ইরানের দিকে তাক করা ইজরায়েলের ২০০টি পরমাণু অস্ত্র: কলিন পাওয়েলের ই-মেল ফাঁস
ঝুলি থেকে বেড়ালটা অবশেষে বেড়িয়েই পড়ল! আমেরিকার বন্ধু-রাষ্ট্র ইজরায়েল যে বহু দশক আগেই পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে হাত পাকিয়েছে, এ বিশ্বে তা জানতে কারও বাকি ছিল না৷ তা সত্ত্বেও কোনও দিনই ইজরায়েল নিজেকে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেনি৷ সত্যিটা ফাঁস হয়ে গেল শনিবার৷এক হ্যাকারের সৌজন্যে যখন প্রকাশ্যে এল প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েলের ফাঁস হয়ে যাওয়া ইমেল৷ তবে, এর থেকেও বড় উদ্বেগের বিষয়, কমপক্ষে ২০০টি পরমাণু অস্ত্র ইজরায়েল তাক করে রেখেছে ইরানের দিকে৷
বন্ধুকে পাঠানো ইমেলে সে কথা নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন পাওয়েল৷ যা তাজ্জব করে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে৷ ২০১৫ -র মার্চে পাঠানো ওই ই-মেলে, মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে পাওয়েল লেখেন, ‘ইরান যদি একখানা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেও ফেলে, তাহলেও তারা সেটা ব্যবহার করতে পারবে না৷ কারণ, তেহরানের লোকেরা জানে, ইজরায়েলের কাছে ২০০টা আছে! সবক’টাই তাদের দিকে তাক করা৷ আর আমাদের কাছে তো হাজারেরও বেশি আছে৷’
প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল |
ই-মেল ফাঁস হতে তোলপাড় বিশ্ব, বিতর্কে পাওয়েল৷ আপাতত যে বিতর্ক থেকে হাত ধুয়ে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তিনি৷ নিজে কিছু না বললেও, মুখপাত্রকে দিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করিয়েছেন পাওয়েল৷ তাতে লিখেছেন, ‘ই-মেলে যা লেখা হয়েছে, তা মার্কিন কোনও সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য নয়৷ এটা নেহাতই একটা প্রচলিত ধারণা৷’ প্রেস বিবৃতির মূল সারবত্তাই ছিল পাওয়েলের মতামতকে ‘ব্যক্তিগত’ হিসেবে দেখানো৷ যে কারণে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকারি পদ ছেড়ে দেওয়ার দশ বছর পর ই-মেলটি করেছিলেন পাওয়েল৷ সে সময় সরকারের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ ছিল না৷’
কিন্ত পাওয়েলকে এত সহজে ছাড় দিতে নারাজ সমালোচকরা৷ কারণ, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুরুদায়িত্ব ছাড়াও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন প্রাক্তন এই সেনাকর্তা৷ এমনকি, হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বা জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফের চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি৷ বিশেষজ্ঞদের একাংশের যুক্তি, এ হেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছে যে সরকারি অনেকে গোপনীয় তথ্য থাকবে, তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে৷ তবে কি সত্যিই ইরানের দিকে তাক করা ইজরায়েলের ২০০টি পরমাণু অস্ত্র? মার্কিন মুলুকের পাশাপাশি ঝড় উঠেছে ইজরায়েলেও৷ তবে, ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ইজরায়েলি দূত ইটাই বারডভ এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি৷ একই অবস্থান মার্কিন বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র জন কিরবাইয়েরও৷ তিনিও পাওয়েল নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি, শুধু বলেছেন, ‘আমেরিকা পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে চিরকাল সওয়াল করে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে৷’ পাওয়েল প্রথম নন৷ এর আগে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারও ইজরায়েলকে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের তকমা দিয়েছিলেন৷ তবে, বিষয়টি তার আগে আর এগোয়নি৷
এদিকে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে যেভাবে শ’য়ে শ’য়ে ইমেল ফাঁস হয়ে চলেছে, তাতে বেজায় শোরগোল পড়ে গেছে আমেরিকার অন্দরে৷ ইমেল বিতর্ক এখনও পর্যন্ত সবথেকে বেশি বিড়ম্বনায় ফেলেছে যাঁকে তিনি ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন৷ হিলারির অভিযোগ , সব কলকাঠিই নাড়া হচ্ছে রাশিয়া থেকে৷ কারণ যেন তেন প্রকারে ট্রাম্পকে জেতাতে চাইছে মস্কো৷ এ জন্যই হ্যাক করা হচ্ছে ডেমোক্রেটদের ইমেল৷ এই অভিযোগের তদন্তেও নেমেছে এফবিআই৷ এ হেন পরিস্থিতিতে এবার কলিন পাওয়েলের ইমেল ফাঁস৷ যিনি কিনা হিলারির প্রতিপক্ষ ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির সদস্য৷ এর জেরে এবার ইমেল অস্ত্র চলে এল ডেমোক্রেটদের হাতেও৷ এখন তাঁরাও আড়ালে আবডালে বলছেন, তার মানে রিপাবলিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একই দোষে দুষ্ট! এর জেরে আগামী দিনে ই-মেল নিয়ে রিপাবলিকানদের আক্রমণের ঝাঁজ কিছুটা হলেও কমবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ যদিও, পাওয়েল অবশ্য বলছেন, ব্যক্তিগত মেলে তিনি কাজের কোনও কথা বলতেন না৷ তবে, তাতে চিঁড়ে ভিজছে না৷ কারণ, ফাঁস হওয়া ইমেলে তিনি যা বলেছেন, তা আপাতত আন্তর্জাতিক আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন