রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

হিলারি-ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব



২৬ সেপ্টেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট৷ মুখোমুখি বিতর্কে দেখা হবে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ মার্কিন নির্বাচনে এই প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট সাংবিধানিক না হলেও বহুদিনের প্রথা৷ যে প্রথা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ নির্বাচনের ঠিক দোরগোড়ায় মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেন প্রধান দুই প্রতিপক্ষ৷ বলা হয় দেড় ঘণ্টার অনুষ্ঠানটি নির্বাচনী পরিভাষায় যাদের ‘ফ্লোটিং ভোটার’ বলে, তাঁদের প্রভাবিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়৷ মনোযোগী ছাত্রীর মতো তাই এই বিতর্কের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন হিলারি ক্লিন্টন৷ ট্রাম্প যদিও বিতর্ককে অতটা গুরুত্ব দিতে নারাজ৷ যা চিন্তায় রেখেছে ট্রাম্পের ডিবেট কোচিং টিম’কে৷ দেখা যাক কে কেমন ভাবে তৈরি হচ্ছেন দুই প্রার্থী৷ প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে মার্কিন মুলুকে সকলেই থাকবেন হয় টিভির সামনে না হয় রেডিও কানে৷

নির্বাচনী প্রচারে নাগাড়ে একে অপরকে গালমন্দ করেছেন হিলারি-ট্রাম্প৷ যদিও হিলারি শিবির মনে করছে, অনেক সময়ই শালীনতার সীমা টপকে গিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ বিতর্কে ট্রাম্পের সেই ‘কদর্য’ চেহারাটা তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন হিলারি৷ পাশাপাশি আক্রমণের পথও তৈরি ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর৷ এ ক্ষেত্রে হিলারি প্রশ্ন সাজাচ্ছেন ট্রাম্পের বার্ষিক আয় নিয়ে৷

হিলারির মতো না হলেও প্রস্ততি রয়েছে ট্রাম্পেরও৷ বিতর্কের মাঝে ‘আপনি মিথ্যা বলছেন’ বলে হাক ছাড়তে পারেন হিলারি, আশঙ্কা ট্রাম্প শিবিরের৷ এ মতো পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে কী উত্তর দিতে হবে, ট্রাম্পকে তাই শেখাচ্ছে ডিবেট কোচিং টিম৷ 

এদিকে বিতর্কে বেশি খুঁটিনাটি আলোচনায় আগ্রহী নন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী৷ তিনি মনে করেন সাধারণ মানুষ অতকিছু মনে রাখতে পারেন না৷ ট্রাম্প আগ্রহী কর্মসংস্থান, সন্ত্রাসবাদ, সীমান্ত সুরক্ষা ইত্যাদি নিয়ে৷

বিতর্কের মঞ্চে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ৷ যে দিকে বিশেষ নজর রয়েছে হিলারির টিমের৷ মঞ্চে ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মেলানো থেকে বিতর্ক শেষে ‘গুড বাই’ বলে নেমে আসা--- প্রতিটি পদক্ষেপের ঘড়ি ধরে প্রস্ত্ততি নিয়েছেন হিলারি ক্লিন্টন৷ ই-মেল বিতর্কে তাঁকে বিপাকে ফেলতে চাইবেন ট্রাম্প, ভালোই জানেন হিলারি৷ তাঁর পাল্টা হবে আয়কর জমা না দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ট্রাম্পকে আক্রমণ৷ উল্টোদিকে হিলারির নিউমোনিয়ায় নিয়ে পড়াশোনা সেরে ফেলেছেন ট্রাম্প৷ প্রাইমারির বিভিন্ন বিতর্কে বিভিন্ন সময়েই প্রতিপক্ষকে যা নয় তাই বলে হ্যাটা করেছেন তিনি৷ তবে মুখোমুখি বিতর্কে যাতে ট্রাম্পকে কর্কশ মনে না হয়, সে দিকেও নজর থাকছে রিপাবলিকান শিবিরের৷ তাছাড়া অযথা ডিবেটের মডারেটরদের সঙ্গে ঝামেলাও না জড়াতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ট্রাম্পকে৷কোনও বড় টুর্নামেন্টের আগে যে ভাবে খেলোয়াড়েরা পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে অনেক আগেই সেই শহরে পৌছে যান, হিলারির বন্দোবস্তটাও ঠিক তেমনই৷ প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট যে অডিটোরিয়ামে হবে, ঠিক তেমন একটি অডিটোরিয়ামে চলছে প্রস্তুতি৷ একজনকে ট্রাম্প সাজিয়ে মঞ্চে রাখা হচ্ছে৷ সম্ভাব্য সমস্ত প্রশ্ন হিলারিকে ছুড়ে দিচ্ছেন সেই নকল ট্রাম্প৷ জবাব দিচ্ছেন হিলারি৷ প্রয়োজন মতো হিলারিকে শুধরে দিচ্ছে রিসার্চ টিম৷

তবে কোনও নকল হিলারি রেখে প্রস্ত্ততিতে নেই ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তিনি হিলারি কী বলবেন তা নয়, নিজে কী বলবেন সে নিয়েই বেশি আগ্রহী৷ ফলে ট্রাম্পকে নিয়ে সমস্যাও রয়েছে৷ বিতর্ক চলাকালীন মাঝেমধ্যেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন৷ ফলে মন দিয়ে না-শোনার খেসারতও দিতে হয়েছে কয়েকবার৷ প্রেসিডেন্সিয়াল এ ডিবেট নিয়ে হিলারির নিষ্ঠা নিঃসন্দেহে ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থীকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে৷ তাছাড়া সময়মতো বক্তৃতাকে কাটছাঁট করার সহজাত ক্ষমতা রয়েছে হিলারির৷ বিতর্কে সময়ে টান পড়লে, তা কাজে আসবে৷ 

ট্রাম্পের শক্তি তাঁর ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ ইমেজ৷ কখন যে কী বলে বসেন, করে বসেন, কেউ জানে না৷ এই পথে হেঁটে অনেক সময় ডিভিডেন্ড-ও পেয়েছেন ট্রাম্প৷ প্রতিদ্বন্দ্বীর চোখে চোখ রেখে কথা বলায় ট্রাম্পের জুড়ি মেলা ভার৷ দুর্বলতামাঝেমাঝেই বড় আড়ষ্ট লাগে হিলারিকে৷ এটাই সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থীর৷ তাছাড়া তাঁর সততা নিয়ে প্রশ্ন তুললেই কেমন যেন কুঁকড়ে যান হিলারি৷ সকলেই জানে বিদেশ সচিব হিসেবে ব্যক্তিগত ই -মেল ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই৷ এ নিয়ে স্পষ্ট, সংক্ষেপে উত্তর তৈরি রাখছেন হিলারি৷ কিন্ত্ত ক্লিন্টন ফাউন্ডেশনে দেশ-বিদেশের অনুদান বা স্বামী বিল ক্লিন্টনের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, তিনি কেমন সামলাবেন সে নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ 

বেমালুম মিথ্যে বলাটা আবার ট্রাম্পের রোগ৷ প্রয়োজন পড়লেই দিনকে রাত, রাতকে দিন করে ফেলতে সিদ্ধহস্ত ট্রাম্প৷ প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে সে দিকে খেয়াল না রাখলে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় থাকবে ষোলআনা৷ যেমন ওবামার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা ট্রাম্প, বিতর্কে তা চেপে যাওয়ার চেষ্টা করলেই বিপদে পড়বেন৷ অতীতের ভুল ঢাকতে গিয়ে মিথ্যে বলাটা হিতে বিপরীত হবে বলে আশঙ্কা ট্রাম্প শিবিরের৷ তাই ওবামার প্রসঙ্গ উঠলে কী ভাবে সামলান ট্রাম্প, তা নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে৷ ডিবেট টিমঘরে একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট থাকলে যে সুবিধাটা হয়, সেটা পুরোপুরি নিচ্ছেন হিলারি৷ হিলারির রিসার্চ টিমে রয়েছেন বিল ক্লিন্টন৷ তবে ট্রাম্পের দলও খারাপ নয়৷

অপেক্ষা এবার সেই দিনের৷ যে দিন মুখোমুখি হচ্ছেন হিলারি ক্লিন্টন-ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ দেড়ঘণ্টার অনুষ্ঠানটি লাইভ সম্প্রচার করবে আমেরিকার টিভি, রেডিয়োগুলি৷ বাদ যাবে না ওয়েব দুনিয়াও৷ প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে মার্কিন মুলুকে সকলেই থাকবেন হয় টিভির সামনে না হয় রেডিও কানে৷

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন