প্রেসিডেন্টের ‘স্বাস্থ্য’ বড় ইস্যু, কমজোরি কাউকে হোয়াইট হাউসে দেখতে চায় না মার্কিনীরা
নির্বাচনের দু’মাস আগে হিলারির নিউমোনিয়া নিয়ে শঙ্কিত আমেরিকা
‘অ্যান্টিবায়োটিক চলছে৷ কয়েকদিনেই জ্বর নেমে যাবে৷’ রবিবার নিউমোনিয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই তড়িঘড়ি বিবৃতি দিয়েছিলেন হিলারি ক্লিন্টনের চিকিৎসক৷ মিথ্যে কিছু বলেননি৷ নিয়মিত ওষুধ আর কয়েকদিনের বিশ্রামেই সেরে উঠবেন হিলারি৷ কিন্তু কোন ওষুধে মার্কিন জনতার শঙ্কা দূর করবেন?
‘অসময়ের ’ নিউমোনিয়া, জ্বর-কাশি-মাথা ব্যথার চেয়েও বড় ক্ষতি করে দিল হিলারি ক্লিন্টনের৷ মার্কিন মুলুকে প্রেসিডেন্টের ‘স্বাস্থ্য’ একটা বড় ইস্যু৷ কোনও কমজোরি লোককে হোয়াইট হাউসে দেখতে চায় না মার্কিন জনতা৷ স্বভাবতই নির্বাচনের দু’মাস আগে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর নিউমোনিয়ার খবরে উত্তাল আমেরিকা৷ পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো রিপাবলিকান শিবিরও ফায়দা তুলতে নেমে পড়েছে৷ রবিবার হিলারির দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছিলেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তারপর ‘নিজের ভালো’ বুঝতে রিপাবলিকান শিবির আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে হিলারির ওপর৷
বাধ্য হয়েই মুখ খুলতে হয়েছে হিলারিকে৷ দু’দণ্ড যে জিরোবেন উপায় নেই৷ ঘরবন্দি হয়ে থাকলেই নানারকম গুজব ছড়াবে৷ তাই যেচেই সংবাদমাধ্যমকে ডেকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী৷ সংবাদমাধ্যমও তাঁর দিকে ছুঁড়ে দিয়েছে চোখা প্রশ্ন৷ ‘সেদিন গ্রাউন্ড জিরোয় প্রকাশ্যে অসুস্থ হয়ে না পড়লে তো লোকে জানতেই পারত না আপনার অসুখের কথা৷ নিউমোনিয়া তো বেশ কয়েকদিন আগেই ধরা পড়েছিল৷ তা হলে তা চেপে রেখেছিলেন কেন?’ ‘আমার নিউমোনিয়া হয়েছে ঠিকই৷ তবে চেপে রাখতে যাব কেন? বুঝিনি বিষয়টা নিয়ে এত বাড়াবাড়ি হবে৷
নিউমোনিয়া তো কোনও গুরুতর অসুখ নয়৷ যে কারও হতে পারে৷ আবার ওষুধ পড়লে সেরেও যাবে৷ ডাক্তার আমাকে দিন পাঁচেকের বিশ্রামের কথা বলেছিলেন৷ শুনিনি, তাই সেদিন শরীরটা বিগড়েছিল৷’
আসলে এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটা ‘বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ’র লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ হিলারি ৬৮৷ ট্রাম্প ৭০৷ ইতিহাস বলছে, প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে নামা সকলেই হিলারি-ট্রাম্পের চেয়ে ছোট ছিলেন৷ তাই স্বাস্থ্য নিয়ে এবার যেন বাড়তি সন্দিহান আমজনতা৷ হিলারি নিউমোনিয়া লুকোলেও বাকি মেডিক্যাল রিপোর্ট মাসখানেক আগেই প্রকাশ্যে আনেন৷ ট্রাম্প অবশ্য সে পথে হাঁটেননি৷ তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক একটি চারপাতার নোট লিখেই খালাস৷ নোটে বলা হয়েছে, ‘আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে সুস্থ প্রেসিডেন্ট হবেন ট্রাম্প’৷ যদিও কোনও মেডিক্যাল রিপোর্ট অবশ্য জমা পড়েনি৷ নিউমোনিয়া বিতর্কে কোণঠাসা হিলারি, ট্রাম্পের এই লুকোছাপাকেই হাতিয়ার করেছেন৷
‘আপনারা বলছেন আমি লুকিয়েছি৷ আমার সমস্ত মেডিক্যাল রিপোর্টের খুঁটিনাটি দেখিয়েছি৷ ৪০ বছরের ট্যাক্স রিটার্নের কাগজ জমা দিয়েছি৷ আমার দশহাজার ই-মেল লোকে পড়েছে৷ আর কী বাকি থাকে বলুন তো?’ এরপর হিলারির ইঙ্গিত ট্রাম্পের দিকে, ‘লোকটার সবকিছুই তো ধোঁয়াশা৷’
ডেমোক্র্যাট শিবির নিউমোনিয়া রুখতে ট্রাম্পের ‘তথ্য গোপন’-কেই একমাত্র ওষুধ মনে করছে৷ এ নিয়ে রিপাবলিকানদেরও বলার বিশেষ কিছু নেই৷ আয় সংক্রান্ত কোনও তথ্যই মার্কিন জনতাকে জানাননি ট্রাম্প৷
ওদিকে নির্বাচনী প্রচারে বলে বেড়ান, ‘আমি গোটা বিশ্ব জুড়ে ব্যবসা করি৷ রোজগারও নেহাত কম করি না৷ অর্থনীতিটা ভালোই বুঝি৷ প্রেসিডেন্ট হলে দেশের অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেব৷’ বড় বড় কথাই সার৷ না জানিয়েছেন তাঁর ট্যাক্স রিটার্নের তথ্য৷ ব্যবসার আয়-ব্যয় নিয়েও রেখে দিয়েছেন ধোঁয়াশা৷ তাই ট্রাম্পের পক্ষে ‘তথ্য গোপন’ নিয়ে বেশি সরব হওয়াও মুশকিল৷
কাঁচের ঘরে বসে কি আর পাথর ছোড়া যায়? তিনি যত হিলারিকে ঘাঁটাবেন, তত তাঁকে নিয়েও উঠেপড়ে লাগবে ডেমোক্র্যাটরা৷ ফলে দুঃশ্চিন্তায় থাকলেও এই সমীকরণে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন হিলারি৷
১৯৩২ সালে ফ্র্যাঙ্কলিন রুসভেল্ট তাঁর প্যারালিসিসের খবর কার্যত চেপে রেখেছিলেন৷ প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন৷ আর মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে রোগভোগে ভোগা প্রেসিডেন্টের নাম জন কেনেডি৷ তাই নিউমোনিয়া কয়েকটা দিন হইচই ফেললেও তাঁকে কুপোকাৎ করবে না বলেই আশা হিলারির৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন