বাংলাদেশী মেয়েদের কাজের টোপ দিয়ে যেভাবে ভারতে আনা হয়
চোরাপথে বাংলাদেশ থেকে এপারে কাজের খোঁজে এসে অন্ধকার জগতে হারিয়ে যাচ্ছে মেয়েরা। এ দেশেরও গরিব পরিবারের মেয়েদের কাজের টোপ দিয়ে কিংবা প্রেমের ফাঁদে ফেলে যৌন পল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে আসা মেয়েদের বিউটি পার্লারের কাজ, পরিচারিকার মোটা টাকায় কাজের লোভ দেখিয়ে আনা হয়। আসার পথেই যৌন নির্যাতনের শিকার হন। এমন কী ধর্ষণেরও শিকার হয়েছেন অনেকে।
সীমান্ত মৈত্র, আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা
বাংলাদেশে বাড়ি বছর পনেরোর মেয়েটির। কাজের লোভ দেখিয়ে চোরা পথে এ দেশে নিয়ে আসা হয়েছিল তাকে। গরিব পরিবারের মেয়ে অল্প কিছু টাকাতেই এ দেশে কাজ করতে রাজি হয়েছিল সে। তার পরিবারও ছেড়ে দিয়েছিল।
ধৃতকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, বাংলাদেশ থেকে ২৫ জন মেয়েকে সে এ দেশে নিয়ে এসে মুম্বইয়ের যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দিয়েছে। এক থেকে সাত লক্ষ টাকায় সে মেয়েদের বিক্রি করে।
কী ভাবে সে মেয়েদের এ দেশে নিয়ে আসে?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রেমের নাটক করে বা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কিশোরী, তরুণীদের এ দেশে আনা হয়। ওই কিশোরী পুলিশকে জানায়, ভারতে ভাল ব্যবসা করে বলে রুবেল জানিয়েছিল। এরপরেই মেয়েটিকে বিয়ে করে সে এ দেশে নিয়ে আসে। এ দিকে এখানে এসে মেয়েটি জানতে পারে মানিকগঞ্জে রুবেলের স্ত্রী ও সন্তান আছে। মুম্বইয়ে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য তাকে মিথ্যা কথা বলে নয়ে আসা হয়েছিল। কোথায় বিক্রি তা ঠিক করতে দেরি হওয়ায় ইটভাটায় আত্মগোপন করেছিল তারা বলে ওই কিশোরীর দাবি।
সম্প্রতি হাবরার পুলিশ মছলন্দপুর থেকে মহম্মদ ডালিম নামে এক আন্তজার্তিক নারী পাচারকারীকে গ্রেফতার করে। বছর বত্রিশের ডালিমের বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, সে স্বরূপনগর ও গাইঘাটা সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে এ দেশে যাতায়াত করে। পুলিশকে সে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ থেকে গরিব পরিবারের মেয়েদের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে এসে মুম্বই, চেন্নাই, দিল্লি, পাটনার যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
বনগাঁর পুলিশও সম্প্রতি দুই বাংলাদেশি কিশোরীকে উদ্ধার করেছে। তাদের পাচার করে আনা হয়েছিল। স্থানীয় এক পাচারকারীর বাড়িতে তাদের রাখা হয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ উদ্ধার করে।
পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশের বক্তব্য, বনগাঁ, বসিরহাট মুম্বাই নারী পাচারের দল বেশ সক্রিয়। বাংলাদেশ থেকে আসা মেয়েদের বেশিরভাগই পারিবারিক অবস্থা খুব খারাপ। তাদের বিউটি পার্লারের কাজ, মোটা টাকায় পরিচারিকার কাজের লোভ দেখিয়ে এ দেশে আনা হয়। আসার পথেই যৌন নির্যাতনের শিকার হন অনেকে। এমন কী ধর্ষণেরও শিকার হয়েছেন অনেকে বলে জানায় পুলিশ।
এরপরেই দালালদের হাতে পড়ে তাদের জায়গা হয় মুম্বাই, পুণে, দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন শহরের যৌন পল্লিতে। পাচারের পর দেশে ফেরার পথ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, রাতে তারা মেয়েদের কান্নাকাটির আওয়াজ পান। সীমান্তে কাঁটাতার না থাকার কারণেই চোরাপথে মানুষ পারাপার চলছে। বিশেষ করে গাইঘাটার আংরাইল ও স্বরূপনগরের হাকিমপুর সীমান্ত দিয়ে বেশি চোরাপথে যাতায়াত হয়। ওই পথ বন্ধ করা না গেলে নারী পাচার সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করা যাবে না বলে এলাকাবাসীর দাবি।
পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘নারী পাচার বন্ধ করতে বিএসএফের সঙ্গে যৌথ ভাবে বৈঠক করা হচ্ছে। সীমান্তবর্তী থানাগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে।’’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন