শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ের সম্ভাবনা কম, বলা যাবে না একদম নেই!

হিলারি ও ট্রাম্প উভয়ের ব্যাপারেই ভোটারদের অধিকাংশের মনোভাব নেতিবাচক। হিলারি যদি জেতেন, তা ট্রাম্পের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের জন্য।

হাসান ফেরদৌস       

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, অধিকাংশ জনমত জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের মধ্যে ব্যবধান তত কমে এসেছে। কোনো কোনো জরিপে তাঁদের উভয়ের জনসমর্থন কার্যত সমান। ভাবা হয়েছিল নেভাদা, ওহাইও ও ফ্লোরিডায় হিলারি অনায়াসে ট্রাম্পকে পরাস্ত করতে পারবেন, কিন্তু ঘুঁটি উল্টে যাওয়া শুরু করেছে। এই তিন অঙ্গরাজ্যেই এ মুহূর্তে ট্রাম্প এগিয়ে।


জনমত জরিপের ভিত্তিতে তৈরি নির্বাচনী মডেল নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা এখনো বিশ্বাস করেন, হিলারি গত দুই সপ্তাহের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন। নির্বাচনী ভবিষ্যৎ গণনার জন্য খ্যাত নেট সিলভার তাঁর সর্বশেষ বিশ্লেষণে হিলারির জয়ের সম্ভাবনা ৬৩ শতাংশ বলে জানিয়েছেন। তিন সপ্তাহ আগেও এই সম্ভাবনা ছিল ৯০ শতাংশের ওপরে। হিলারি ও ট্রাম্প উভয়ের ব্যাপারেই আমেরিকার ভোটারদের অধিকাংশের মনোভাব নেতিবাচক, তবে ট্রাম্পকে কিছুতেই ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন, এমন ভোটারদের সংখ্যা হিলারির তুলনায় সামান্য বেশি। ফলে হিলারি যদি জেতেন, তা হবে ট্রাম্পের প্রতি এই নেতিবাচক মনোভাবের জন্য।

অনেকে ভেবেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ওবামার রেকর্ড পরিমাণ জনসমর্থন হিলারির বিজয়ে সাহায্য করবে। কোনো কোনো জরিপে ওবামার সমর্থন এ মুহূর্তে ৫৮ শতাংশ। কিন্তু যে ব্যাপক-ভিত্তিক কোয়ালিশন ওবামার দুই দফা বিজয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, এখন পর্যন্ত তাদের মধ্যে কোনো লক্ষণীয় উৎসাহ জাগেনি। শুধু তরুণদের মধ্যে নয়, আফ্রিকান-আমেরিকান ও হিস্পানিকদের মধ্যে যে সমর্থন হিলারি আশা করেছিলেন, তা-ও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।

তাঁকে ঠেকানোর সব চেষ্টা সত্ত্বেও ট্রাম্প গত দুই সপ্তাহে নিজের জনসমর্থন বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন, যার বড় কারণ এই সময়ে তিনি নিজের নির্বাচনী ক্যাম্পেইন ঢেলে সাজাতে সক্ষম হয়েছেন। নিয়ন্ত্রণহীন বক্তব্য দেওয়াও কমিয়েছেন। অন্যদিকে হিলারির জন্য গেল দুই সপ্তাহ ছিল নির্দয়। ই-মেইল ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশন নিয়ে বিতর্ক তাঁর প্রতি মানুষের অনাস্থা আরও বাড়িয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে অব্যাহত উদ্বেগ।

এ কথা ঠিক, এই দুই সপ্তাহ ট্রাম্পও কম বিতর্কে জড়াননি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ওবামার চেয়ে অধিক যোগ্য বলায় সব মহলেই সমালোচিত হয়েছেন তিনি। ট্রাম্প ইউনিভার্সিটি নিয়ে যাতে তদন্ত না হয়, সেই আশায় তিনি ফ্লোরিডার অ্যাটর্নি জেনারেলের নির্বাচনী তহবিলে মোটা চাঁদা দিয়েছেন, এমন অভিযোগও উঠেছে। আয়কর দাখিল না করা নিয়েও তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। এত বিরুদ্ধ প্রচারণা সত্ত্বেও দেশের রক্ষণশীলদের মধ্যে তাঁর সমর্থন বিন্দুমাত্র কমেনি। রিপাবলিকান পার্টি খুব ধূর্ততার সঙ্গে এই নির্বাচনকে ওবামার দুই দফার শাসনের একটি ‘রেফারেন্ডাম’ হিসেবে উপস্থিত করেছে। তারা এ কথাও বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে হিলারির প্রেসিডেন্ট হওয়ার অর্থ ওবামার তৃতীয় দফা। তার চেয়েও বড় কথা, তারা এই বলে রক্ষণশীলদের মনে কাঁপন ধরাতে সক্ষম হয়েছে যে প্রেসিডেন্ট হিলারির অধীনে সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণ উদারনৈতিকদের হাতে চলে যাবে।

অনেক নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ অবশ্য এখনো বিশ্বাস করেন হিলারি ঘুরে দাঁড়াবেন। সে কথা ভাবার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। ট্রাম্পের তুলনায় তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা অনেক বেশি পেশাদারি, মাঠ পর্যায়েও তার রয়েছে অনেক বিস্তৃত ক্যাম্পেইন। এসবের চেয়েও বড় কথা, সামনে রয়েছে পরপর তিনটি নির্বাচনী বিতর্ক। ট্রাম্প শুধু অনভিজ্ঞ তার্কিকই নন, অধিকাংশ বিষয়েই তাঁর জ্ঞান খুব সীমিত। এ পর্যন্ত অধিকাংশ প্রশ্নের জবাবে তিনি তাঁর বুদ্ধিমত্তা ও ব্যবসায়ী সাফল্যের কথা বলে পার পেয়ে গেছেন। কিন্তু ৯০ মিনিটের মুখোমুখি বিতর্কে শুধু চালাকি ও শব্দাড়ম্বর করে পার পাওয়া সম্ভব নয়।

এই বিপদের কথা ট্রাম্পও জানেন। সে জন্য কেউ কেউ সন্দেহ করছেন, শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প হয়তো বেঁকে বসতে পারেন। বাছাইপর্বে তাঁর শর্ত পূরণ না হওয়ায় একটি বিতর্কে তিনি অংশ নেননি। এবারও তিনি ইঙ্গিত করেছেন, বিতর্কের সময় কমিয়ে এক ঘণ্টায় আনা উচিত। বিতর্কে সঞ্চালক কে হবেন, সে ব্যাপারেও নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কথা তিনি জানিয়েছেন। তাঁর প্রতি বৈরি এমন কোনো সঞ্চালকের অধীনে তিনি বিতর্কে অংশ নিতে যদি অস্বীকার করেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত আমেরিকান ভোটাররা সদয় চোখে নেবেন না, তা-ও প্রায় নিশ্চিত।

অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি বিতর্কে অংশ নেন এবং ৯০ মিনিট মোটের ওপর টিকে থাকেন, তাঁর যোগ্যতা বিষয়ে এখনো যে সন্দেহ আছে, তা ঘুচে যাবে। সে অবস্থায় ট্রাম্পকে পরাস্ত করার অন্য কোনো ঘুঁটিই হিলারির হাতে থাকবে না। রক্ষণশীল পত্রিকা ন্যাশনাল রিভিউ-এর সম্পাদক বেন লাউরি তাই মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্পের বিজয়ের সম্ভাবনা কম, কিন্তু একদম নেই সে কথা বলা যাবে না।

হাসান ফেরদৌস : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন