কাশ্মীরের উরির হামলায় জাতিসংঘে চাপে ইসলামাবাদ
অগ্নি রায়, আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা
কাশ্মীরের উরিতে ভারতীয়
সেনা ছাউনির
উপর পাক
মদতপুষ্ট জঙ্গিদের
হামলার পর
রাতারাতি সুবিধেজনক
অবস্থানে চলে
গিয়েছে ভারত।
আর প্রায়
গোটা দুনিয়ার
নিন্দা কুড়িয়ে
রীতিমতো বিপাকে
পাকিস্তান।
কাশ্মীরে দীর্ঘদিন ধরে
চলা বিক্ষোভ
নিয়ে আন্তর্জাতিক
মহলে হইচই
করে ক’দিন আগেও
ভারতকে প্যাঁচে
ফেলে দিয়েছিল
পাকিস্তান। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি
দলের কাশ্মীরে
আসা নিয়ে
মাত্র এক
সপ্তাহ আগেই
প্রবল চাপের
মধ্যে ছিল
নয়াদিল্লি। উরির ঘটনার পরে সেই
কমিশনের সামনে
দাঁড়িয়েই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ইসলামাবাদকে তুলোধনা
করে দিল
ভারত! জাতিসংঘে
নিযুক্ত ভারতের
স্থায়ী প্রতিনিধি
অজিত কুমার
আজ বলেন,
‘‘হাফিজ সইদ,
সৈয়দ সালাউদ্দিনের
মতো মার্কামারা
জঙ্গিরা পাকিস্তানের
গুরুত্বপূর্ণ শহরে বিরাট জনসভা করতে
পারে! এটা
বাস্তব পরিস্থিতির
প্রতিফলন। এই সব লোক ও
তাদের নেতৃত্বাধীন
নিষিদ্ধ সংগঠনকে
প্রত্যক্ষ সমর্থন করাটাই এখন পাকিস্তানে
সবথেকে স্বাভাবিক
ঘটনা!’’
শুধু জাতিসংঘের মানবাধিকার
পরিষদে নয়।
নিরাপত্তা পরিষদেও আজ মুখ পুড়েছে
পাকিস্তানের। নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী
সদস্যের মধ্যে
ফ্রান্স ও
রাশিয়া উরির
ঘটনা নিয়ে
সরাসরি আক্রমণ
করেছে পাকিস্তানকেই।
আমেরিকা, ব্রিটেন
ভারতের পাশে
দাঁড়িয়েছে। চিন সরাসরি ইসলামাবাদকে আক্রমণ
না করলেও
তারা সব
রকম সন্ত্রাসের
নিন্দা করেছে।
ভারত দীর্ঘদিন
ধরে অভিযোগ
করছে, কাশ্মীরে
‘ছায়াযুদ্ধ’ চালাচ্ছে পাকিস্তান। জাতিসংঘে নিজের
শেষ বক্তৃতায়
সরাসরি পাকিস্তানের
নাম না
করলেও ওবামা
বলেছেন, ‘‘যে সব দেশ ছায়াযুদ্ধে
মদত দিচ্ছে,
তারা তা
বন্ধ করুক।’’
এ ছাড়াও
জার্মানি-সহ
একাধিক দেশ
ভারতের পাশে
থাকার বার্তা
দিয়েছে। আর
পাকিস্তানের অস্বস্তি বাড়িয়ে ভারতের পাশে
দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ
এবং আফগানিস্তান
বার্তা দিয়েছে,
পাক মদতপুষ্ট
সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতায় আগামী নভেম্বরে ইসলামাবাদে
সার্ক সম্মেলন
তারা বয়কট
করতে পারে।
সব মিলিয়ে
উরির ঘটনা
ইসলামাবাদের কাছে ‘ব্যুমেরাং’ হয়ে গিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে
এ দিন
শুধু ঝাঁঝালো
আক্রমণ করা
নয়, ভারত
দাবি তুলেছে,
পাকিস্তানকে বলা হোক, তারা যেন
অবিলম্বে ভারতে
জঙ্গি ঢোকানো
বন্ধ করে।
একই সঙ্গে
তাদের মাটিতে
সব জঙ্গি
শিবির ভেঙে
দেওয়া হোক
এবং সন্ত্রাসবাদের
কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করা বন্ধ
করতে বলা
হোক পাকিস্তানকে।
ভারতের অভিযোগ,
পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে
চূড়ান্ত মানবাধিকার
লঙ্ঘনের ফলে
গোটা অঞ্চলেই
অশান্তি তৈরি
হচ্ছে। পাকিস্তানের
মাটিতে তৈরি
হওয়া সন্ত্রাসের
শিকার হচ্ছে
ভারত।
জাতিসংঘের সাধারণ সভার
অধিবেশনে যোগ
দিতে গিয়ে
পাক প্রধানমন্ত্রী
নওয়াজ শরিফ
দেখা করেছিলেন
মার্কিন বিদেশসচিব
জন কেরির
সঙ্গে। সেই
বৈঠকে কাশ্মীরে
মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ তুলে উপত্যকার
সমস্যা সমাধানে
আমেরিকার সাহায্য
চান নওয়াজ।
কিন্তু কেরি
তাঁকে পাল্টা
বলেন, পাকিস্তান
আগে নিজের
মাটিকে সন্ত্রাসবাদীদের
স্বর্গরাজ্য হিসেবে কাজে লাগানো বন্ধ
করুক। ভারতের
সেনাঘাঁটিতে হামলা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ
করেন কেরি।
মার্কিন বিদেশ
দফতরের এক
মুখপাত্র পরে
জানান, পাকিস্তান
হিংসা বন্ধে
কিছু ব্যবস্থা
নিয়েছে, কিন্তু
আমেরিকা আরও
কড়া পদক্ষেপ
দেখতে চায়।
অথচ মাত্র ক’দিন আগেও
ইসলামাবাদের কাছে ছবিটা ছিল স্বস্তির।
ভারতকে বিপাকে
ফেলতে পাকিস্তান
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের মঞ্চে কাশ্মীর
সমস্যার কথা
তুলে ধরেছিল।
কাশ্মীরের মানবাধিকার কর্মী খুররম পারভেজকে
আটক ও
তার প্রতিবাদে
ভারত সরকারের
উদ্দেশে আন্তর্জাতিক
স্তরের বুদ্ধিজীবী
ও আন্দোলনকারীদের
খোলা চিঠি
তুলে ধরে
পাকিস্তান অভিযোগ করেছিল, ভারত অনেক কিছু লুকোতে চাইছে।
পাক প্রতিনিধি
তহমিনা জানজুয়া
সে দিন
বলেছিলেন, ‘‘সন্ত্রাসে ভারতের জড়িত থাকার
প্রমাণ এবং
পাকিস্তানে অস্থিরতা তৈরির প্রমাণ জাতিসংঘের
মহাসচিবের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে।’’
পাকিস্তানের এই সব
অভিযোগ নিয়ে
মোটেই চিন্তিত
ছিল না
নয়াদিল্লি। তাদের আসল ভয় ছিল,
কাশ্মীর নিয়ে
সমস্যা বাড়লে
মানবাধিকার পরিষদে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে
হতে পারে।
১৯৯৪-তে
নরসিংহ রাওয়ের
জমানায় কাশ্মীর
নিয়েই নিষেধাজ্ঞার
মুখে পড়েছিল
ভারত। শেষ
পর্যন্ত নরসিংহ
রাও ইরানের
সঙ্গে দৌত্য
প্রতিষ্ঠা করে তা আটকে দিয়েছিলেন।
এ বার
মানবাধিকার কমিশন কাশ্মীরের পরিস্থিতি খতিয়ে
দেখতে একটি
দল পাঠাতে
চেয়েছিল। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরেও
দল পাঠাতে
চেয়েছিল তারা।
পাকিস্তান তখন জানিয়েছিল, ভারত ছাড়পত্র
দিলে তারাও
দেবে। কিন্তু
ভারত জাতিসংঘের
সেই অনুরোধ
খারিজ করে
দেয়। সেই
কারণেই নিষেধাজ্ঞা
নিয়ে ভয়
ছিল কূটনীতিকদের।
উরির হামলা সেই
ছবিটাই উল্টে
দিয়েছে। ইসলামাবাদকে
চাপে ফেলে
ভারত বলেছে,
১৯৪৭ থেকেই
ভারতের জমি
দখল করতে
মরিয়া পাকিস্তান।
১৯৪৭, ১৯৬৫
এবং ১৯৯৯-তে পাকিস্তান
তার প্রমাণও
রেখেছে। এই
মুহূর্তে তারা
জম্মু-কাশ্মীরের
৭৮ হাজার
বর্গকিলোমিটার এলাকা বেআইনি ভাবে দখল
করে রেখেছে।
মানবাধিকার পরিষদে ভারতের দাবি, পাকিস্তানকে
এই বেআইনি
দখলদারি ছাড়তে
বলা হোক।
ভারতে হিংসা
ও সন্ত্রাসে
মদত দেওয়া
এবং ভারতের
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতেও মানা
করা হোক
ইসলামাবাদকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন