বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

রাষ্ট্রপতি ভবন রাইসিনা হিলে’র রহস্যদুয়ার খুললেন মুগ্ধ প্রণব মুখোপাধ্যায় 

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যাঁরা এসেছেনইন্ডিয়া গেট থেকে রাইসিনা হিলসের দিকে তাকিয়ে দেখেছেনতাঁদেরই চোখ গিয়ে আটকেছে নর্থ ব্লকসাউথ ব্লকের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার শেষপ্রান্তে থাকা রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে৷ এতদিন সর্বসাধারণের নাগালের বাইরে থাকা ওই বিশাল ভবনের পরতে পরতে ইতিহাসতার সঙ্গী কত ঘটনাকত গল্প যেমন প্রতিটি ঘরের রয়েছে একটা নাম৷ একটি ঘরের নাম মর্নিং রুম৷ সেখানে এক গভর্নর জেনারেলের স্ত্রী সকা লের চা খেতেন৷ নিয়মকানুনও অসংখ্য৷

প্রণব মুখোপাধ্যায় চার বছর আগে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর সাধারণ মানুষের জন্য কী করেছেনপ্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য সবজান্তা গুগল হাতড়াবার দরকার নেই৷ জবাবটা হলএকসময় বড়লাটের আবাসস্থলরহস্যময়’ রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজা সাধারণ মানুষের জন্য হাট করে খুলে দিয়েছেন তিনি৷

রাইসিনা হিলসের চোখ ধাঁধানো বিশাল প্রাসাদ আজকাল যে কেউ ইচ্ছে করলেই অনলাইনে আবেদন করে ঘুরে দেখতে পারেন৷ আগামী অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনের মিউজিয়ামও খুলে যাবে আম জনতার জন্য৷ সারা ভারত থেকে জ্ঞানীগুণীদের সাতদিন ধরে রাষ্ট্রপতি ভবনে এসে থাকার নিয়মিত আমন্ত্রণও জানান প্রণববাবু৷ যার পোশাকি নামইন রেসিডেন্স এখনও পর্যন্ত যোগেন চৌধুরী, অমিতাভ ঘোষের মতো নানা ক্ষেত্রের সফল ১৪০ জন থেকে গিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ভবনে৷

কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজা সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়ার চিন্তাটা কী ভাবে এল তাঁর মাথায় ? মঙ্গলবার রাতে তার ব্যাখ্যাটা প্রণববাবু নিজেই দিলেনইন রেসিডেন্সঅনুষ্ঠানে৷ চার বছর আগে রাষ্ট্রপতি হয়ে এই বিশাল প্রাসাদে ঢোকার আগে ৪৩ বছর ধরে প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি ভবনে অসংখ্যবার এসেছেন৷ তবে তা নেহাতই কাজের খাতিয়ে৷ মোট য় বার বাজেট ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করেছেন৷ প্রতিবারই সই নিতে তাঁকে রাষ্ট্রপতি ভবনে আসতে হত৷ যতবার মন্ত্রী হয়েছেন, ততবারই এখানে শপথ নিয়েছেন৷ আর সরকারি ভোজসভায় (ব্যাঙ্কোয়েট) যে কতবার এসেছেন তার হিসেব রাখা কঠিন৷ কিন্তু সে সবই ছিল ধরাবাঁধা তিনটি জায়গায় যাতায়াত৷ অশোক হলে শপথ, ব্যাঙ্কোয়েট হলে সরকারি ভোজসভা, আর যেখানে বসে রাষ্ট্রপতির সই নিতেন৷ প্রণববাবুর কথায়, ‘৪৩ বছর ধরে রাষ্ট্রপতি ভবনের ঢিলছোড়া দূরত্বে থেকেছি৷ কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভবন সম্পর্কে আমার যে কোনও ধারণাই ছিল না৷

রাষ্ট্রপতি ভবনে আসার পর প্রথম দু-মাস তাঁকে থাকতে হয়েছিল গেস্ট হাউসে৷ কারণ, রাষ্ট্রপতির ফ্যামিলি স্যুইট তখন তৈরি হচ্ছে৷ এই গেস্ট হাউসেই এক সময় থাকতেন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেলরা৷ স্বাধীনতার পরে চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারি যখন দেশের প্রথম ভারতীয় গভর্নর জেনারেল হন, তখন তিনি সেই জায়গাটা গেস্ট হাউস করে নেন৷ আর পুরোনো গেস্ট হাউসটা হয় রাষ্ট্রপতির থাকার জায়গা৷ এখনও সেই ব্যবস্থা চলছে৷ প্রণববাবুর স্বীকারোক্তি, ‘গভর্নর জেনারেলের ঘরটা এত বড় যে বলে বোঝানো যাবে না৷ আমার তো ওখানে থাকতে রীতিমতো অস্বস্তি হত৷মূল রাষ্ট্রপতি ভবনেই ৩৪০টি ঘর আছে৷ প্রায় চার বছর কাটিয়েও সবকটি ঘরে এখনও যেতে পারেননি তিনি৷ ৩২০ একরের জমিতে তৈরি রাষ্ট্রপতি ভবনে শীতকালে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি৷ লাইব্রেরিটিও দেখার মতো৷ রাষ্ট্রপতি ভবনের পাখিদের নিয়ে কিছু দিন আগেই একটি বই প্রকাশ হয়েছে৷ এই ভবনে বাস করে যাওয়া গভর্নর জেনারেল, বিদেশি অতিথিদের নিয়েও বই প্রকাশ হয়েছে৷ গর্বের সুরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রতিটি ঘরে বই রয়েছে৷ এত বই যে, পাঁচ বছর তো দূর, পনেরো বছর থাকলেও সেই বই পড়া শেষ হবে না৷ এমনই রহস্যময় এই ভবন৷ আমি চাই, অন্যরাও এই রহস্যের আস্বাদ নিন৷ সেই ভাবনা থেকেই ইন রেসিডেন্স চালু হয়েছে৷বেশ কয়েকটি মজার অভিজ্ঞতাও শুনিয়েছেন প্রণববাবু৷ বলেন, ‘একটি বাচ্চা ঘড়িতে এমন অ্যালার্ম লাগিয়েছিল, যা নির্দিষ্ট সময়ে বলত, টাইম ফর মেডিসিন৷ সে তার দাদুর জন্য সেই ঘড়ি বানিয়েছিল৷ তাকেও আমি ইন রেসিডেন্স অনুষ্ঠানে এনেছি৷’ 

রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রণববাবুকে মাত্র দুদিন সময় দেওয়া হয়েছিল এখানে আসার জন্য৷ তিনি বলছিলেন, ‘আমাকে জানিয়ে দেওয়া হল, নিজস্ব জিনিসপত্র সব একবারে নিয়ে আসতে৷ কারণ নিয়ম হল, একবার রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলে দিল্লিতে থাকলে কখনও রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরে রাত কাটানো যাবে না৷ তাই মেয়েকে পাঠিয়েছিলাম সব দেখে আসতে৷ সে সময় বেশ নার্ভাস লাগছিল৷চার বছর পর এখন বঙ্গসন্তান রাষ্ট্রপতির কল্যাণে এখানকার বিরাট হেঁসেলে ঢুকে পড়েছে যাবতীয় বাঙালি খাদ্যসম্ভার৷ রসগোল্লা, সন্দেশ, মিষ্টি দই তো বটেই, আলুপোস্ত, সরষে ইলিশ, লুচি ছোলার ডাল থেকে শুরু করে যাবতীয় বাঙালি সুখাদ্য৷ আর এসেছেন বাঙালি গুণীজনরা৷ ইন রেসিডেন্স অনুষ্ঠানে সাতদিন কাটিয়ে, বুধবারই ফিরে গেলেন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এর পর আসবেন পরেশ মাইতি৷ পরিবর্তনের এই হাওয়াটাও নিয়ে এসেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন