শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

নেপাল পাকিস্তান কিংবা চিন-বাংলাদেশ সম্পর্ক ভারতের চাওয়া না-চাওয়ার উপর নির্ভরশীল নয়

চিন এশিয়ার বৃহত্তম শক্তি৷ তার অর্থনীতি ভারতের পাঁচ গুণ৷ তার ক্ষমতাও প্রবল৷ কাজেই ভারতকে সন্তুষ্ট রাখতে নেপাল চিনের কোনও অর্থবহ সম্পর্ক স্থাপন করবে না, একবিংশ শতকের ভূ-রাজনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতির এই পাঠ অচল৷ বরং ভারতীয়-নির্ধারকদের লক্ষ্য হওয়া উচিত চিনকে প্রতিদ্বন্দ্বীর আসন থেকে আঞ্চলিক উন্নয়নের দোসর হিসাবে স্বাগত জানানো৷



চার দিনের সফরে ভারতে এসেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল ধাহাল প্রচণ্ড৷ দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। তাঁর আগের নেপালি প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি’র শাসনকালে ভারত- নেপাল সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল৷ তিনি নেপালের দীর্ঘকালীন ভারসাম্য পরিবর্তন করে ভারত-নেপাল সম্পর্কের থেকে নেপাল-চিন সম্পর্কের উপর বেশি গুরুত্ব আরোপণের নীতি গ্রহণ করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল ধাহাল প্রচণ্ড বিদেশ সফরের তালিকায় ভারতকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়ে প্রচণ্ড চিনমুখী নীতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেন৷

ভারত এবং নেপালের কূটনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল নেপালের নয়া সংবিধান নিয়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মধেশি গোষ্ঠী মানুষের মধ্যে প্রবল অসন্তোষ৷ প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড এই গোষ্ঠীরুষদের দাবি-দাওয়া খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়ার ফলে সে উত্তেজনা কিছুটা স্তিমিত হয়েছে৷ তিনি জানিয়েছেন, ভারত-নেপাল সম্পর্কের তরীটিকে সুস্থির করে তাকে সঠিক দিশায় ধাবিত করাই তাঁর এই প্রধান লক্ষ্য৷ উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ শুধুমাত্র নেপালের ওপর নির্ভর করে না৷ এ ক্ষেত্রে ভারতের বিদেশনীতিরও সুস্পষ্ট দিশা পরিবর্তন প্রয়োজন৷

ভারত-নেপাল সুসম্পর্কের অতীতকে অস্বীকার না করেও ভারতীয় নির্ধারকদের বুঝতে হবে যে ‘ভারত অথবা চিন’ নেপালের এই বিকল্পকে ধ্রুব ধরে নিয়ে তার বিদেশনীতি রূপায়ণ বর্তমানে সম্ভব নয়।

চিন এশিয়ার বৃহত্তম শক্তি৷ তার অর্থনীতি ভারতের পাঁচ গুণ৷ তার ক্ষমতাও প্রবল৷ কাজেই ভারতকে সন্তুষ্ট রাখতে নেপাল চিনের কোনও অর্থবহ সম্পর্ক স্থাপন করবে না, একবিংশ শতকের ভূ-রাজনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতির এই পাঠ অচল৷ বরং ভারতীয়-নির্ধারকদের লক্ষ্য হওয়া উচিত চিনকে প্রতিদ্বন্দ্বীর আসন থেকে আঞ্চলিক উন্নয়নের দোসর হিসাবে স্বাগত জানানো৷ কাজটি সহজ নয় নিঃসন্দেহে। কারণ চিন-ভারত বৈরিতার একটি পৃথক অধ্যায় রয়েছে৷ সেটিই ভবিষ্যৎ৷ চিন-নেপাল বা চিন-পাকিস্তান কিংবা চিন-বাংলাদেশ সম্পর্ক ভারতের চাওয়া না-চাওয়ার উপর নির্ভরশীল নয়৷ কাজেই দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলিকে চিন-বলয় থেকে দূরে রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা পরিহার করে দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে চিনের বিপুল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিজেকে দোসর করে তোলাই ভারতীয় বিদেশনীতির আগামী দিনের প্রধান চ্যালেঞ্জ৷ প্রচণ্ডর সফর হতে পারে সে লক্ষ্যে পৌঁছনোর প্রথম পদক্ষেপ৷

সম্পাদকীয়- দৈনিক এই সময়, কলকাতা, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন