্কা৷ পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ভারত যদি তিন নদীর পানিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তা হলে পাকিস্তান নয়, বিপদটা আসতে পারে চীনের দিক থেকে৷ কারণ, ব্রহ্মপুত্রের পানি আটকে দেওয়ার ক্ষমতা চীনের আছে৷ তারা সেটা করলে, বিপাকে পড়বে ভারত৷ সমস্ত দিক বিবেচনা করেই, সোমবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পানি নিয়ে যাই করা হোক না কেন, আইনের পরিধির মধ্যে থেকেই হবে৷

এই প্রসঙ্গে ভারতীয় কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মণু সিংভি’র বক্তব্য, ‘চুক্তির মধ্যে থেকেই বাঁধ বানানো যেতে পারে৷ তাও একটা নয়, একাধিক৷’ যদিও, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নীলোৎপল বসুর সাবধানী প্রতিক্রিয়া, ‘এই ধরনের আন্তর্জাতিক চুক্তি ভাঙার ফল ভাল হয় না৷ কেন্দ্র বরং আগে কশ্মীরের পরিস্থিতি শান্ত করুক৷’ তবে, ভারত চাইলেও তিন নদীর পানি এখনই রোখা সম্ভব নয়৷ কারণ, চন্দ্রভাগার ওপর বাঁধ তৈরি করতে পাঁচ থেকে আট বছর সময় লেগে যাবে৷ এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের দাবি, পাকিস্তানকে বানিজ্যের ক্ষেত্রে যে মোস্ট ফেভারড্ নেশনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করুক মোদী সরকার৷ পাশাপাশি সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে, পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র’ ঘোষণা করা নিয়ে আলোচনা করা হোক৷

উরির ঘটনার পর ঘরে-বাইরে বেশ চাপে নরেন্দ্র মোদী৷ ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের প্রতি মোদীর প্রতিক্রিয়াকে ‘অত্যন্ত দুর্বল এবং ছন্নছাড়া’ বলে আক্রমণ করতে শুরু করেছে কংগ্রেস৷ এমনকি, তাদের দাবি, ‘কোঝিকোড় থেকে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তাতে তাঁর দুর্বলতাই বেশি করে প্রকাশ পেয়েছে৷’

মোদীকে কংগ্রেসের চ্যালেঞ্জ, কেন্দ্র এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিক, যাতে বোঝা যায়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছে তারা৷ ইসলামাবাদকে কড়া জবাবের দাবি উঠছে মোদীর ঘরেও৷ প্রাক্তন বিদেশ মন্ত্রী তথা প্রবীণ বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহার বক্তব্য, ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিক ভারত৷ না হলে মনে হবে, আমরা শুধু গর্জাই, বর্ষাই না৷’ তবে, প্রধানমন্ত্রী আপাতত যুদ্ধের পরিবর্তে বিকল্প পথে হাঁটতেই বেশি আগ্রহী৷




রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

‘ওহে মোদী, যুদ্ধের ভয় দেখিও না, শান্তির জন্য বরং ক্রিকেট খেলাও’

জাভেদ মিয়াঁদাদ


কাশ্মীরের  উরির সেনা ছাউনিতে ভয়াবহ হামলার ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ-পরিস্থিতির মত উত্তেজনা চলছে। এ অবস্থায় কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদের বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

করাচির বাড়ি থেকে শনিবার রাত দশটার দিকে ফোনে আনন্দবাজারকে সাক্ষাৎকারে প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে ছিলেন দিলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। লং ডিস্টেন্স কলেও গলা শুনলে মনে হবে এখুনি যেন নিজেই সীমান্তে চলে যেতে রাজি। এত ক্ষুব্ধ যে, টানা চল্লিশ মিনিটের কথোপকথনেও উত্তেজনা কমে নি।

প্রশ্ন: ভারতে রব উঠেছে উরির ঘটনার পর পাকিস্তানের সঙ্গে এখন আর ক্রিকেট না খেলার।
মিয়াঁদাদ: খেলবে না খেলবে না। ভারত কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি? উই আর নট বদার্ড। বহু বছর ধরেই তো ভারত আমাদের সঙ্গে খেলছে না। আমরা বিশ্বের এখন এক নম্বর টিম। ভারত র‌্যাঙ্কিংয়ে দুই। এ বার সত্যিকারের এক কে, সেটা নিষ্পত্তির জন্য ভারত যদি খেলতে না চায়, ভাল কথা। কেউ ওদের সাধতে যাবে না।

প্র: উরিতে যে ভাবে জওয়ানদের হত্যা করা হয়েছে, তাতে পাকিস্তান-বিরোধী প্রতিক্রিয়া কি স্বাভাবিক নয়?
মিয়াঁদাদ: (প্রচণ্ড গলা চড়িয়ে) কোনও গ্যারান্টি আছে ওটা পাকিস্তান মেরেছে? একটা প্রুফ দেখাতে পারবেন যে, সরকার ইনভলভ্‌ড ছিল? ও রকম একটা হাই সিকিওরিটি জোন। সেখানে সীমান্তের ওপার থেকে এসে মেরে দিয়ে চলে গেল, এটা হতে পারে? ইন্ডিয়ায় এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপার। মোদী গভর্মেন্টের রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্লেম পে ব্লেম। যেখানে যা কিছু হবে, পাকিস্তান। সব খারাপ কাজের জন্য পাকিস্তান দায়ী। আচ্ছা ভাই আপনাকে দুটো প্রশ্ন করি।

প্র: করুন।
মিয়াঁদাদ: খালিস্তান মুভমেন্টে কি পাকিস্তান ছিল? গুজরাতে মোদীর গণহত্যা কি পাকিস্তান করিয়েছিল?
প্র: আপনি তো প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছেন।
মিয়াঁদাদ: উত্তেজিত তো হবই। গোটা পাকিস্তানি আওয়াম রেগে গিয়েছে। ভেবেছেটা কী ভারত? যুদ্ধের হুমকিতে আমরা কেঁপে যাব? খুব ভুল করছে। আমরা অনেক পুঁচকি দেশ হতে পারি। কিন্তু আমার দেশের মানুষ মরতে ভয় পায় না। বরং মনে করে এ রকম বীরত্বের মৃত্যু হলে তারা বেহেস্তে যাবে। মনে রাখবেন, আপনাদের যেমন ক্ষেপণাস্ত্র আছে আমাদেরও তেমন ক্ষেপণাস্ত্র আছে। লড়াই হলে কারওরই কোনও সুবিধে হবে না।

প্র: দু’দেশের মহাতারকা ক্রিকেটাররা এমন উত্তেজক পরিস্থিতিতে কোনও ভূমিকা নিতে পারেন? যেমন আপনি, ইমরান, জাহির। এ দিকে সচিন, কপিল, গাওস্কর।
মিয়াঁদাদ: ক্রিকেটাররা কী করবে? এগুলো তো হচ্ছে রাজনীতিবিদদের থেকে। বেচারি ক্রিকেটারের হাতের বিষয়ই নয়। সব করছে ওই একটা লোক। মোদী। আমি অ্যাকচুয়ালি বাজপেয়ীকে খুব মিস করছি। উনি আর আডবাণী মিলে মধ্যিখানে দু’দেশের মধ্যে একটা শান্তির পরিবেশ তৈরি করেছিলেন।

প্র: আপনি মোদীকে দোষ দিচ্ছেন। অথচ মোদী বারবার পাকিস্তানের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। এমনকী নওয়াজের জন্মদিনে পাকিস্তান ঘুরেও গিয়েছেন।
মিয়াঁদাদ: তাতে কিছুই বদলাচ্ছে না। ওর অতীতই যথেষ্ট। ও তো নিজের মুখে বলেছে গোধরায় ও কী করেছে। এ রকম একটা লোক যদি একটা দেশের নেতৃত্বে থাকে, যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে।

প্র: ক্রিকেটীয় সমাধান তা হলে কী ভাবে?
মিয়াঁদাদ: দু’দেশের মধ্যে দুটো প্রতীকী ম্যাচ হোক। সেটা ওয়ান ডে হতে পারে কী টি-টোয়েন্টি। একটা ম্যাচ হবে পাকিস্তানে, একটা ভারতে।


প্র: আপনি কি নওয়াজকে ধোয়া তুলসিপাতার সার্টিফিকেট দিচ্ছেন?
মিয়াঁদাদ: আরে ভাই নওয়াজ তো এতটা নীচে নামেনি যে, সব কিছুর জন্য ভারতকে দায়ী করছে! আজকে টিভিতে শুনলাম পাকিস্তানি শিল্পী আর গায়কদের আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছেড়ে যেতে বলা হবে। কী অপমানজনক ভাবুন! ওদের ডেকে আনা হয়েছে। ওরা আপনাদের কাছে মেহমানের মতো। হঠাৎ তাদেরই কি না বলা হচ্ছে, যাও বেরিয়ে যাও! ভারতীয় অনেক শিল্পীরা তো এখানে আসেন। আমরা একজনের সঙ্গেও এ রকম ব্যবহার করেছি?

প্র: সে তো কয়েক মাস আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইডেন গ্যালারিও পাকিস্তান টিমকে অঢেল ভালবাসা দিয়েছে।
মিয়াঁদাদ: সেটা সম্ভব হয়েছিল কলকাতা বলে। ভারতের ওই একটা জায়গা যেখানে আমরা সব সময় সাপোর্ট আর নিরপেক্ষতা পেয়েছি। আমার কাছে ইডেন সর্বকালের সেরা নিরপেক্ষ মাঠ হয়ে থাকবে। যারা নিজের টিমের এক নম্বর প্লেয়ার গাওস্করের বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলেছিল। জাস্ট এই ঘটনাটাই প্রমাণ করে যে, আমার নিজের সুপারস্টারকেও যদি কোনও কারণে অপছন্দ হয়, আমি আওয়াজ তুলতে দ্বিধা করব না। আমার আপত্তি হল, ম্যাচটা তো অরিজিন্যালি কলকাতায় ছিল না। ধর্মশালা করতে পারল না বলে এল। মোদীর কাছে আমার প্রশ্ন, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাই তুমি সুনিশ্চিত করতে পারো না, তুমি কী পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলছ?

প্র: অভ্যন্তরীণ বলতে?
মিয়াঁদাদ: এই যে পাকিস্তান-বিরোধী স্লোগানে একটা শহর থেকে ম্যাচ চলে যাওয়া। কই আমাদের দেশে তো কখনও হয়নি। কাল যদি বিরাট কোহালি বলে লাহৌরে খেলতে চাই, লাহৌরেই খেলবে। করাচি হলে করাচি। গুজরানওয়ালা হলে গুজরানওয়ালা। কোথাও কোনও প্রবলেম হবে না। আজ অবধি হয়ওনি। ভারত থেকে যত মেহমান এসেছে, হাসি মুখে নিয়ে ফেরত গেছে।

প্র: সে তো পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও সত্যি। পাকিস্তান যখন খেলতে এসেছে, পাক সমর্থকদের যথেষ্ট আতিথেয়তা দেখানো হয়েছে।
মিয়াঁদাদ: আমার বক্তব্য শুধু সেটা নয়। আমি বলতে চাইছি যে সরকার দেশে একটা বিক্ষোভ সামাল দিতে পারে না, যারা নিজের সেনা ছাউনির মধ্যে বলে অন্য দেশ মেরে দিয়ে যাচ্ছে, তাদের কী বিশ্বাসযোগ্যতা, বোঝাই যাচ্ছে। আরে ভাই, নিজের দেশকেই তুমি ম্যানেজ করতে পারছ না। তুমি অন্য দেশের দিকে আঙুল তোলো কী করে?
দু’দেশের সম্পর্ক খারাপ এই লোকগুলোই করে। নিজের স্বার্থে করে। দু’দেশের জনগণ করে না।

প্র: আপনি নিজেই তো রাজনৈতিক নেতাদের মতো কথাবার্তা বলছেন।
মিয়াঁদাদ: একটুও না। বরং আমি সাধারণ মানুষের সেন্টিমেন্ট থেকে বলছি। ভারতকে মনে রাখতে হবে, পৃথিবী আগের মতো নেই। মিডিয়াও আর আগের সেই মিডিয়া নয়। এখন সবাই জানে কোথায় কী হচ্ছে। আমার প্রস্তাব হল, একটা গণভোট করা হোক ভারতে। দেখা হোক পাকিস্তান সম্পর্কে কী মনোভাব।

প্র: আপনার মতে সেই ভোটে কী হবে?
মিয়াঁদাদ: শতকরা নব্বই শতাংশ বলবে পাকিস্তান নিয়ে তাদের কোনও অসূয়া নেই। বলবে না দশ শতাংশ। ঠিক সেই পার্সেন্টেজ যারা ঘোঁটটা পাকাচ্ছে।

প্র: সরাসরি বলুন আপনার মতে উরির ঘটনায় পাকিস্তান জড়িত নয়?
মিয়াঁদাদ: অবশ্যই নয়। উগ্রপন্থী আক্রমণ তো এখন পৃথিবীর সর্বত্র হচ্ছে। আমাদের দেশে দৈনিক কত লোক মারা যাচ্ছে জানেন? আমাদের তো তা হলে বলতে হয় প্রত্যেকটা উগ্রপন্থী আক্রমণের জন্য ভারত দায়ী।

প্র: এই সময় নামী ফিল্মস্টার বা ক্রিকেটাররা কি গুডউইল অ্যাম্বাস্যাডরের কাজ করতে পারেন?
মিয়াঁদাদ: করতে পারলে ভাল হত। ক্রিকেটার বা ফিল্মস্টারদের ভালবাসার ব্যাপারে তো মধ্যিখানে কোনও কাঁটাতার নেই। বিরানব্বইয়ে আমরা যখন বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলছি, ভারত থেকে প্রচুর সাপোর্ট পেয়েছিলাম। সমস্যা হল আমাদের হাতে তো কিছু নেই। কে শুনছে আমাদের কথা? সব ঠিক করছে পলিটিশিয়ানরা। আর নিজেদের ধান্দার জন্য বিরোধটা জিইয়ে রাখছে।

প্র: উরির ঘটনার পর ভারতীয় জনগণও কিন্তু খুব ক্ষুব্ধ।
মিয়াঁদাদ: আমি বিশ্বাস করি না। বরং আমি মোদীকে বলতে চাই, দুবাইয়ে যখন প্রবাসী ভারতীয়রা বসে পাকিস্তানের ম্যাচ দেখেন, কই তাঁদের চোখে তো আমি কোনও বিদ্বেষ দেখি না। কানাডায়, আমেরিকায়, ইংল্যান্ডে, দুবাইয়ে, যখন পাকিস্তানি আর ভারতীয়রা পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ বসবাস করেন, তখন তাঁদের মধ্যে তো কোনও ক্ষোভ দেখি না। তা হলে এই দুটো দেশের মধ্যে তৈরি হয় কেন?

প্র: ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড প্রধানও তো বলেছেন, এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট নয়।
মিয়াঁদাদ: ভারতীয় বোর্ডের কথা ছাড়ুন। চিরকাল নিজেদের ধান্দায় পাকিস্তানকে ব্যবহার করেছে। পাকিস্তান এসেছে, এরা হোম সিরিজ করে মাল তুলে নিয়েছে। পাল্টা যখন যাওয়ার কথা ছিল, যায়নি। এই তো ক’বছর আগে জারদারির আমলে পাকিস্তান পাঁচটা ম্যাচ খেলে গেল ভারতে। স্রেফ এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে যে, এর পর ভারতও আসবে। কোথায় কী? পাকিস্তান আসা দূরস্থান, ভারত দুবাই অবধি খেলতে যেতে রাজি হল না। আজ বলছে খেলবে না। আমরা বলছি, এটা আর নতুন কথা কী? তুমি তো ভাই বহু বছরই খেলছ না। যখন নিজের দেশে ওয়ার্ল্ড কাপ করছ, তখন আমাকে ব্যবহার করছ। ওয়ার্ল্ড কাপ শেষ হয়ে গেলেই আমি আবার ছিবড়ে।

প্র: আপনার মতে দু’দেশে টেনশন তা হলে কমবে কী ভাবে?
মিয়াঁদাদ: ক্রিকেট দিয়েই কমাতে হবে। যুদ্ধ করে কোনও লাভ নেই। যুদ্ধের পরিণতি ভয়ঙ্কর। আবার বলি, মুসলমানরা যুদ্ধে ভয় পায় না। প্রশ্ন হল, আমার মতো— আমার বয়সীরা তো জীবন কাটিয়ে ফেলেছে। আমার পরের প্রজন্ম, যারা জীবন দেখেনি, তারা যুদ্ধে প্রাণ দেবে কেন?

প্র: ক্রিকেটীয় সমাধান তা হলে কী ভাবে?
মিয়াঁদাদ: আমার মতে দু’দেশের মধ্যে দুটো প্রতীকী ম্যাচ হোক। সেটা ওয়ান ডে হতে পারে কী টি-টোয়েন্টি। একটা ম্যাচ হবে পাকিস্তানে, একটা ভারতে।

প্র: পাকিস্তানে তো ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট হয় না।
মিয়াঁদাদ: এটা তেমন হলে ফ্রেন্ডলিও করা যেতে পারে। কিন্তু দু’দেশেই হতে হবে। নইলে আওয়ামের বিশ্বাস ফিরবে না। ভারতীয় বোর্ডের চিরাচরিত ব্যবহার চলবে না। এক বার আমরা যাব, এক বার তোমরা আসবে। আমার স্লোগান— যুদ্ধে যেও না, ক্রিকেটে ফেরো। 

হিলারি-ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব



২৬ সেপ্টেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট৷ মুখোমুখি বিতর্কে দেখা হবে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ মার্কিন নির্বাচনে এই প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট সাংবিধানিক না হলেও বহুদিনের প্রথা৷ যে প্রথা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ নির্বাচনের ঠিক দোরগোড়ায় মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেন প্রধান দুই প্রতিপক্ষ৷ বলা হয় দেড় ঘণ্টার অনুষ্ঠানটি নির্বাচনী পরিভাষায় যাদের ‘ফ্লোটিং ভোটার’ বলে, তাঁদের প্রভাবিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়৷ মনোযোগী ছাত্রীর মতো তাই এই বিতর্কের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন হিলারি ক্লিন্টন৷ ট্রাম্প যদিও বিতর্ককে অতটা গুরুত্ব দিতে নারাজ৷ যা চিন্তায় রেখেছে ট্রাম্পের ডিবেট কোচিং টিম’কে৷ দেখা যাক কে কেমন ভাবে তৈরি হচ্ছেন দুই প্রার্থী৷ প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে মার্কিন মুলুকে সকলেই থাকবেন হয় টিভির সামনে না হয় রেডিও কানে৷

নির্বাচনী প্রচারে নাগাড়ে একে অপরকে গালমন্দ করেছেন হিলারি-ট্রাম্প৷ যদিও হিলারি শিবির মনে করছে, অনেক সময়ই শালীনতার সীমা টপকে গিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ বিতর্কে ট্রাম্পের সেই ‘কদর্য’ চেহারাটা তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন হিলারি৷ পাশাপাশি আক্রমণের পথও তৈরি ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর৷ এ ক্ষেত্রে হিলারি প্রশ্ন সাজাচ্ছেন ট্রাম্পের বার্ষিক আয় নিয়ে৷

হিলারির মতো না হলেও প্রস্ততি রয়েছে ট্রাম্পেরও৷ বিতর্কের মাঝে ‘আপনি মিথ্যা বলছেন’ বলে হাক ছাড়তে পারেন হিলারি, আশঙ্কা ট্রাম্প শিবিরের৷ এ মতো পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে কী উত্তর দিতে হবে, ট্রাম্পকে তাই শেখাচ্ছে ডিবেট কোচিং টিম৷ 

এদিকে বিতর্কে বেশি খুঁটিনাটি আলোচনায় আগ্রহী নন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী৷ তিনি মনে করেন সাধারণ মানুষ অতকিছু মনে রাখতে পারেন না৷ ট্রাম্প আগ্রহী কর্মসংস্থান, সন্ত্রাসবাদ, সীমান্ত সুরক্ষা ইত্যাদি নিয়ে৷

বিতর্কের মঞ্চে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ৷ যে দিকে বিশেষ নজর রয়েছে হিলারির টিমের৷ মঞ্চে ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মেলানো থেকে বিতর্ক শেষে ‘গুড বাই’ বলে নেমে আসা--- প্রতিটি পদক্ষেপের ঘড়ি ধরে প্রস্ত্ততি নিয়েছেন হিলারি ক্লিন্টন৷ ই-মেল বিতর্কে তাঁকে বিপাকে ফেলতে চাইবেন ট্রাম্প, ভালোই জানেন হিলারি৷ তাঁর পাল্টা হবে আয়কর জমা না দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ট্রাম্পকে আক্রমণ৷ উল্টোদিকে হিলারির নিউমোনিয়ায় নিয়ে পড়াশোনা সেরে ফেলেছেন ট্রাম্প৷ প্রাইমারির বিভিন্ন বিতর্কে বিভিন্ন সময়েই প্রতিপক্ষকে যা নয় তাই বলে হ্যাটা করেছেন তিনি৷ তবে মুখোমুখি বিতর্কে যাতে ট্রাম্পকে কর্কশ মনে না হয়, সে দিকেও নজর থাকছে রিপাবলিকান শিবিরের৷ তাছাড়া অযথা ডিবেটের মডারেটরদের সঙ্গে ঝামেলাও না জড়াতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ট্রাম্পকে৷কোনও বড় টুর্নামেন্টের আগে যে ভাবে খেলোয়াড়েরা পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে অনেক আগেই সেই শহরে পৌছে যান, হিলারির বন্দোবস্তটাও ঠিক তেমনই৷ প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট যে অডিটোরিয়ামে হবে, ঠিক তেমন একটি অডিটোরিয়ামে চলছে প্রস্তুতি৷ একজনকে ট্রাম্প সাজিয়ে মঞ্চে রাখা হচ্ছে৷ সম্ভাব্য সমস্ত প্রশ্ন হিলারিকে ছুড়ে দিচ্ছেন সেই নকল ট্রাম্প৷ জবাব দিচ্ছেন হিলারি৷ প্রয়োজন মতো হিলারিকে শুধরে দিচ্ছে রিসার্চ টিম৷

তবে কোনও নকল হিলারি রেখে প্রস্ত্ততিতে নেই ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তিনি হিলারি কী বলবেন তা নয়, নিজে কী বলবেন সে নিয়েই বেশি আগ্রহী৷ ফলে ট্রাম্পকে নিয়ে সমস্যাও রয়েছে৷ বিতর্ক চলাকালীন মাঝেমধ্যেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন৷ ফলে মন দিয়ে না-শোনার খেসারতও দিতে হয়েছে কয়েকবার৷ প্রেসিডেন্সিয়াল এ ডিবেট নিয়ে হিলারির নিষ্ঠা নিঃসন্দেহে ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থীকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে৷ তাছাড়া সময়মতো বক্তৃতাকে কাটছাঁট করার সহজাত ক্ষমতা রয়েছে হিলারির৷ বিতর্কে সময়ে টান পড়লে, তা কাজে আসবে৷ 

ট্রাম্পের শক্তি তাঁর ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ ইমেজ৷ কখন যে কী বলে বসেন, করে বসেন, কেউ জানে না৷ এই পথে হেঁটে অনেক সময় ডিভিডেন্ড-ও পেয়েছেন ট্রাম্প৷ প্রতিদ্বন্দ্বীর চোখে চোখ রেখে কথা বলায় ট্রাম্পের জুড়ি মেলা ভার৷ দুর্বলতামাঝেমাঝেই বড় আড়ষ্ট লাগে হিলারিকে৷ এটাই সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থীর৷ তাছাড়া তাঁর সততা নিয়ে প্রশ্ন তুললেই কেমন যেন কুঁকড়ে যান হিলারি৷ সকলেই জানে বিদেশ সচিব হিসেবে ব্যক্তিগত ই -মেল ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই৷ এ নিয়ে স্পষ্ট, সংক্ষেপে উত্তর তৈরি রাখছেন হিলারি৷ কিন্ত্ত ক্লিন্টন ফাউন্ডেশনে দেশ-বিদেশের অনুদান বা স্বামী বিল ক্লিন্টনের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, তিনি কেমন সামলাবেন সে নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ 

বেমালুম মিথ্যে বলাটা আবার ট্রাম্পের রোগ৷ প্রয়োজন পড়লেই দিনকে রাত, রাতকে দিন করে ফেলতে সিদ্ধহস্ত ট্রাম্প৷ প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে সে দিকে খেয়াল না রাখলে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় থাকবে ষোলআনা৷ যেমন ওবামার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা ট্রাম্প, বিতর্কে তা চেপে যাওয়ার চেষ্টা করলেই বিপদে পড়বেন৷ অতীতের ভুল ঢাকতে গিয়ে মিথ্যে বলাটা হিতে বিপরীত হবে বলে আশঙ্কা ট্রাম্প শিবিরের৷ তাই ওবামার প্রসঙ্গ উঠলে কী ভাবে সামলান ট্রাম্প, তা নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে৷ ডিবেট টিমঘরে একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট থাকলে যে সুবিধাটা হয়, সেটা পুরোপুরি নিচ্ছেন হিলারি৷ হিলারির রিসার্চ টিমে রয়েছেন বিল ক্লিন্টন৷ তবে ট্রাম্পের দলও খারাপ নয়৷

অপেক্ষা এবার সেই দিনের৷ যে দিন মুখোমুখি হচ্ছেন হিলারি ক্লিন্টন-ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ দেড়ঘণ্টার অনুষ্ঠানটি লাইভ সম্প্রচার করবে আমেরিকার টিভি, রেডিয়োগুলি৷ বাদ যাবে না ওয়েব দুনিয়াও৷ প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে মার্কিন মুলুকে সকলেই থাকবেন হয় টিভির সামনে না হয় রেডিও কানে৷

শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক ও কূটনৈতিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়


অয়নজিৎ সেন, এবেলা (আনন্দবাজার গ্রুপের দৈনিক) কলকাতা  

পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতাদের তালিকা তৈরি করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক স্তরে কড়া ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক মহলকে সম্মত করার ক্ষেত্রেও ভারতের বড় বাধা চিন।

উরি হামলার পর থেকেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার কৌশল নিয়েছে ভারত। এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন দেশকে পাশেও পেয়েছে নয়াদিল্লি। কাশ্মীর ইস্যুকে খুঁচিয়ে তুলে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার অধিবেশনে এই বিষয়ে কোনও দেশকেই পাশে পায়নি পাকিস্তান। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান-কি-মুনও নিজের বক্তব্যে কাশ্মীর প্রসঙ্গের উল্লেখ করেননি। নওয়াজ শরিফকে কটাক্ষ করে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি মহম্মদ আকবরউদ্দিন বলেন, ‘১৩১টির মধ্যে ১৩০টি দেশই পাকিস্তানের তোলা বিষয় নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। এর থেকে কী প্রমাণিত হয়?’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ভারতকে যে সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে হচ্ছে, গোটা বিশ্ব তা নিয়েই উদ্বিগ্ন। পাকিস্তান তোলা কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা নেই।

কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করেও কি ভারতের কোনও লাভ হবে? অতীত অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য কথা বলছে।

১৯৯০ থেকে ২০০১ পর্যন্ত কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল পাকিস্তান। পরমাণু বোমা তৈরি এবং ১৯৯৯ সালে মুশারফ সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের জেরে পাকিস্তানের প্রাপ্য বিভিন্ন অনুদানের উপরেও তখন নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছিল। তাতেও অবশ্য পাকিস্তানের মাটি থেকে সন্ত্রাসকে প্রশয় দেওয়া বন্ধ হয়নি। সেই সময়েও ইসলামাবাদের মদতে কাশ্মীর দিয়ে ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশ জারি ছিল। শুধু তাই নয়, পঞ্জাবে খালিস্তান আন্দোলনকে উস্কে দেওয়া এবং আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধেও প্রত্যক্ষ মদত যেত পাকিস্তান থেকে। ফলে, এবারেও পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা করলে ইসলামাবাদ ইসলামিক সন্ত্রাসের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক ছেদ করবে, নয়াদিল্লির এই ভাবনা কতটা বাস্তবোচিত, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, গোটা বিশ্বে কোণঠাসা হলেও ইসলামাবাদের বড় ভরসার নাম এখন বেজিং।

বিশ্ব যখন উরিতে জঙ্গি হামলার নিন্দা করছে, তখন সেই কাশ্মীরকে হাতিয়ার করেই উরি হামলার ব্যাপারে পাকিস্তানের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার অধিবেশনে যোগ দিয়ে ফেরার পথে লন্ডনে তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ভারতের অত্যাচারের বদলা নিতে কাশ্মীরের বাসিন্দারাই হয়তো উরির সেনাঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে।

শুধু তাই নয়, পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতাদের তালিকা তৈরি করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক স্তরে কড়া ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক মহলকে সম্মত করার ক্ষেত্রেও ভারতের বড় বাধা চিন। কারণ, কাশ্মীর ইস্যুতে অতীতেও বেজিং পাকিস্তানকে সমর্থন জানিয়েছে। আবার পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া জঙ্গি নেতাদের তালিকা বা প্রত্যক্ষ প্রমাণ দিয়ে ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানালেও তাতে বাগড়া দেবে চিনই। আর পাকিস্তানকে কোনও দেশ আক্রমণ করলে চিন যে তাদের পাশেই থাকবে, বেজিংয়ের থেকে সেই আশ্বাস ইতিমধ্যেই পেয়েছে ইসলামাবাদ।

ফলে উরি হামলার বদলা নেওয়ার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক বা কূটনৈতিক, যে পথেই ভারত এগোক না কেন, তার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
ভারতের সমস্যা আমাদের মতই, পার্থক্য তাদের আইনের শাসন আমাদের চেয়ে উন্নত

এ কে এম শাহনাওয়াজ  

আমার এক নিকটাত্মীয় দিনকয়েক আগে বলছিলেন তিনি আর সংবাদপত্র পড়বেন না, টেলিভিশনের খবর শুনবেন না। টিভি চ্যানেলের স্ক্রলে চোখ রাখবেন না। এসব জায়গায় এখন বেশিরভাগ খবরই দুঃসংবাদ-হৃদয়বিদারক। সবক’টি একসঙ্গে একটি অন্ধকার সময়ের কথা বলছে। বললেন, ‘ক্রমাগত এসব খবর দেখে-শুনে হৃদযন্ত্রে চাপ অনুভব করছি। সংবাদভীতি আমাকে পেয়ে বসেছে।’ আমি তার কষ্ট বুঝি, আর এটিও বুঝি যে মানুষ উটপাখি নয়। বালুতে মুখ গুঁজে ঝড়ের বিপদ এড়াবার ব্যর্থ চেষ্টা করতে পারে না। তাই আমি আমার হৃদযন্ত্রকে যত্নে শক্ত রেখে অভ্যাসবশত প্রতিদিনের সংবাদে চোখ রাখি। টিভি স্ক্রলের চলমান লেখা থেকে গুনে বের করার চেষ্টা করি দুর্ঘটনা, খুনোখুনি জাতীয় খবরের বাইরে ভালো এবং আশাবাদী খবর কটা পাই। এ ধরনের খবর দৈবাৎ শতকরা হিসেবে ১০টি পেলেই আনন্দিত হওয়ার ভান করি।

২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় একই অভ্যাসে টেলিভিশনের চলমান স্ক্রলে চোখ রাখলাম। দুঃসংবাদ নিয়ে আসা খবরের মিছিল তৈরি হল যেন। যেমন- বরিশালের সন্ধ্যা নদীতে লঞ্চডুবি। শিশুসহ ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার। নিখোঁজ ২০ জন। নারায়ণগঞ্জের বন্দরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত তিনজন- তদন্ত কমিটি গঠন। ফরিদপুরে পুত্রের দেয়া আগুনে দগ্ধ পিতা রফিকুল হুদার মৃত্যু। জয়পুরহাটে ছোট ভাইয়ের লাঠির আঘাতে বড় ভাইয়ের মৃত্যু। এবার ঈদযাত্রায় সড়ক ও রেলপথে দুর্ঘটনার সংখ্যা ১৯৩। মৃত্যু ২৬৫। রাজধানীর শ্যামপুরে ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে ৭ বছরের শিশুকে পিটিয়ে হত্যা। রাজশাহীতে যাত্রীবাহী বাস রাস্তা ছেড়ে ঢুকে গেছে পথের পাশে মানুষের বাড়িতে। ঘুমন্ত স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু, অনেকে আহত। মহাখালীতে ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু। ফেনীতে কাঞ্চন নদীর তীরে যুবকের মৃতদেহ। টঙ্গীর ফয়েল কারখানা বিস্ফোরণে আহত আরও একজনের মৃত্যু। সুন্দরবনে বনদস্যুরা ১০ জন জেলেকে অপহরণ করেছে ইত্যাদি। পরদিন সকালে দৈনিক যুগান্তর থেকে মিছিল আরেকটু বড় করা গেল। সেখানে অতিরিক্ত হিসেবে আছে বিচার ছাড়াই ৪৪ মামলা থেকে মুক্ত রানা। শেরপুরে বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত এক। বাস উল্টে খাদে হেলপারসহ নিহত ২। ফতুল্লায় ঘরে ঢুকে সাংবাদিকের স্ত্রীকে কুপিয়ে জখম। এসব একদিনের পরিসংখ্যান। প্রতিদিন কম-বেশি প্রায় একই ধারার দুঃসংবাদ বয়ে আনছে সংবাদমাধ্যম।

আমি জানি না এমন চিত্র পৃথিবীতে আর কোনো দেশ আছে কিনা! গত ঈদের আগে আমি ৯ দিন কলকাতায় ছিলাম। প্রতিদিনই ওদেশের সংবাদপত্র পড়েছি। টেলিভিশন দেখেছি। ওখানেও খুনোখুনি, দুর্ঘটনা যে হচ্ছে না তেমন নয়। তবে সংবাদমাধ্যমের খবর মেলালে আমাদের এক সিকিভাগও নয়। ভারত আমাদের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত হয়ে যায়নি। জনসংখ্যারও আধিক্য আছে। মন্দ রাজনীতিও আছে। তবে পার্থক্য একটি রয়েছে। তা হচ্ছে, আইনের শাসন আমাদের চেয়ে উন্নত।

কোনো দলের সরকারে থাকার একটি অসুবিধা আছে। সবকিছুর দায় সরকারকেই নিতে হয়। এ কারণে সরকারকেও সতর্ক থাকতে হয়। ঈদের আগে থেকে এই যে দুর্ঘটনা ঘটছে, খুনোখুনি হচ্ছে, বড় হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল, সরকার কি তাতে বিব্রত না মর্মাহত? না হলে এসব প্রতিবিধানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন দফতরের পরিচালকদের ব্যতিব্যস্ত থাকতে দেখছি না কেন? এর বদলে একই সন্ধ্যার টেলিভিশন সংবাদে দেখলাম সরকারপক্ষ প্রায় অপ্রয়োজনে উৎসব করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল জানালেন, প্রধানমন্ত্রী কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরলে বিশাল সংবর্ধনা দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রেও আমি জানি না এমন বাড়াবাড়ি পৃথিবীর আর ক’টা দেশে করে।

বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানরাই তো রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশে যান। এগুলো একটি রুটিন দায়িত্ব। যদি এ সফরের মধ্য দিয়ে বিশাল কোনো অর্জন যুক্ত হতো- যদি আন্তর্জাতিক বড় কোনো পুরস্কারে ভূষিত হতেন প্রধানমন্ত্রী- যা দৈবাৎই কেউ অর্জন করতে পারেন, তাহলে সংবর্ধনা দেয়ার যুক্তি থাকতে পারত। আমার দুর্বাভনা, এতে প্রধানমন্ত্রীকে কিছুটা খেলো করে দেয়া হবে না তো!

দেশের এমন আচমকা সংকটের মুখে অমন সংবর্ধনা আয়োজনের কারণ কী হতে পারে? ১. মানুষের দৃষ্টির সামনে থেকে সংকট ঢাকার চেষ্টা, ২. মানুষের মৃত্যু ও সম্পদহানি নেতা-নেত্রীদের অন্তর ছুঁয়ে না যাওয়া, ৩. মানুষের প্রতি দায়বোধ না থাকা। স্বস্তি পাচ্ছি এই ভেবে, সম্ভবত অল্প সময়েই বোধোদয় হয়েছে। তাই ২২ সেপ্টেম্বর কয়েকটি পত্রিকা খুঁজেও রিপোর্টটি পেলাম না। হয়তো বাস্তবতা বুঝে পিছিয়ে গেছেন।

টেলিভিশনে দেখলাম প্রতিপক্ষের আঘাতে খুন, পুত্রের হাতে বাবা-মা খুন, ভাইয়ের আঘাতে অপর ভাইয়ের মৃত্যু। এসব পর্যবেক্ষণ করে সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, এর পেছনে রয়েছে সমাজে ভোগবাদী মানসিকতা ছড়িয়ে পড়া, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় না থাকা, সামাজিক ও পারিবারিক শিক্ষার অভাব, সুশাসন না থাকা, রাজনীতি কলুষিত হওয়া ইত্যাদি। বাস্তব পর্যবেক্ষণ এসব অভিমতকে সমর্থন দেবে।

এমপি রানাকে ৪৪ মামলার বিচার ছাড়াই মুক্ত করে দেয়ার বিষয়টি দু’দিন ধরেই মানুষের মুখে মুখে ছিল। এমন ছবি এদেশে খুঁজলে অনেক পাওয়া যাবে। আসলে ‘আইন সবার জন্য সমান’ এই আপ্তবাক্যটি এ দেশের ‘রাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের’ রাজনীতিতে কার্যকর নয়। এতে বিস্মিত বা আহত হওয়ার কারণ নেই। বিশ্বসভ্যতায় আইন বিধিবদ্ধ হওয়ার সূচনায় এমনটিই ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দের দিকে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সুমেরের শেষ রাজা ডুঙির আইন এবং এর পর প্রাচীন ব্যবিলনে এই আইনের সংস্কারকৃত ও পরিবর্ধিত আইন প্রথম লিখিত রূপ দিয়েছিলেন রাজা হাম্মুরাবি। সেখানে স্পষ্টতই ছিল আইনের বিধান শ্রেণীভেদে ভিন্ন হবে। একই অপরাধে রাজা, মন্ত্রী বা অভিজাতদের তুলনায় অনেক বেশি শাস্তি পাবে সাধারণ মানুষ। এসব উদাহরণ থেকে আমরা স্বস্তি খুঁজতে পারি।

সচেতন মানুষ এসব বাস্তবতায় খুব স্বস্তিতে নেই। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর জঙ্গি দমনে সরকারের অনেকটা সাফল্য দেখে যতটা আনন্দ পেতে চাচ্ছে মানুষ, এসব নিত্যদিনের অঘটন মানুষকে ততটাই নিরানন্দ এনে দিচ্ছে। পারিবারিক সহিংসতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভোগবাদী চিন্তা, পারিবারিক শিক্ষার অভাব পরিবারের সদস্য অনেককে সহিংস করে তুলছে। হয়তো তাদের ব্যাখ্যাটাই সঠিক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ এমন ধস নামল কেন? চারদিকে যখন কেউ দেখছে, প্রশাসনিক দুর্নীতি, রাজনৈতিক দুর্নীতি, ব্যবসায়িক দুর্নীতিতে কাছের মানুষগুলো আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে, অথচ এরা কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি না হয়ে মাথা উঁচু করে সমাজ দাবড়ে বেড়াচ্ছে তখন একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে তা সংক্রমিত হতেই পারে। পাশাপাশি যখন দেখা যায়, আইনের শাসন ক্ষমতা আর প্রভাবের দাপটে পরাস্ত তখন এরা অভীষ্টে পৌঁছার জন্য দুর্দমনীয় হতেই পারে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ভাইরাস থেকে মুক্ত করতে কাদের এগিয়ে আসা উচিত? এসব পক্ষ কি এগিয়ে আসছে? অনেকে বলছেন, উদভ্রান্ত প্রজন্মকে সংস্কৃতি চর্চায় যুক্ত করা এবং ব্যস্ত রাখা উচিত। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? এর জন্য তো প্রণোদনা দরকার, ভেঙে যাওয়া পরিবেশ ফিরিয়ে আনা দরকার। রাজনৈতিক লাভালাভ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলের শাখা-প্রশাখা থাকলেও হারিয়ে যাচ্ছে সাংস্কৃতিক সংগঠন। এসব সংগঠন কোনো পক্ষ থেকে পৃষ্ঠপোষকতাও পাচ্ছে না। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বলে একটি প্রতিষ্ঠান আছে বটে, তবে এসব পরোক্ষভাবে হলেও রাজনৈতিক ভেদবুদ্ধিতে সংক্রমিত। তাই নগরকেন্দ্রিক মানববন্ধন জাতীয় কর্মপ্রয়াস ছাড়া দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক কর্মসূচি ছড়িয়ে দেয়ার কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে প্রতাপশালী সরকারি ছাত্র সংগঠন। কিন্তু এরা সাংস্কৃতিক চর্চা থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করে। স্বপ্রণোদিত হয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকে সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলে। কিন্তু এদের সামান্য পৃষ্ঠপোষকতাও দেয়া হয় না। রাষ্ট্র তো খোঁজ রাখেই না। আগে তবু বড় কোনো আয়োজন করতে গেলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সহজে স্পন্সর পাওয়া যেত। এগুলো এখন খুব সংকুচিত হয়ে গেছে। এসব বাস্তবতার মোকাবেলা করে প্রতিবিধানের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কিন্তু সংস্কৃতি চর্চার গুরুত্বের কথা বলে বক্তৃতা করা ছাড়া এর উন্নয়নে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার যথাযথ পদক্ষেপের কথা আমরা শুনি না।

আজকাল লক্ষ করছি, সুশাসনের কথা বললে সরকারি বিধায়করা তির্যক মন্তব্য করেন। কিন্তু দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা বুঝতে চান না সুশাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া প্রকাশ্য ও গোপন কোনো লক্ষ্যই শেষ পর্যন্ত অর্জন করা যায় না। ব্রিটিশ শাসকরা দুনিয়াজুড়ে যখন উপনিবেশ বানাচ্ছিল, তখন তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল উপনিবেশগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। সাধারণ মানুষ সুখে থাকবে, আনন্দে থাকবে। আর এই আবেশ ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশ তৈরি করবে সম্পদ পাচারের। কেউ টের পাবে না। তাই ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর টনক নড়েছিল রানী ভিক্টোরিয়ার প্রশাসনের। বুঝেছিল এমন জনঅসন্তোষ তো হওয়ার কথা ছিল না। আসলে রাজক্ষমতা রাজার হাতে নেই। আছে বণিক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে। বণিকস্বার্থ আদায় করতে গিয়ে সুশাসন ব্যাহত করেছে। ক্ষেপিয়ে দিয়েছে ভারতবাসীকে। তাই চটজলদি কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ব্রিটিশ শাসন চালু করতে হয়েছিল। এসব থেকে কি কোনো শিক্ষা নেয়ার সুযোগ নেই আমাদের সরকার পরিচালনাকারীদের!

সাধারণ মানুষ দুঃসময়ে পা রাখলে সেই উত্তাপে সরকার ও রাজনীতির পাও বাঁচে না। এই সত্য আড়াল করে স্বপ্নবিলাস বাঁচিয়ে রাখা যায় না।

ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

নিউ ইয়র্কের গুগেইনহেম মিউজিয়ামে সোনার কমোড! চুরির ভয়ে বাথরুমের দরজায় নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ


আপনার বাড়ির বাথরুমের কমোডটির দাম কত? রোজ ব্যবহারের সময়ে তা হয়তো ভেবে দেখেন না। কিন্তু সেই কমোডই যদি সোনার হয়?

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের গুগেইনহেম মিউজিয়ামে ১৮ ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি একটি কমোড বসানো হয়েছে। মিউজিয়ামের পাঁচ তলার একটি বাথরুমে এই কমোডটি বসানো হয়েছে। সাধারণ দর্শকরাই এই কমোডটি ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু সোনার এই কমোড নিয়ে তো কোনও ঝুঁকি নেওয়া যায় না। তাই বাথরুমের দরজার বাইরে কমোড পাহারা দেওয়ার জন্য সবসময়ে একজন নিরাপত্তাকর্মীও মোতায়েন থাকবেন। শুধু তাই নয়, বাথরুমে ব্যাগ নিয়েও কেউ ঢুকতে পারবেন না। প্রত্যেকবার বাথরুম ব্যবহারের পরে নিরাপত্তারক্ষীরা ভিতরে ঢুকে দেখে নেবেন কমোড অক্ষত আছে কি না। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ এখনও কমোডের মূল্য নিয়ে মুখ না খুললেও শোনা যাচ্ছে এই কমোডের দাম প্রায় ২ কোটি ডলার।


সোনার এই কমোড নিয়ে তো কোনও ঝুঁকি নেওয়া যায় না। তাই বাথরুমের দরজার বাইরে কমোড পাহারা দেওয়ার জন্য সবসময়ে একজন নিরাপত্তাকর্মীও মোতায়েন থাকবেন। শুধু তাই নয়, বাথরুমে ব্যাগ নিয়েও কেউ ঢুকতে পারবেন না।



কমোডের খবর ছড়িয়ে পড়তেই অবশ্য মিউজিয়ামের অন্যান্য জিনিস ছেড়ে বাথরুমের বাইরে লম্বা লাইন দিয়েছেন দর্শকরা। হাজার হোক, সোনার কমোড। তা ব্যবহারের সুযোগ আর কে ছাড়তে চায়! মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই কমোডটিকেও একটি শিল্পকর্ম বলেই দাবি করছেন। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আমেরিকা’।

ওমরান দাকনেসকে যুক্তরাষ্ট্রে নিতে চেয়ে নিউ ইয়র্কের ছয় বছরের শিশু অ্যালেক্সের ওবামাকে  চিঠি


উপরে যার ছবিটা দেখছেন, তার নাম ওমরান দাকনেস। সিরিয়ার যুদ্ধ বিধ্বস্ত শহর আলেপ্পো থেকে বছরখানেক আগে উদ্ধার করা হয়েছিল ওমরানকে। ওমরানরা যে বাড়িতে থাকত, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তা গুঁড়িয়ে গিয়িছিল। কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপ থেকে ওমরানকে যখন উদ্ধার করা হয়,তখন তার সারা শরীরে ধুলো আর রক্ত। হতবাক হয়ে বসে থাকা শোকবিহ্বল ছোট্ট ওমরানের ছবি বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। সকলেই পরিবারহীন এই একরত্তি শিশুটির জন্য প্রার্থনা করেছিলেন।
তবে সকলকেই ছাপিয়ে গেছে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা বছর ছয়েকের শিশু অ্যালেক্স। ওমরানের ওই ছবি তার শিশু মনেও প্রভাব ফেলেছিল। ওমরানের দুঃখময় জীবনকথা জানতে পেরে সহমর্মী হয়ে ওঠে অ্যালেক্স। আর এর পরেই সকলকে অবাক করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে চিঠে লিখে ফেলে অ্যালেক্স।

চিঠিতে স্পষ্টতই জানায়, ‘আমরা ওকে পরিবার দেব, ও আমাদের ভাই হয়ে থাকবে৷ আমার ছোট্ট বোন ক্যাথরিন ওর জন্য প্রজাপতি আর জোনাকি ধরে দেবে৷ স্কুলে আমার এক বন্ধু আছে, নাম ওমর৷ সে-ও সিরিয়া থেকে এসেছে৷ ওমরের সঙ্গে ওর আলাপ করিয়ে দেব৷ তার পর সব্বাই একসঙ্গে খেলব৷’

খুদে হাতের আঁকাবাঁকা অক্ষরে লেখা চিঠির একাংশ 
লেখার খাতা থেকে ছেঁড়া পাতা৷ প্রথম লাইন ‘ডিয়ার প্রেসিডেন্ট ওবামা’৷ রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই চিঠির কথা বলতে গিয়ে চোখের কোণে অশ্রু চিকচিক করছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের৷

প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রভূত প্রশংসা কুড়িয়েছে৷ কিন্তু অ্যালেক্সকে নিয়ে চর্চা অনেক বেশি৷ টেক্সাসের এক মহিলা যেমন বলেছেন, ‘ছ’বছরের এক শিশুর মধ্যে এত মানবিকতা, ভালোবাসা, বোধ থাকতে পারে! ওঁর অভিভাবককে স্যালুট করি’ কেউ কেউ আবার এই প্রসঙ্গ তুলে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি৷ ক’দিন আগেই যে ট্রাম্প শরণার্থীদের ক্যান্ডির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, তাঁর অ্যালেক্সকে দেখে শেখা উচিত, এমন বলতেও ছাড়েননি অনেকে৷

অ্যালেক্সের উদাহরণ তুলে ধরেই এখন উন্নত দেশগুলির কাছে ওবামার আবেদন, সিরিয়ার শরণার্থীদের প্রতি বেশি করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন৷ চলতি বছরের অগস্টের মধ্যেই কমপক্ষে ১০ হাজার সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস৷ ২০১৭-এর মধ্যে আরও ১,১০ ,০০০ শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ওবামা৷ তবে, সেই আশ্রয় বা সাহায্য যদি অ্যালেক্সের মতো নিষ্পাপ খুদের কাছ থেকে আসে, তবে তার গুরুত্ব তো বেড়ে যাবেই৷ কিন্তু অ্যালেক্স ও ওমরানের কি কোনও দিন দেখা হবে? না কি এই চিঠিও এক প্রতীকি বার্তাই বহন করবে?

বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

রোগ প্রতিরোধ গবেষণায় জাকারবার্গ দম্পতির ৩০০ কোটি ডলার দেয়ার অঙ্গিকার


ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ও তার স্ত্রী শিশু বিশেষজ্ঞ প্রিসিলা চ্যান রোগ নিরাময় ও প্রতিরোধে গবেষণার কাজে ৩০০ কোটি ডলার অনুদান দেয়ার অঙ্গিকার করেছেন।

২১ সেপ্টেম্বর সানফ্রান্সিস্কোতে অনুষ্ঠিত চ্যান জুকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ নামের দাতব্য সংস্থার অনুষ্ঠানে জাকারবার্গ দম্পতি এ ঘোষণা দেন। আগামী এক দশকে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমের অনুদানের অর্থ খরচ হবে।

এ বিষয়ে অনুষ্ঠানে ড. প্রিসিলা চ্যান বলেন, ‘নিজেদের সন্তানদের জীবদ্দশাতেই রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ের লক্ষ্যে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়জনিত গবেষণায় অর্থগুলো ব্যয় করা হবে।’ তিনি বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে মিলে অভিজ্ঞতার আলোকে এ শতাব্দীতেই রোগ নিরাময়ের নতুন হাতিয়ার তৈরি করতে চান বলে অনুষ্ঠানে জানান।

এ সময় জাকারবার্গ বলেন, ‘আমাদের সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্যই আমি ও চ্যান এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব রোগ নির্মূল সম্ভব না হলেও রোগের প্রকোপ কমানো ও চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানোই তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য।’
এরই মধ্যে জাকারবার্গ দম্পতি ৩০০ কোটি থেকে ৬০ কোটি ডলার সানফ্রান্সিস্কো ভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্র বায়োহাবে অনুদান দিচ্ছে। বায়োহাব ইউসি সানফ্রান্সিস্কো, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউসি বার্কলের সমন্বয়ে গঠিত গবেষণা কেন্দ্র। স্নায়ুবিশেষজ্ঞ করি বার্গম্যান চ্যান জাকারবার্গ ইনিশিয়েটিভের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনুদানপত্রে স্বাক্ষর করছেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে বায়োহাব দুটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করবে-অ্যাটলাস কোষ (শরীরের প্রধান অঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করে) এবং এইচআইভি, ইবোলা, জিকা ও অন্যান্য নতুন রোগের পরীক্ষা।

জাকারবার্গ আশা প্রকাশ করেন, ২১০০ সালের মধ্যে মানুষের গড় বয়স ১০০ এর বেশি হবে।

এর আগে ২০১৫ সালের শেষে এ দম্পতি ফেসবুকের ৯৯ শতাংশ শেয়ার চ্যান জাকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ দাতব্য সংস্থায় দেয়ার ঘোষণা দেন।

কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান-ভারত শান্তি স্থাপন সম্ভব নয়: জাতিসংঘে নওয়াজ শরিফ 




পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ জাতিসংঘের মঞ্চে হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি বুরহান ওয়ানিকে কাশ্মীরের আত্মা আখ্যায়িত করে বলেন, একটা নিষ্পাপ মুখ, যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল৷ সে লক্ষ্যেই এগোচ্ছিল৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারল না৷ ভারতীয় সেনা ওকে মেরে ফেলল --- শহিদ হল তরতাজা এক জন রাজনৈতিক নেতা।

নিজের দেশকে ‘সন্ত্রাসবাদের শিকার’ বলে মন্তব্য করে নওয়াজ শরিফ কাশ্মীরে এই মুহূর্তে গণভোট করানোর দাবি থেকে শুরু করে ভারতীয় সেনার অত্যাচারে মানবাধিকার লঙ্ঘন --- সব নিয়েইচড়া সুরে কথা বলেছেন৷

প্রতি বছরই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভার ভাষণে পাকিস্তান কাশ্মীর প্রসঙ্গ তোলে৷ এ বারও যে উরি পরবর্তী সময়ে তা হবে, তার আগাম অনুমান ছিলই৷ কিন্তু বুধবার শরিফ যে ভাবে আজাদ কাশ্মীরের দাবিতে কাশ্মীরিদের আন্দোলনকে সমর্থন করলেন ও ‘আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার’ নিয়ে সরব হলেন, তা নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে এতটা সরব হননি৷ তাঁর কথায়, ‘কাশ্মীরি মানুষের ইচ্ছাকে ভারত কোনও গুরুত্বই দিচ্ছে না৷ তারা সামরিক বলপ্রয়োগের মাধ্যমে একের পর এক মানুষকে হত্যা করছে৷ পাকিস্তান আছে সেই সব সন্তান হারানো বাবা-মায়েদের পাশে, ভাই-বোনের পাশে৷’

তিনি দাবি করেন, ভারতের সামরিক বাহিনীর অত্যাচারের জন্য শতাধিক মানুষ মারা গেছেন, অন্ধ হয়েছেন বহু৷ থামানো যাচ্ছে না এই বাহিনীকে৷ ভারতরে দমননীতিতে ‘অতিষ্ট’ হয়ে ওঠা কাশ্মীরের জন্য তিনি নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন৷ তিনি জানান, জাতিসংঘের মহাসচিব বান-কি -মুনকে তিনি কাশ্মীরের ডসিয়ার তুলে দেবেন৷ অবিলম্বে তারা যাতে তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে কাশ্মীরের প্রকৃত চিত্র বিশ্বের সামনে তুলে ধরে, সে অনুরোধও করেন শরিফ৷ তিনি এ কথাও স্পষ্ট করে দেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি স্থাপন কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সম্ভব নয়৷ নওয়াজ শরিফ দাবি করেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য পাকিস্তান বার বার চেষ্টা করেছে৷ কিন্ত্ত নয়াদিল্লির ‘শর্তসাপেক্ষে আলোচনার’ শর্ত তা হতে দেয়নি৷ অর্থাত্ শরিফ প্রমাণ করতে চেয়েছেন, কাশ্মীরসহ সব কিছু নিয়েই পাকিস্তান শান্তি স্থাপনে আগ্রহী৷ কিন্তু ভারতই তা চাইছে না৷ এবং নানা অছিলায় তা ভেস্তে দিচ্ছে৷

শরিফ অবশ্য এর পরই তিনি ভারত যে ভাবে তার অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ করছে, তা যথেষ্ট আশঙ্কার বলে মন্তব্য করে জানান, সে জন্যই পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্রের ক্ষেত্রে কোনও লাগাম টানবে না৷ কারণ ভারত সে পথে হাঁটছে না৷ তিনি এ -ও বলেন, ‘পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে সই করতে পাকিস্তানের কোনও আপত্তি নেই, যদি ভারতও তাতে সই করে৷’

তার পরেই নিজেদের অত্যন্ত ‘দায়িত্বশীল রাষ্ট্র’ হিসেবে এনএসজির সদস্যপদের দাবি করেন তিনি৷

আন্তর্জাতিক মঞ্চে হিজবুল জঙ্গিকে যে ভাবে পাকিস্তান ‘শহিদের’ মর্যাদা দিল, তাতে চমকেছেন অনেকেই৷ শরিফের এই বক্তব্য শুনে ভারতও স্বাভাবিক ভাবে প্রত্যাঘাত করেছে৷ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যে ভাবে শরিফ বুরহানের মতো একজন স্বঘোষিত সন্ত্রাসবাদীর নাম নিয়েছেন ও তাকে বিশ্ব মঞ্চে ‘কাশ্মীরের আত্মা’ বলে তুলে ধরেছেন, তা ভাবা যায় না৷ পাশাপাশি এ -ও প্রমাণ হয়ে যায়, পাকিস্তান প্রতি মুহূর্তেই সন্ত্রাসবাদকে লালন করে চলেছে৷ তবে এই ব্ল্যাকমেল ভারত মেনে নেবে না৷ কারণ শান্তি আর গুলি একসঙ্গে চলতে পারে না৷’

হোয়াটসআপ ও ফেসবুককে টক্কর দিতে এলো গুগল-এর অ্যালো

হোয়াটসআপ এবং ফেসবুক মেসেঞ্জার-কে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে গুগল নিয়ে এল তাদের নিজেদের মেসেজিং অ্যাপঅ্যালো অ্যান্ড্রয়েড আইওএস প্ল্যাটফর্ম, দুটোতেই মিলছে৷ একই সঙ্গে প্রিভিউ সংস্করণেরগুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট’-এরও আবির্ভাব ঘটাল অ্যালো৷ ব্যবহারকারীর যে কোনও মুশকিল আসান করবে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট৷ দেবে সমস্ত রকম সাহায্য৷ শুধু লিখতে হবে কোন সাহায্য প্রয়োজন৷ গুগল গ্রুপ প্রোডাক্ট ম্যানেজার অমিত ফুলে বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক দিন বন্ধুবান্ধব পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার্থে মেসেজিং-এর উপর ভরসা করি৷ কিন্তু, অনেক সময়েই আমাদের মেসেজ চালাচালিতে বিঘ্ন ঘটে নানা কারণে৷ কখনও ফ্লাইট স্টেটাস চেক করতে, কখনও আবার নতুন রেস্তোরাঁ খুঁজতে৷ সেই কারণেই আমরা অ্যালো তৈরি করেছি৷ এই মেসেজিং অ্যাপে মেসেজ চালাচালিতে কোনও সময়েই বিঘ্ন ঘটবে না, কারণ যা কিছু আপনার দরকার তার জোগান একই সঙ্গে পাওয়া যাবে৷’ 

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যালো- বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে স্মার্ট রিপ্লাই, ছবি, ইমোজি স্টিকার শেয়ার করার সুবিধা৷ ভারতীয় ব্যবহারকারীদের জন্য রয়েছেহিংলিশ’- স্মার্ট রিপ্লাই পাঠানোর সুযোগ৷ ভারতীয় ব্যবহারকারীদের মধ্যে অ্যাপটিকে জনপ্রিয় করতে নিরপেক্ষ শিল্পীদের তৈরি ২০০-টিরও বেশি স্টিকার মিলছে অ্যালো-তে৷ 

গত মে মাসে গুগলডুয়ো অ্যালো আনার কথা ঘোষণা করেছিল৷ অ্যালো-তে রয়েছে স্মার্ট রিপ্লাই ফিচার, যার সাহায্যে আঙুলের একবারের স্পর্শেই জবাবি মেসেজ পাঠানো সম্ভব৷ ব্যবহারকারীকে স্মার্ট রিপ্লাই অপশন ছবি পাঠানোর বিষয়েও পরামর্শ দেবে৷ গ্রাহকের ব্যবহার লক্ষ্য করে তা থেকে আপনাআপনি শিক্ষা নিয়ে অ্যালো নিজেকে মানিয়ে নেবে৷ গুগল অ্যালো- সমস্ত চ্যাট এনক্রিপটেড৷ আর ইনকোগনিটো মোডে মিলবে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের সুবিধা৷ 

এদিকে গত মাসেই আবির্ভাব ঘটেছে স্কাইপে-এর প্রতিদ্বন্দ্বী ডুয়ো-র৷ ভিডিও কলিং -এর বাজারে গুগ্ল ডুয়ো অ্যাপ নিয়ে অনুপ্রবেশ করল গুগ্ল৷ অ্যান্ড্রয়েড -এর পাশাপাশি এই অ্যাপ চলবে আইওএস প্ল্যাটফর্মেও৷ অর্থাৎ, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম-এর স্মার্টফোন যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁরা তো বটেই, এই অ্যাপ ব্যবহার করে স্বচ্ছন্দে ভিডিও কলিং করতে পারবেন আইফোন এবং আইপ্যাড ব্যবহারকারীরাও, এমনই দাবি গুগ্ল কর্তৃপক্ষের৷ ভিডিও কলিং -কেজটিলতা মুক্তকরার লক্ষে গত মে মাসে তাদের ডেভেলপার কনফারেন্সে প্রথম ঘোষণা করে গুগ্ল কর্তৃপক্ষ৷ এক বিবৃতিতে ফুলের মন্তব্য, ‘কারও সঙ্গে একান্তে কথা বলার জন্য ভিডিও কলিং- পরবর্তী সেরা জিনিস হতে চলেছে৷ ভারতের মতো দেশে অ্যাপটি যাতে স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করা যায় , তা সুনিশ্চিত করতে এটি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে তা নেটওয়ার্কের সংযোগ ক্ষমতার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলতে পারে৷ আমাদের আশা এর ফলে ভিডিও কলিং বিষয়টি অনেক সহজ, স্বাচ্ছন্দ্যকর এবং আরও বেশি করে ব্যক্তিগত হয়ে উঠবে৷’ 

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সমস্ত ডুয়ো কল এন্ড -টু-এন্ড এনক্রিপটেড৷ অর্থাৎ, যে দুজনের মধ্যে ভিডিও কল হচ্ছে, তাঁরা ব্যতীত আর কেউই কোনও ভাবে জানতে পারবেন না, কী এবং কতক্ষণ কথা হল৷ এটা তৃতীয় পক্ষের পক্ষে জানা একমাত্র তখনই সম্ভব, যদি কারও হ্যান্ডসেটটি হাতছাড়া হয়৷ মাইক্রোসফট -এর স্কাইপে বা অ্যাপল্-এর ফেসটাইম বাজারে থাকলেও, মোবাইল ফোনে ভিডিও কলিং এখনও সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি৷ এর কারণ অবশ্য অনেক৷ তবে তার মধ্যে মূল কারণ, স্কাইপে- জন্য ব্যবহারকারীকে পৃথক অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়৷ ছাড়া এই ভিডিও কলিং অ্যাপ্লিকেশনগুলির বেশিরভাগই সব ধরনের স্মার্টফোনে ব্যবহার করা যায় না৷ 

ব্যবহারকারীর মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট থাকলেও, প্রথমবার স্কাইপে ব্যবহার করতে হলে সেই অ্যাকাউন্ট নাম বা পাসওয়ার্ড স্কাইপে নেবে না৷ তাঁকে নতুন অ্যাকাউন্ট নাম নথিভুক্ত যেমন করতে হবে, তেমনই বেছে নিতে হবে নয়া পাসওয়ার্ড৷ যাঁদের মাইক্রোসফটের অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাঁরা যদি সেই অ্যাকাউন্ট নামও বেছে নেন, সে ক্ষেত্রেও তাঁকে নথিভুক্তকরণের ঝক্কি পোয়াতে হবে৷ ডুয়ো- ক্ষেত্রে এসব সমস্যা নেই৷ গুগল-এর জিমেল, ইউটিউব এবং অন্য যে কোনও প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট থাকলেই, তা মারফত্ যত খুশি ডুয়োতে ভিডি কলিং করা যাবে৷ খরচ হবে, ইন্টারনেট অথবা ওয়াই-ফাই ডেটা৷ সেই কারণেই এখনকার শুধু ভয়েস কলিং-এর বদলে আগামী দিনে ভিডিও কলিং- রেওয়াজ হবে বলে মনে করছে গুগল৷ যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন বা যিনি আপনাকে ফোন করেছেন তাঁকে চাক্ষুস দেখা---এর আনন্দই আলাদা৷