রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ট্র্যানজিটে মাশুল ও সমতার ভিত্তি 

সৈকত রুশদী

ট্র্যানজিট মাশুল পথের দৈর্ঘ্য অনুসারে কিলোমিটার ভিত্তিক এবং মহাসড়ক, সড়ক, রেলপথ, সেতু, ফেরী ও টার্মিনাল অর্থাৎ অবকাঠামো ব্যবহার ভিত্তিক নির্ধারণ করা উচিত।

ভারতের 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' পত্রিকায় ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের তেল ও গ্যাস পরিবহনের ক্ষেত্রে মাশুল ধরা হয়েছে ট্যাংকার প্রতি মাত্র ১৩০০ রূপী। যা ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যয় গাড়ি প্রতি ১৬ হাজার ২৫০ রূপী'র মাত্র আট শতাংশ। একই পথে ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যয়ের চেয়ে ৯২ শতাংশ কম। এটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী।

বিশেষ নিরাপত্রা ব্যবস্থা ছাড়াই বিপজ্জনক ও দাহ্য পদার্থ তেল ও তরলীকৃত গ্যাসের ১০টি ভারতীয় ট্যাংকারের প্রথম বহরটির শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে সড়কপথে এই ট্র্যানজিট চালু হওয়ার কথা।

অথচ স্বাভাবিক নিয়মে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মাল পরিবহনে এক তৃতীয়াংশের চেয়ে কম সময় লাগে বলে ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যয়ের চেয়ে ন্যূনপক্ষে তিনগুণ হওয়া উচিত ট্র্যানজিট মাশুল। এছাড়াও সড়ক, রেল ও নৌ অবকাঠামো ব্যবহারের জন্য যেখানে যেমন প্রযোজ্য ফেরী ও জাহাজ ভাড়া, সেতু ও সড়কে টোল এবং টার্মিনাল ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা ফি আলাদাভাবে হিসেব করে ঐ মাশুলের সাথে যোগ করে চূড়ান্ত মাশুল ধার্য করা উচিত।

আশুগঞ্জে ট্রানজিটের উদ্ধোধন করছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। বামে ভারতের হাইকমিশনার সিংহলা
সীমান্ত অতিক্রমের সময় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মাশুল দিয়ে রশিদ নিয়ে যাত্রাকালে প্রয়োজনমতো পথে ও শেষে অপর সীমান্তে ঐ রশিদ দেখিয়ে সীমান্ত অতিক্রমের অনুমোদন দেওয়া উচিত। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মাশুল আদায় করা হলে নগদ অর্থ লেনদেন, ঘুষ ও বখশিশের সুযোগ বন্ধ করা সম্ভব হবে। একই সাথে মাশুল প্রদান করলেই ইলেকট্রনিক রেজিস্টারে গাড়ির নাম ও ধরণ, চালান নম্বর, মালামালের প্রকৃতি ও ওজন বা আয়তন এবং চালকের নাম ও পাসপোর্ট নম্বর তালিকাভূক্ত হয়ে যাবে। যা অপর সকল চেকপোস্টের কম্পিউটার থেকে কর্মকর্তারা দেখতে পারবেন।

একাধিক দেশের মিধ্যে বাণিজ্যিক গাড়ি চালকদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট ছাড়াও নিরাপত্রা ছাড়ের ভিত্তিতে উত্তর আমেরিকার নেক্সাস (Nexus) কার্ডের মতো অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রবেশের জন্য বিশেষ ধরণের কার্ডের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

দ্বিপক্ষীয় ট্র্যানজিট চুক্তিতে অনুরূপভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতের মধ্য দিয়ে সড়ক, রেল ও/অথবা নৌ পথে ভূটান, নেপাল, চীন ও পাকিস্তানে একই ধরণের ট্র্যানজিটের সুযোগ একই সাথে চালুর অনুমোদন নিয়ে রাখা উচিত। যখন প্রয়োজন বাংলাদেশ যেন ঐসকল দেশের সাথে মালামাল আনা নেওয়া করতে পারে।

এই ধরণের ব্যবস্থা না করে ট্র্যানজিট চালু করা উচিত নয়।

টরন্টো, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সৈকত রুশদী: কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন