শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক ও কূটনৈতিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়


অয়নজিৎ সেন, এবেলা (আনন্দবাজার গ্রুপের দৈনিক) কলকাতা  

পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতাদের তালিকা তৈরি করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক স্তরে কড়া ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক মহলকে সম্মত করার ক্ষেত্রেও ভারতের বড় বাধা চিন।

উরি হামলার পর থেকেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার কৌশল নিয়েছে ভারত। এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন দেশকে পাশেও পেয়েছে নয়াদিল্লি। কাশ্মীর ইস্যুকে খুঁচিয়ে তুলে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার অধিবেশনে এই বিষয়ে কোনও দেশকেই পাশে পায়নি পাকিস্তান। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান-কি-মুনও নিজের বক্তব্যে কাশ্মীর প্রসঙ্গের উল্লেখ করেননি। নওয়াজ শরিফকে কটাক্ষ করে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি মহম্মদ আকবরউদ্দিন বলেন, ‘১৩১টির মধ্যে ১৩০টি দেশই পাকিস্তানের তোলা বিষয় নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। এর থেকে কী প্রমাণিত হয়?’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ভারতকে যে সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে হচ্ছে, গোটা বিশ্ব তা নিয়েই উদ্বিগ্ন। পাকিস্তান তোলা কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা নেই।

কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করেও কি ভারতের কোনও লাভ হবে? অতীত অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য কথা বলছে।

১৯৯০ থেকে ২০০১ পর্যন্ত কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল পাকিস্তান। পরমাণু বোমা তৈরি এবং ১৯৯৯ সালে মুশারফ সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের জেরে পাকিস্তানের প্রাপ্য বিভিন্ন অনুদানের উপরেও তখন নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছিল। তাতেও অবশ্য পাকিস্তানের মাটি থেকে সন্ত্রাসকে প্রশয় দেওয়া বন্ধ হয়নি। সেই সময়েও ইসলামাবাদের মদতে কাশ্মীর দিয়ে ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশ জারি ছিল। শুধু তাই নয়, পঞ্জাবে খালিস্তান আন্দোলনকে উস্কে দেওয়া এবং আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধেও প্রত্যক্ষ মদত যেত পাকিস্তান থেকে। ফলে, এবারেও পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা করলে ইসলামাবাদ ইসলামিক সন্ত্রাসের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক ছেদ করবে, নয়াদিল্লির এই ভাবনা কতটা বাস্তবোচিত, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, গোটা বিশ্বে কোণঠাসা হলেও ইসলামাবাদের বড় ভরসার নাম এখন বেজিং।

বিশ্ব যখন উরিতে জঙ্গি হামলার নিন্দা করছে, তখন সেই কাশ্মীরকে হাতিয়ার করেই উরি হামলার ব্যাপারে পাকিস্তানের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার অধিবেশনে যোগ দিয়ে ফেরার পথে লন্ডনে তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ভারতের অত্যাচারের বদলা নিতে কাশ্মীরের বাসিন্দারাই হয়তো উরির সেনাঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে।

শুধু তাই নয়, পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতাদের তালিকা তৈরি করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক স্তরে কড়া ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক মহলকে সম্মত করার ক্ষেত্রেও ভারতের বড় বাধা চিন। কারণ, কাশ্মীর ইস্যুতে অতীতেও বেজিং পাকিস্তানকে সমর্থন জানিয়েছে। আবার পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া জঙ্গি নেতাদের তালিকা বা প্রত্যক্ষ প্রমাণ দিয়ে ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানালেও তাতে বাগড়া দেবে চিনই। আর পাকিস্তানকে কোনও দেশ আক্রমণ করলে চিন যে তাদের পাশেই থাকবে, বেজিংয়ের থেকে সেই আশ্বাস ইতিমধ্যেই পেয়েছে ইসলামাবাদ।

ফলে উরি হামলার বদলা নেওয়ার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক বা কূটনৈতিক, যে পথেই ভারত এগোক না কেন, তার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন