বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান-ভারত শান্তি স্থাপন সম্ভব নয়: জাতিসংঘে নওয়াজ শরিফ 




পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ জাতিসংঘের মঞ্চে হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি বুরহান ওয়ানিকে কাশ্মীরের আত্মা আখ্যায়িত করে বলেন, একটা নিষ্পাপ মুখ, যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল৷ সে লক্ষ্যেই এগোচ্ছিল৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারল না৷ ভারতীয় সেনা ওকে মেরে ফেলল --- শহিদ হল তরতাজা এক জন রাজনৈতিক নেতা।

নিজের দেশকে ‘সন্ত্রাসবাদের শিকার’ বলে মন্তব্য করে নওয়াজ শরিফ কাশ্মীরে এই মুহূর্তে গণভোট করানোর দাবি থেকে শুরু করে ভারতীয় সেনার অত্যাচারে মানবাধিকার লঙ্ঘন --- সব নিয়েইচড়া সুরে কথা বলেছেন৷

প্রতি বছরই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভার ভাষণে পাকিস্তান কাশ্মীর প্রসঙ্গ তোলে৷ এ বারও যে উরি পরবর্তী সময়ে তা হবে, তার আগাম অনুমান ছিলই৷ কিন্তু বুধবার শরিফ যে ভাবে আজাদ কাশ্মীরের দাবিতে কাশ্মীরিদের আন্দোলনকে সমর্থন করলেন ও ‘আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার’ নিয়ে সরব হলেন, তা নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে এতটা সরব হননি৷ তাঁর কথায়, ‘কাশ্মীরি মানুষের ইচ্ছাকে ভারত কোনও গুরুত্বই দিচ্ছে না৷ তারা সামরিক বলপ্রয়োগের মাধ্যমে একের পর এক মানুষকে হত্যা করছে৷ পাকিস্তান আছে সেই সব সন্তান হারানো বাবা-মায়েদের পাশে, ভাই-বোনের পাশে৷’

তিনি দাবি করেন, ভারতের সামরিক বাহিনীর অত্যাচারের জন্য শতাধিক মানুষ মারা গেছেন, অন্ধ হয়েছেন বহু৷ থামানো যাচ্ছে না এই বাহিনীকে৷ ভারতরে দমননীতিতে ‘অতিষ্ট’ হয়ে ওঠা কাশ্মীরের জন্য তিনি নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন৷ তিনি জানান, জাতিসংঘের মহাসচিব বান-কি -মুনকে তিনি কাশ্মীরের ডসিয়ার তুলে দেবেন৷ অবিলম্বে তারা যাতে তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে কাশ্মীরের প্রকৃত চিত্র বিশ্বের সামনে তুলে ধরে, সে অনুরোধও করেন শরিফ৷ তিনি এ কথাও স্পষ্ট করে দেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি স্থাপন কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সম্ভব নয়৷ নওয়াজ শরিফ দাবি করেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য পাকিস্তান বার বার চেষ্টা করেছে৷ কিন্ত্ত নয়াদিল্লির ‘শর্তসাপেক্ষে আলোচনার’ শর্ত তা হতে দেয়নি৷ অর্থাত্ শরিফ প্রমাণ করতে চেয়েছেন, কাশ্মীরসহ সব কিছু নিয়েই পাকিস্তান শান্তি স্থাপনে আগ্রহী৷ কিন্তু ভারতই তা চাইছে না৷ এবং নানা অছিলায় তা ভেস্তে দিচ্ছে৷

শরিফ অবশ্য এর পরই তিনি ভারত যে ভাবে তার অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ করছে, তা যথেষ্ট আশঙ্কার বলে মন্তব্য করে জানান, সে জন্যই পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্রের ক্ষেত্রে কোনও লাগাম টানবে না৷ কারণ ভারত সে পথে হাঁটছে না৷ তিনি এ -ও বলেন, ‘পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে সই করতে পাকিস্তানের কোনও আপত্তি নেই, যদি ভারতও তাতে সই করে৷’

তার পরেই নিজেদের অত্যন্ত ‘দায়িত্বশীল রাষ্ট্র’ হিসেবে এনএসজির সদস্যপদের দাবি করেন তিনি৷

আন্তর্জাতিক মঞ্চে হিজবুল জঙ্গিকে যে ভাবে পাকিস্তান ‘শহিদের’ মর্যাদা দিল, তাতে চমকেছেন অনেকেই৷ শরিফের এই বক্তব্য শুনে ভারতও স্বাভাবিক ভাবে প্রত্যাঘাত করেছে৷ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যে ভাবে শরিফ বুরহানের মতো একজন স্বঘোষিত সন্ত্রাসবাদীর নাম নিয়েছেন ও তাকে বিশ্ব মঞ্চে ‘কাশ্মীরের আত্মা’ বলে তুলে ধরেছেন, তা ভাবা যায় না৷ পাশাপাশি এ -ও প্রমাণ হয়ে যায়, পাকিস্তান প্রতি মুহূর্তেই সন্ত্রাসবাদকে লালন করে চলেছে৷ তবে এই ব্ল্যাকমেল ভারত মেনে নেবে না৷ কারণ শান্তি আর গুলি একসঙ্গে চলতে পারে না৷’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন