মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ব্রাঞ্জেলিনা অধ্যায়ের সমাপ্তি

ব্রাড থেকে বিচ্ছেদ চেয়ে অ্যাঞ্জেলিনার আবেদন



ব্র্যাড পিট আর অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে একসঙ্গে ব্র্যাঞ্জেলিনা বলতে পছন্দ করতেন ভক্তকুল। এক যুগের সম্পর্ক। দশ বছর লিভ ইন আর দু’বছরের বিয়ে। রূপকথার সেই ‘ব্র্যাঞ্জেলিনা’য় পূর্ণচ্ছেদ। 

৪১ বছরের অস্কারজয়ী হলিউড অভিনেত্রী সোমবার লস অ্যাঞ্জেলেনের এক কোর্টে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জানিয়েছেন। জোলির দাবি, ব্র্যাড পিটের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব এতটাই বেড়েছে যে বিচ্ছেদ ছাড়া আর উপায় ছিল না। ছয় ছেলেমেয়ের দায়িত্ব তিনি নিজেই নিতে চান। ব্র্যাড পিট অবশ্য তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।

পিট-জোলির সংসার ভাঙছে বলে খবর প্রকাশের পর ২০১০ সালে নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে আদালতে যান তারা। এরপর থেকেই তাদের বিচ্ছেদের গুঞ্জন চললেও চার বছর পর ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন তারা, যার ইতি ঘটল দুই বছর বাদেই।

“পরিবারের মঙ্গলের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন না এবং চান না এই মুহূর্তে তাদের নিয়ে কথা হোক” জোলির আইনজীবী রবার্ট অফার 

গুঞ্জন ছড়িয়েছে, তাঁদের এই বিচ্ছেদ হবে হলিউডের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিবাহবিচ্ছেদ। কারণ, পিট ও জোলি একসঙ্গে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের সম্পদের মালিক।

কিন্তু এই দীর্ঘ সম্পর্কে কেন দাড়ি টানতে চাইলেন ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ?’ মার্কিন ওই ওয়েবসাইটের দাবি, বাচ্চাদের বড় করার ক্ষেত্রে পিটের আচার-আচরণ দেখে ইদানীং অসম্ভব হতাশ হয়ে পড়েছিলেন জোলি। তা ছাড়া অতিরিক্ত মাদক সেবন এবং মদ্যপানের জেরে পিট ঘনঘন রেগে যেতেন। তাতেও বিরক্ত হতেন জোলি। তাঁর বক্তব্য, সেই রাগের প্রভাব পড়ত ছেলেমেয়েদের উপরে। সেটা একেবারেই কাম্য বলে মনে হয়নি জোলির। দুই তারকার ঘনিষ্ঠরা অবশ্য এই খবরে খুব বিচলিত নন। কারণ গত কয়েক মাস ধরেই ‘ব্র্যাঞ্জেলিনা’র মধ্যে সমস্যা হচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। তবে কোনও তৃতীয় ব্যক্তি নয়, সমস্যাটা যে ব্র্যাড আর অ্যাঞ্জেলিনার মধ্যেই তা নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না।

২০০৪ সালে মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ ছবির শুটিং সেট থেকে ব্র্যাড পিট ও অ্যাঞ্জেলিনা জোলির প্রেম শুরু। এরপর থেকে তাঁরা একসঙ্গেই থাকতেন। ২০১৪ সালের আগস্টে অনাড়ম্বর আয়োজনে বিয়ে করেন ‘ব্র্যাঞ্জোলিনা’ হিসেবে আলোচিত এ জুটি। তাঁদের সংসারে রয়েছে ছয় সন্তান—ম্যাডক্স (১৫), প্যাক্স (১২), জাহারা (১১), শিলোহ (১০), নক্স (৮), ভিভিয়েন (৮)। প্রথম তিন সন্তান দত্তক নেওয়া।

আগে দু’বার বিয়ে ভেঙেছে জোলির। ২০০৫-এ জেনিফার অ্যানিস্টনের সঙ্গে পাঁচ বছরের দাম্পত্য শেষ করে জোলির হাত ধরেছিলেন ব্র্যাড। ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ’-এর শ্যুটিং থেকেই প্রেমের শুরু। তার পর দীর্ঘ দশ বছর নানা চড়াই উৎরাই দেখেছে ব্র্যাঞ্জেলিনা। ২০১৪ সালে বিয়ের সিদ্ধান্ত। সেই বিয়ে নিয়েও জোর আলোচনা হয় সংবাদমাধ্যমে।

বিয়ের আগের বছর স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে ডবল ম্যাসটেকটমি করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন জোলি। একটি মার্কিন দৈনিকে তাই নিয়ে প্রবন্ধ লিখে পৃথিবীব্যাপী মহিলাদের সাহস জুগিয়েছিলেন। বিয়ের পরে ২০১৫ সালে ফের আরও একটি অস্ত্রোপচার। এ বারও ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে ওভারি বাদ দেন তিনি। এই সব সিদ্ধান্ত নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। ফের মার্কিন দৈনিকে তিনি প্রবন্ধ লিখে জানান, অস্ত্রোপচারের অভিজ্ঞতার কথা। নিজের ছেলেমেয়েদের বড় করার ক্ষেত্রে জীবন যেন কোনও বাধা তৈরি না করে— তাই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সব ঝুঁকি থেকে আগাম সতর্কতা নিতে চেয়েছেন বলে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন হলিউডের এই অভিনেত্রী।

দুই অস্ত্রোপচারের ধাক্কা শরীরেও প্রভাব ফেলেছিল অনেকটাই। সেই সময়ে ক্ষীণতনু, অসুস্থ জোলির ছবি দেখে সরব ছিল সোশ্যাল মিডিয়াও। কিন্তু সঙ্কটের প্রতিটি মুহূর্তেই পাশে পেয়েছেন দীর্ঘ দিনের সঙ্গী ব্র্যাডকে। সমর্থন-আশ্বাস-ভরসা দিয়ে সাহসিনী জোলিকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন ব্র্যাড। শুধু নিজের সন্তান নয়, আফগানিস্তান, সুদান, সিরিয়ার শরণার্থী শিশুদের কাছেও যখন-তখন ছুটে গেছেন জোলি। যে কাজের সূত্রে জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত বিশেষ দূত হিসেবে বেছে নেওয়া হয় জোলিকে। তাঁর এই সব সফরেও কখনও সখনও পা মিলিয়েছেন ব্র্যাড। তৈরি করেছেন জোলি-পিট ফাউন্ডেশন। কিন্তু ঘনিষ্ঠদের মতে, ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের প্রশ্নে তুচ্ছ হয়ে গেছে সব বন্ধন।

 “পরিবারের মঙ্গলের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি (জোলি) এ বিষয়ে কথা বলবেন না এবং চান না এই মুহূর্তে তাদের নিয়ে কথা হোক,” এক বিবৃতিতে বলেছেন রবার্ট।

তাদের ছয় সন্তানকে নিজের কাছে রাখার অনুমতি চেয়েছেন জোলি। স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ পরবর্তী সুবিধা চাচ্ছেন না তিনি। বিচ্ছেদের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর।

ব্র্যাড পিট বর্তমানে তাঁর অভিনয় ও রিসোর্ট ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। তিনি কাজ করছেন তিনটি নতুন ছবিতে। আর অ্যাঞ্জেলিনা জোলি চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর দাতব্য কর্মকাণ্ড। ৯ সেপ্টেম্বর এ অভিনেত্রী জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) বিশেষ প্রতিনিধি ও শুভেচ্ছা দূত হিসেবে জর্ডানের আজরাকে অবস্থিত সিরিয়ান উদ্বাস্তু শিবির পরিদর্শনে যান। ২০১২ সাল থেকে জোলি কাজ করছেন ইউএনএইচসিআরের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে। তা ছাড়া, সম্প্রতি তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের অতিথি প্রভাষক হিসেবেও যোগ দিয়েছেন।

সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ানো ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ’ ব্যবসা সফলও হয়েছিল, বিশ্বজুড়ে ৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার ব্যবসা করে চলচ্চিত্রটি। অন্যদিকে ‘বাই দ্য সি’ তেমন ব্যবসা সফল না হলেও তাতে পিট-জোলির সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটেছে বলে গুঞ্জন ওঠে।

তবে তা অস্বীকার করেন জোলি: “ব্রাড ও আমার মধ্যে কিছু বিষয় আছে। কিন্তু চরিত্রগুলো আমাদের সমস্যাগুলোর সামান্য কাছাকাছি থাকলেও আমরা ফিল্মটি করতে পারতাম না। “স্পষ্ট করতে বলছি: অন্য যে কোনো দম্পতির মতো আমাদেরও মতভিন্নতা ও সমস্যা আছে। আমাদের এমন দিন গেছে যখন আমরা একে অন্যের থেকে সরে গেছি এবং দূরত্ব চেয়েছি, তবে এই মুভির সমস্যা আর আমাদের সমস্যা এক নয়।”

৪১ বছর বয়সী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি প্রথম ঘর বাঁধেন অভিনেতা জনি লি মিলারের সঙ্গে; ১৯৯৬ সালে ‘হ্যাকারস’র সেটে দেখা হয়েছিল তাদের। এরপর ১৯৯৯ সালে ‘পুশিং টিন’ এ অভিনয়ের সময় বিলি বব থর্নটনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে তাকে বিয়ে করেন।

জোলির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর সময় অভিনেত্রী জেনিফার অ্যানিসটনের সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্কে ছিলেন ৫২ বছর বয়সী ব্রাড পিট। প্রথম দিকে জোলির সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছিলেন তিনি।

মার্কিন ট্যাবলয়েড টিএমজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্র্যাড পিটের জীবনযাপনের ধরনে জোলি বিরক্ত। জোলি মনে করছেন, তাঁর স্বামীর অতিরিক্ত মদ্যপান সন্তানদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাই বিচ্ছেদের আবেদনের সঙ্গে জোলি তাঁর ছয় সন্তানের অভিভাবকত্বও চেয়েছেন। তা ছাড়া, সন্তানদের প্রতি ব্র্যাড পিটের উদাসীনতাও বিচ্ছেদের আরেকটি কারণ বলে জোলির ঘনিষ্ঠ এক সূত্র টিএমজিকে জানায়। অন্যদিকে সেলেববাজ নামের আরেকটি ট্যাবলয়েড পিট-জোলির বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে জোলির শারীরিক অবস্থাকে দায়ী করছে। অভিনেতা ব্র্যাড পিটের এক ঘনিষ্ঠজন ওই ট্যাবলয়েডকে জানান, জোলি নাকি তাঁর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে মোটেও সচেতন নন। ক্যানসারের সঙ্গে লম্বা সময় লড়াই করা এ অভিনেত্রী নাকি অতিরিক্ত ধূমপান করেন। এর ফলে অতিরিক্ত রাগ ও পারিবারিক কলহ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিল। তাই জোলির ওপর এ নিয়েই বিরক্ত ব্র্যাড পিট। তবে জোলির আইনজীবী এটা নিশ্চিত করেছেন যে, এই দুই তারকার বিচ্ছেদ কোনো পরকীয়া-সংক্রান্ত কারণে হচ্ছে না।

অদ্ভুত ভাবে গত বছরই ‘বাই দ্য সি’ নামে একটি ছবি পরিচালনা করেছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা। সেখানে পিটের বিপরীতে অভিনয়ও করেন তিনি। এক দম্পতির বিয়ে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা নিয়ে গল্পটা। ছবি শেষ হওয়ার পরে জোলি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের বিয়েটাই আর একটু হলে ভাঙতে বসেছিল ‘বাই দ্য সি।’ তবে ছবিটা করতে গিয়ে আমরা যেন নিজেদের পরীক্ষা নিজেরাই নিয়েছি। মনে হয়েছিল, এটা যদি পার করতে পারি, আমাদের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। আমরা পেরেছি। আমরা দু’জনেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পছন্দ করি। যদিও এই ছবিটা আমাদের জন্য একটু বিপজ্জনক ছিল! তবে আর এমন পরীক্ষার ইচ্ছে নেই।’’ কিন্তু শেষ রক্ষা হল কই!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন